আগামী ঋণনীতির পর্যালোচনাতে সুদের হার কমানোর পথে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক না-ও হাঁটতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কিং সংস্থা এইচএসবিসি। তাদের ধারণা, সুদের হার কমানোর পরিবর্তে ১৭ এপ্রিলের ঋণনীতিতে ফের নগদ জমার অনুপাত (সিআরআর) কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। মূল্যবৃদ্ধির হার বর্তমানে যথেষ্ট চড়া থাকার কারণেই তাঁরা এ রকম ভাবছেন বলে সম্প্রতি কলকাতায় জানান ভারতে এইচএসবিসি-র প্রধান এবং এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডিরেক্টর নয়না লাল কিদোয়াই।
অর্থনীতি যে সত্যিই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছে, শনিবার নয়াদিল্লিতে এক সভায় সে কথা কবুল করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও। তবে তা কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা যে ভারতের আছে, তা জোরের সঙ্গে বলেন তিনি। আসন্ন ঋণনীতির পরিপ্রেক্ষিতে এ দিনই আরবিআই গভর্নর ডি সুব্বারাওয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন মনমোহন। সুব্বারাও রাজকোষ ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ জানালেও বলেন, বিশ্ব মন্দার কারণে আসা ‘আঘাত’ কাটিয়ে উঠবে ভারত।
এ দিকে অপরিশোধিত তেল আমদানির খরচ বৃদ্ধি, বাজেটে উৎপাদন শুল্ক এবং পরিষেবা করের হার বৃদ্ধির জেরে মূল্যবৃদ্ধির হার আরও চড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কিদোয়াই। তাই এখনই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে সুদের হার কমানোর লক্ষ্যে রেপো রেট (যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে স্বল্প মেয়াদে ঋণ নেয়) কমানো কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে এইচএসবিসি কর্তৃপক্ষের।
ভারতে সিআরআর (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে বাধ্যতামূলক ভাবে আমানতের যে অংশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে গচ্ছিত রাখতে হয়) বিশ্বের মধ্যে সব থেকে বেশি বলে মন্তব্য করে কিদোয়াই। সিআরআর খাতে ব্যাঙ্কগুলিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে জমা রাখতে হয় মোট আমানতের ৪.৭৫%। ওই টাকার উপর ব্যাঙ্কগুলিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদও দেয় না। এ ছাড়া বাধ্যতামূলক ভাবে ব্যাঙ্কগুলিকে স্ট্যাটিউটরি লিকিুইডিটি রেশিও (এসএলআর) খাতে আমানতের ২৪% সরকারি ঋণপত্রে লগ্নি করতে হয়। এর উপর রয়েছে অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে ৪০% (যদিও বিদেশি ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে তা ৩২%) ঋণ। অর্থাৎ সিআরআর, এসএলআর এবং অগ্রাধিকার ক্ষেত্র খাতেই সংগৃহীত আমানতের ৬৮.৭৫% ব্যাঙ্কগুলিকে ব্যয় করতে হয়।
এর ফলে এমনকী হালে ঋণের চাহিদা কম হওয়া সত্ত্বেও শিল্প-বাণিজ্যিক সংস্থা, রফতানিকারী এবং খুচরো ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কগুলির হাতে যে অর্থ পড়ে থাকে, তা যথেষ্ট নয় বলে দাবি করেন কিদোয়াই। এর উপর চলতি আর্থিক বছরে বাজার থেকে বড় অঙ্কের টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পানও রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। যা প্রধানত তোলা হবে বন্ড ছেড়েই।
এ ছাড়া শিল্পেও ঋণের চাহিদা ক্রমশ বাড়বে বলে মনে করছেন এইচএসবিসির ওই কর্তা। বিশেষ করে কয়লা পাওয়া নিয়ে সমস্যার জেরে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে লগ্নি অনেকটাই থমকে গিয়েছিল। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে কয়লা সরবরাহের জন্য কোল ইন্ডিয়াকে যে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে, তা কার্যকর হলে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে লগ্নি দ্রুত বাড়বে বলে মনে করছেন কিদোয়াই। ভারতে গাড়ি, ভোগ্যপণ্য এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও ওই সংক্রান্ত পরিষেবার চাহিদাও অন্য অনেক দেশের তুলনায় ভাল বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই সব কারণেই ব্যাঙ্কের হাতে নগদের জোগান বাড়াতে ফের সিআরআর কমানোর পদক্ষেপ রিজার্ভ করতে পারে বলে মনে করছেন এইচএসবিসি কর্তৃপক্ষ।
তবে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার নিয়ে আদৌ চিন্তিত নয় ওই আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কিং সংস্থা। কিদোয়াই বলেন, “আমাদের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে। এমনকী বর্তমানে ওই হার যেখানে রয়েছে, তাও বিশ্বের অধিকাংশ দেশের থেকেই বেশি।” তাই ভারতে ব্যবসা বাড়ানোর উপর এইচএসবিসি বিশেষ গুরুত্ব দেয় বলে জানান কিদোয়াই। |