এ বার অতি তীব্র ভূমিকম্পের আশঙ্কা উত্তর-পূর্ব ভারত জুড়ে
ত্তর-পূর্ব ভারত এই মুহূর্তে এতটাই ভূকম্পপ্রবণ হয়ে উঠেছে যে, সেখানে অদূর ভবিষ্যতে ৯.২ মাত্রার অতি তীব্র ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা ভূবিজ্ঞানীদের। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর সুমাত্রায় সমুদ্রের তলায় যে ভূমিকম্প সুনামির জন্ম দিয়েছিল, তার রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৯.৩। উত্তর-পূর্বে (যেখানকার পাহাড়ি এলাকা অনেকাংশে ধসপ্রবণও) এই মাপের ভূকম্পন কী বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি করবে, তা ভাবতে গিয়েই শিউরে উঠছেন তাঁরা।
উত্তর-পূর্ব ভারত বরাবরই ভূকম্পপ্রবণ। তা হলে এখানে নতুন করে কেন বিপদের সম্ভাবনার কথা উঠছে? সম্প্রতি আইআইটি খড়্গপুরের ভূবিজ্ঞান বিভাগ এক সমীক্ষায় হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চলের ভূকম্পপ্রবণ এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করার কাজ করছে। তাঁদের বক্তব্য, কোথায় কত মাত্রায় ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা আছে, সেটা এর ফলে জানা যাচ্ছে। তাতে আশঙ্কাটা আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অঞ্চলে চারটি ক্ষেত্র থেকে ভূমিকম্প তৈরি হতে পারে। সেগুলি হল, শিলং অঞ্চল, আরাকান খাত (ত্রিপুরা-চট্টগ্রাম অঞ্চল), মিসমি ব্লক (মায়ানমার সংলগ্ন মিসমি পাহাড় এলাকা) এবং পূর্ব হিমালয় অঞ্চল (যা সিকিম থেকে চিন পর্যন্ত বিস্তৃত)। আইআইটি খড়্গপুরের ভূবিজ্ঞান বিভাগ যে সমীক্ষা চালাচ্ছে, তার মুখ্য বিজ্ঞানী শঙ্করকুমার নাথ জানাচ্ছেন, “উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চারটি ভূকম্পপ্রবণ ক্ষেত্রের মধ্যে মিসমি ব্লক থেকে ৯.২ মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি হতে পারে।”
অন্য তিনটি ভূকম্পপ্রবণ ক্ষেত্র (আরাকান খাত, পূর্ব হিমালয় অঞ্চল এবং শিলং প্লেট) ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের জন্ম দিতে পারে বলে জানিয়েছেন শঙ্করবাবু। তিনি বলেন, “পূর্ব হিমালয় খাতে ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে গোটা উত্তরবঙ্গের উপরে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে।” কতটা? আইআইটি-র ভূবিজ্ঞানীরাই জানাচ্ছেন, গত সেপ্টেম্বরে সিকিমে ৬.৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে দার্জিলিং পার্বত্য এলাকা, এমনকী শিলিগুড়িতেও বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে। শঙ্করবাবুর মন্তব্য, “সিকিমের ভূমিকম্পের পরে আমরা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি, ৬.৯ তীব্রতার ভূমিকম্প কতটা ক্ষতি করতে পারে। সুতরাং ৮.৭ তীব্রতার ভূমিকম্প কতটা ক্ষতি করতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। আমরা ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে সতর্ক করেছি।”
সমীক্ষায় ভূবিজ্ঞানীরা দেখেছেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের ভূকম্পপ্রবণ ক্ষেত্রগুলির মধ্যে আরাকান খাত সব থেকে অস্থির। ওই অঞ্চলে ইন্ডিয়ান পাত বা প্লেট ঢুকে যাচ্ছে বর্মা পাতের (প্লেট) নীচে। সে কারণেই এই এলাকায় ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও ধরনের ভারসাম্যের বড় পরিবর্তন ওই এলাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের জন্ম দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ভূবিজ্ঞানীরা।
কিন্তু কলকাতা এবং তার সংলগ্ন এলাকায় ভূমিকম্পের আশঙ্কা কতটা?
খড়্গপুর আইআইটি-র ভূবিজ্ঞান বিভাগের সমীক্ষা অনুযায়ী, কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গ কিন্তু মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের শিকার হতেই পারে। অদূর ভবিষ্যতে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পও হতে পারে। শঙ্করবাবু বলেন, “বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দুই বাংলার এলাকায় মাটির সাড়ে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার নীচে একটি খাত (ইয়োসিন হিঞ্জ) রয়েছে। সেই খাত থেকে মাঝেমধ্যেই কম্পন তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ওই খাতের বিভিন্ন অংশ থেকে ৫.৪ থেকে ৫.৬ মাত্রার কয়েকটি ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকে সর্বোচ্চ ৬.৮ তীব্রতার ভূমিকম্প তৈরি হতে পারে।”
তবে ওই মাত্রার ভূমিকম্প কবে হবে, তার উৎস ঠিক কোথায় হবে, সে ব্যাপারে কোনও পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছেন খড়্গপুর আইআইটি-র ভূবিজ্ঞানীরা। শঙ্করবাবুর ব্যাখ্যা, যে ভাবে যত্রতত্র মাটির নীচ থেকে জল তুলে নেওয়া হচ্ছে এবং জলাভূমি ভরাট করে ফেলা হচ্ছে, তাতে কলকাতার ভূস্তরের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তাই মাঝারি মানের কোনও ভূমিকম্পই (উৎসকেন্দ্র কলকাতার কাছাকাছি হলে) মহানগরীর বিপদ ঘটাতে পারে।
অতি তীব্র ভূমিকম্পের জেরে উৎসস্থলের কাছাকাছি এলাকা কতটা বিপদের মধ্যে পড়তে পারে, তা ব্যাখ্যা করে শঙ্করবাবু জানান, বুধবার ভূমিকম্পের পর থেকে ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ বার আফটার শকে কেঁপেছে সুমাত্রা। ভূমিকম্পের দু’ঘণ্টার মধ্যেই তিনটি আফটার শক হয়। তার মধ্যে একটির মাত্রা ছিল ৮.২। তার পর থেকে ভারতীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত যে ৪২টি আফটার শক হয়েছে, সেগুলির তীব্রতা ৫ থেকে ৬.৭-এর মধ্যে।
২০০৪ সালের সুনামির জেরে সুমাত্রা থেকে আন্দামান পর্যন্ত প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সমুদ্রের তলদেশে ফাটল ধরেছিল। আন্দামানের একটি দিক উপরে উঠে গিয়েছিল। অন্য দিক বসে গিয়েছিল সমুদ্রের ভিতরে। ল্যান্ড মাস বা মোট জমির পরিমাণের পরিবর্তন ঘটেছিল। বিভিন্ন প্লেটের অবস্থানগত কিছুটা পরিবর্তনও হয়েছে। বুধবারের অতি তীব্র ভূমিকম্পে এ ধরনের কোনও স্থায়ী পরিবর্তন ঘটেছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে যে হেতু ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের মূল ধাক্কা সমুদ্রের বাইরে সে ভাবে পৌঁছয়নি, তাই ওই ভূমিকম্পের জেরে স্থায়ী কোনও ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের আশঙ্কা কম বলেই মনে করছেন ভূবিজ্ঞানীরা।
বুধবারের ভূমিকম্পের অবস্থান বিশ্লেষণ করে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানাচ্ছে, ২০০৪-এর ৯.৩ মাত্রার ভূমিকম্পের পরে সুমাত্রার ওই এলাকায় ভারত মহাসাগরের নীচে আরও তিনটি ভূমিকম্প হয়েছিল। সেগুলি হল, ২০০৬-এর ১৯ এপ্রিল ও ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর ৬.২ মাত্রার এবং ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ৭.২ মাত্রার। কিন্তু ওই তিনটি ভূমিকম্পের কোনওটাতেই তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কারণ, তিনটিতেই ইন্ডিয়ান প্লেট এবং সুন্দা প্লেটের মধ্যে পাশাপাশি ঘর্ষণ হয়েছিল। বুধবারের ভূমিকম্পটির মতোই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.