|
|
|
|
নিশানা তৃণমূল বিধায়কেরা |
মাওবাদী তৎপরতা বাড়ছে, বার্তা দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে মাওবাদী তৎপরতা বাড়ছে বলে রাজ্য সরকারকে সতর্ক করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে চিঠি লিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, জঙ্গলমহলে নতুন করে প্রভাব বিস্তার করতে বিরোধী দল সিপিএমের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলতে চাইছে মাওবাদীরা। তৃণমূল বিধায়কদের উপরে প্রাণঘাতী হামলার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখে মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার শাসক দলের বিধায়কদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য রাজ্যকে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র।
কিষেণজির মৃত্যুর পর থেকে মাওবাদীরা পশ্চিমবঙ্গে বড় ধরনের কোনও নাশকতা ঘটাতে পারেনি। কিন্তু জঙ্গলমহলে ফের প্রভাব ছড়ানোর চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, সব রাজ্যেই মাওবাদীরা সরকার-বিরোধিতার জায়গাটা দখল করতে চায়। সেই কারণে বিরোধী দল তো বটেই, এমনকী এনজিও, মানবাধিকার সংগঠনগুলির সঙ্গেও তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করে তারা। নন্দীগ্রামে তৃণমূলের আন্দোলনেও মাওবাদীরা ঢোকার চেষ্টা করেছিল।
ঠিক একই ভাবে এখন কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সরকার-বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করার পিছনে মাওবাদীদের ইন্ধন রয়েছে। নোনাডাঙায় বস্তি-উচ্ছেদের বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ হচ্ছে, তাতে মাওবাদী ও নকশালপন্থীদের যোগাযোগ রয়েছে বলে রাজ্য থেকে গোয়েন্দা রিপোর্ট এসেছে। আদালতেও রাজ্য পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মাওবাদী ও নকশালপন্থীরাই নোনাডাঙায় আন্দোলন সংগঠিত করছে। তারা ওই এলাকায় অস্ত্রও মজুত করছে।
পাশাপাশি, জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় সিপিএম নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও মাওবাদীরা সমন্বয় রেখে চলতে চাইছে বলে খবর। যদিও এমন দাবি জোর গলায় অস্বীকার করেছে সিপিএম। দলের পলিটব্যুরোর এক নেতার কথায়, “গত চার বছরে মাওবাদীদের হাতে আমাদের ২১০ জন কর্মী খুন হয়েছেন। রাজ্যে পরিবর্তনের পরে মাওবাদীরা হয় প্রশাসন, না-হয় তৃণমূলের লোকেদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, এমন বহু নজির আছে। এই অবস্থায় সিপিএমের লোকেরা তৃণমূলকে কোণঠাসা করার জন্য মাওবাদীদের মদত দিচ্ছে, এই তত্ত্ব হাস্যকর।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নীলোৎপল বসুও বলেন, “তৃণমূল সম্পর্কে মাওবাদীদের বিশ্লেষণ যা-ই হোক না কেন, তারা তৃণমূলেরই ঘাতকবাহিনী হিসেবে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। আমরা কোনও দিনই মাওবাদীদের সঙ্গে ছিলাম না। এখনও নেই। বরং তৃণমূলই অতীতে
মাওবাদীদের আড়াল করেছে। এখন তাদের সরকারও আড়াল করছে।”
যে নোনাডাঙার ঘটনায় কলকাতার উপকণ্ঠে মাওবাদীদের সক্রিয় হয়ে ওঠার বিষয়টি সামনে এসেছে, কড়া হাতে সেই আন্দোলনে রাশ টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ধৃতদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আজ কলকাতার পাশাপাশি দিল্লিতেও রাজ্যের অতিথিশালা বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পিইউডিআর, পিডিএফআই, সংহতি, আইসা-র মতো বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভে অংশ নেয়। ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হায় হায়’, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্দাবাদ’ বলে স্লোগান উঠলেও বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণই ছিল। পরে রাজ্য সরকারের রেসিডেন্ট কমিশনারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সংগঠনগুলির বক্তব্য, কলকাতাকে ‘লন্ডন’ বানানোর নামে গরিব মানুষদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে গেলে সাধারণ মানুষের উপর পুলিশ ও তৃণমূলকর্মীরা চড়াও হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, মাওবাদীদের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই কড়া অবস্থান নেওয়াতেই তাদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছেন মমতা। বামফ্রন্ট আমলে বহু চেষ্টাতেও যাঁর নাগাল পাওয়া যায়নি, মমতা জমানার গোড়াতেই সেই মাওবাদী নেতা কিষেণজিকে নিকেশ করা গিয়েছে। তার পরে জাগরী বাস্কে, সুচিত্রা মাহাতোর মতো মাওবাদীদের আত্মসমর্পণ করানোর ফলেও মমতা মাওবাদীদের রোষের মুখে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র মনে করছে, জঙ্গলমহলে পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ায় যে সব তৃণমূল বিধায়ক রয়েছেন, তাঁদের উপরে মাওবাদীরা হামলা চালাতে পারে। কারণ, শাসক দলের নেতানেত্রী, বিশেষ করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিশানা করা মাওবাদীদের পরিচিত ছক।
জঙ্গলমহলের অন্তর্গত ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল জিতেছে। যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম, শালবনি, গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়ার বলরামপুর। কেন্দ্র চাইছে, ঝাড়গ্রামের সুকুমার হাঁসদা, নয়াগ্রামের দুলাল মুর্মু কিংবা গোপীবল্লভপুরের চূড়ামণি মাহানোর মতো তৃণমূল বিধায়কদের নিরাপত্তা বাড়ানো হোক।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, বরাবরের মতোই ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা হয়েই মাওবাদীরা জঙ্গলমহলে ঢুকছে। শুধু জঙ্গলমহলে নয়, বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর এলাকাতেও নিষিদ্ধ সংগঠনগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাওবাদীরা অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে বলে গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছেন। |
|
|
|
|
|