বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর শনিবার উত্তর ২৪ পরগনায় প্রথম ‘মহামিছিল’ করল সিপিএম-সহ বামফ্রন্ট। মিছিলে ভিড় দেখে নেতারা ‘খুশি’। তাঁদের দাবি, মিছিলে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ সামিল হয়েছিলেন। যদিও পুলিশ জানায়, মিছিলে জনসমাগম হয়েছিল ১০ হাজারের কিছু বেশি। ঘটনাচক্রে, কাল, সোমবার এই মিছিলের পাল্টা-মিছিলের ডাক দিয়েছে তৃণমূল। সেখানে উপস্থিতি থাকবেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায় এবং ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংহ। জেলা রাজনীতিতে মুকুল-অর্জুন এমনিতে বিরোধী শিবিরের। কিন্তু সিপিএমের মিছিলের মোকাবিলায় দুই নেতা জোটবদ্ধ হয়েছেন। অর্জুনের দাবি, সিপিএম বাইরে থেকে লোক জড় করে মিছিল করেছে। তাঁর কথায়, “বাইরে থেকে লোক জড়ো করে এমন মিছিল করাটা কোনও বিষয় নয়। মানুষ ওদের সঙ্গে নেই, এটাই আসল কথা!”
অর্জুনকে গ্রেফতার এবং ‘সন্ত্রাস’ বন্ধের দাবিতেই ‘মহামিছিল’ করে বামফ্রন্ট। গত ৯ মাসে ভাটপাড়ায় ১৪ জন খুন হয়েছেন। সরকার পরিবর্তনের পর বামফ্রন্টের এত বড় মিছিল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের মানুষ দেখেননি। মিছিলে ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব, জেলা-রাজনীতিতে গৌতমবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ অমিতাভ নন্দী, অপর প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎ তোপদার প্রমুখ। |
শনিবার সিপিএমের মহামিছিল। ছবি: বিতান ভট্টাচার্য |
বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ কাঁকিনাড়া স্টেশন থেকে মিছিল শুরু হয়। আগে থেকেই সেখানে ভিড় করেছিলেন বহু মানুষ। বিমানবাবুর জন্য স্থানীয় দলীয় কার্যালয়ে অপেক্ষা করছিলেন গৌতমবাবু-সহ অন্য নেতারা। বিমানবাবু পৌঁছতেই কর্মী-সমর্থকেরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিমানবাবু বলেন, “নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস চালিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস করছে তৃণমূল। মিডিয়ার সিন্ডিকেট তৈরি করে সাক্ষাৎকার দিয়ে খেয়ালখুশি মতো কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। এখানকার বিধায়ক অর্জুন সিংহের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু সরকার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ জগদ্দলের গোলঘর মোড়ে মিছিল শেষ হওয়ার পর প্রায় একই সুরে গৌতমবাবুও বলেন, “অর্জুন সিংহের নামে যে অসংখ্য মামলা রয়েছে, তা সকলেই জানেন। তবু সরকার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেই আমরা প্রতিবাদ করছি। এই প্রতিবাদ আরও বড় হবে। তৃণমূলের আর এক বিধায়ক মঞ্জু বসুই তো বলেছিলেন, তাঁর স্বামীকে খুনের পিছনেও অর্জুন সিংহের হাত রয়েছে। সরকার কাকে আড়াল করছে? মানুষ মমতার কাণ্ডকারখানা দেখে হাসছেন।”
এ দিন মিছিল যত এগিয়েছে তত আপ্লুত হয়ে পড়েছেন বিমানবাবু-গৌতমবাবুরা। তাঁরা ছিলেন হুডখোলা জিপে। মিছিল যত এগিয়েছে, নেতাদের ছোঁয়ার চেষ্টা করেছেন মানুষ। যা দেখে বিমানবাবু বলে ফেলেন, “সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসের প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।” অশান্তির আশঙ্কায় চার কিলোমিটার রাস্তায় পুলিশ মোতায়েন ছিল দুপুর থেকেই। তবে কোনও গোলমাল হয়নি। বিভিন্ন মোড়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের জটলা চোখে পড়েছে। বামফ্রন্টের মিছিল সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার পিছনে তাঁর ভূমিকা ‘যথেষ্ট’ বলে দাবি করেছেন অজুর্ন। তিনি বলেন, “দলের সকলকে সংযত থাকতে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলাম। নইলে এই প্রহসনকে ভাটপাড়ার মানুষ বরদাস্ত করতেন না। বড় কোনও অঘটন ঘটতে পারত।” তাঁর বিরুদ্ধে তোলা বিমানবাবুদের অভিযোগ অস্বীকার করে অর্জুনবাবু বলেন, “বামফ্রন্ট আমার নামে কুৎসা ছড়িয়ে মিছিল করল। আমাকে খুনি সাজাল। মানুষ এটা মানতে পারছেন না।” তাঁর দাবি, “ভাটপাড়ায় গত ৯ মাসে যে খুনের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলি তো রাজনৈতিক খুন নয়। সমাজবিরোধীরা খুন হয়েছে। বিমানবাবুদের এত দরদ কেন? ওই সমাজবিরোধীরা কী ওদের সমর্থক ছিল?” |