এমনিতে লাজুক। চুপচাপ স্বভাবের। কিন্তু মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা ২ ব্লকের রামনগর-বাছড়া গ্রামের নাবালিকা রাজনিহার খাতুনকে বিয়েতে রাজি করাতে পারেনি তার বাবা-মা।
কিশোরী রাজনিহার যখন বোঝে, সে একা পরিবারের এই চাপ সামলাতে পারবে না, তখন কয়েকজন প্রতিবেশীর সাহায্য নেয়। তাঁরাই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সব কথা জানায়। সেই সংস্থার কাছ থেকে খবর পেয়েই স্থানীয় বিডিও সুদীপ ঘোষ পুলিশ-প্রশাসনের আরও কয়েক জন কর্তাকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার দুপুরে সোজা রাজনিহারদের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। সুদীপবাবু বলেন, “আমরা গিয়ে দেখি বিয়ের তোড়জোড় চলছে। রাজনিহারের বাবাকে
|
রাজনিহার খাতুন |
|
বিডিও সুদীপ ঘোষ |
ডেকে পাঠাই। তিনি স্বীকার করেন, তাঁর মেয়ে নাবালিকা হলেও বিয়ের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।” সেই সময়ে ওই বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়েই সুদীপবাবু ও তাঁর সঙ্গীরা রাজনিহারের বাবা সামশুল শেখকে বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করতে থাকেন। গ্রামের অন্য বাড়ি থেকেও চলে আসেন অনেকে। সামশুল শেখের উঠোনেই শুরু হয়ে যায় তর্কবিতর্ক। তবে শেষ পর্যন্ত সুদীপবাবুর কথাতে সায় না দিয়ে পারেননি সামশুল।
সামশুল পেশায় ভ্যানরিকশা চালক। তাঁর বক্তব্য, “আমার চার মেয়ে। তাই পাশের তকিপুরে একটি ভাল পাত্র পেয়ে হাতছাড়া করতে চাইনি। তার উপরে পাত্রপক্ষ কোনও পণও চায়নি।” সুদীপবাবু তখন সেখানেই দাঁড়িয়ে রাজনিহারকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, এই বিয়েতে তার মত রয়েছে কি না। মাথা নিচু থাকলেও দৃঢ় কণ্ঠেই রাজনিহার তখন সকলের সামনেই পরিষ্কার বলে দেয়, সে চায় বিয়ে বন্ধ হোক। তাকে পড়াশোনা করতে দেওয়া হোক। এরপরেই তার পরিবার বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হয়।
রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সত্যনারায়ণ রায় বলেন, “গ্রামের লোক প্রথমে বুঝতে চাননি। কিন্তু তারপরে ওই বিডিও বেশ আন্তরিক ভাবে তাঁদের বোঝান, নাবালিকার বিয়ে দিলে কী কী সমস্যা হতে পারে। শেষ পর্যন্ত রাজনিহার নামে ওই বালিকার বিয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” রামনগর হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী রাজনিহার সুদীপবাবুদের জানিয়েছে, সে চায় আরও পড়াশোনা করতে। সুদীপবাবু বলেন, “আমরা খোঁজ খবর করে জানতে পেরেছি, মেয়েটি নিজে যখন বিয়ে রুখতে পারবে না বলে বুঝেছিল, তখন সে কয়েকজন প্রতিবেশীকে সাহায্য করতে বলে। তারপরেই আমাদের কানেও খবর আসে।”
ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে এই গ্রামে বিদ্যুৎ এলেও রাস্তা এখনও পাকা হয়নি। রাজ্য সড়ক প্রায় চার কিলোমিটার দূরে। এক কিলোমিটার দূরের রামনগর স্কুলেও যেতে হয় মোরাম রাস্তা ধরে।
গ্রামে শিক্ষিতের হার খুব বেশি নয়। ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক প্রকাশ মণ্ডল বলেন, “এই এলাকায় মাঝেমধ্যেই নাবালিকার বিয়ের কথা শুনি। অনেক ছাত্রী আচমকা বিয়ের পরে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সেখানে রাজনিহার নিজে বিয়েতে অমত করায় ও প্রশাসনও সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করায় অন্য ছাত্রীরাও এ বার নিজেদের মত প্রকাশের সাহস পাবে।” |