বিদ্যুৎ, স্কুল ও জলের দাবিতে সরকারি কমসূচি বয়কট করেছিলেন গ্রামবাসীরা। গ্রামে গিয়ে প্রশাসনের আধিকারিকেরা আশ্বাস দিয়েছিলেন সমস্যা সমাধানের। কিন্তু তারপরেও অবস্থার উন্নতি হয়নি রঘুনাথপুর ১ ব্লকের খাজুরা পঞ্চায়েতের লায়েকডাঙ্গা গ্রামের। এই প্রেক্ষিতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে। তাঁদের অভিযোগ, বার বার ব্লক প্রশাসনকে সমস্যার কথা জানিয়েও সুরাহা হয়নি।
খাজুরা পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ গ্রামেই বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ হলেও বঞ্চিত থেকে গিয়েছে লায়েকডাঙা। সেখানে এখনও বিদ্যুতের আলো পৌঁছয়নি। দু’বছর আগে এই গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য খুঁটি পোঁতা হয়েছিল। কিন্তু আজও টাঙানো হয়নি বিদ্যুৎবাহী তার। গ্রাম রয়ে গিয়েছে সেই অন্ধকারেই। গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বেশ্বর লায়েক, প্রশান্ত লায়েকরা জানান, ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসের গোড়ায় গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা হয়েছিল। কিন্তু তারপর বিদ্যুতের তার আর খাটানো হয়নি। তাঁদের ক্ষোভ “কয়েক কিলোমিটার দূরের গ্রামগুলি বিদ্যুৎ পৌঁছেছে অথচ আমাদের গ্রামেই বিদ্যুৎ এলো না। অনেকেই আমরা বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ নিতে আগ্রহী। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেও কাজ হয়নি।” |
এই গ্রামে নেই প্রাইমারি স্কুল। এমনকি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও নেই। পানীয় জল নিয়েও বাসিন্দাদের ক্ষোভ রয়েছে। নানা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাই ক্ষোভ বাড়ছে লাড়েকডাঙা গ্রামের বাসিন্দাদের। এই গ্রামে প্রায় তিনশো মানুষের বাস। গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা পাশের সোলারডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোলারডাঙা যাওয়ার জন্য শিশুদের আদ্রা-আসানসোল রেল লাইন পেরিয়ে যেতে হয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে তাদের বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত আতঙ্কে থাকতে হয়। এ গ্রামে দু’টি টিউবওয়েল রয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, টিউবওয়েলগুলির জল পানের যোগ্য নয়। বাড়ির মহিলারা তাই রেল লাইন পেরিয়ে বেড়ো রেল স্টেশন থেকে জল নিয়ে আসেন। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, “বিদ্যুৎ, জল, শিক্ষার মতো গুরুত্বপুর্ণ তিনটি পরিষেবা থেকে আমাদের বঞ্চনা করা হচ্ছে। প্রতিবাদে বছর খানেক আগে সরকারি কর্মসূচি বয়কট করা হয়। কিন্তু প্রশাসন থেকে আশ্বাসটুকু ছাড়া কিছুই মেলেনি।”
খাজুরা পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখল। পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তৃণমূলের রঘুনাথপুর ১ ব্লকের কার্যকরী সভাপতি তথা স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ মাজি বলেন, “ওই গ্রামের বাসিন্দারা সত্যিই নানা দিক থেকে অবহেলিত। তবে আমরা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ওই গ্রামে উন্নয়নের কাজ করার চেষ্টা করছি।” রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বিডিও আবরার আলম বলেন, “রাজীব গাঁধী গ্রামীন বিদ্যুদয়ন যোজনায় ওই গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ঠিকা সংস্থাটি সেই কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায়। তবে ওই গ্রামে বিদ্যুদয়নের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অন্য দাবিগুলিও বিবেচনা করা হবে।” |