প্রতীক্ষার অবসান হল।
তেমন জোরালো না হলেও মরসুমের প্রথম কালবৈশাখী পেল কলকাতা। আবহবিদেরা জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ডে একটি নিম্নচাপ রেখা তৈরি হওয়ায় শুক্রবার থেকেই জলীয় বাষ্প সেদিকে চলে যাচ্ছিল। শনিবার জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় ঝাড়খণ্ডের আকাশে তৈরি হয় উল্লম্ব মেঘ। কিন্তু সেই মেঘে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এতটাই ছিল যে ঝাড়খণ্ডেই তা ভেঙে পড়ে। তাই রাঁচি এবং তার সংলগ্ন এলাকায় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হলেও মরসুমের প্রথম কালবৈশাখীর দাপট সে ভাবে পেল না কলকাতা। তবে, এই সামান্য দাপটেই এ দিন রাত ৮টা নাগাদ শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় তার ছিঁড়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত দশটা নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
আবহবিদেরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী, কলকাতা এবং তার সংলগ্ন এলাকায় মার্চ মাসে দুই থেকে তিনটি কালবৈশাখী হওয়ার কথা। গত বছর ৩০ মার্চ শহরে দুর্বল একটা কালবৈশাখী হয়েছিল। এ বার সেটা হল মার্চের শেষ দিনে। কালবৈশাখীর উপরে আম-সহ বিভিন্ন গ্রীষ্মকালীন ফসলের বৃদ্ধি এবং ফলন অনেকটাই নির্ভর করে। |
তাই কালবৈশাখী না হওয়ার ফলে মাটিতে জলের টান ধরছিল। ঝরে যাচ্ছিল আমের মুকুল। শনিবারের এই কালবৈশাখীর বৃষ্টিতে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে সেই জলাভাব কিছুটা মিটবে বলে আবহবিদেরা মনে করছেন। এ দিন ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে বর্ধমান শিল্পাঞ্চল, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায়। উল্লম্ব মেঘ ভেঙে যাওয়ার পরে মেঘের বাকি অংশের প্রভাবে কলকাতা এবং তার সংলগ্ন এলাকায় রাতে ঝড় ওঠে। কিছুটা বৃষ্টিও হয়। তাতে গত কয়েক দিনে তৈরি হওয়া গুমোট ভাব কেটে গিয়ে কিছুটা স্বস্তি মেলে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এ দিন বাঁকুড়ায় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। কলকাতায় তা ছিল ৫৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।
কালবৈশাখীর দাপটে কিছুটা ভোগান্তিও হয়েছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী জানান, ঝড়ের দাপটে বালিগঞ্জ এবং সোনারপুরের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় রেলের টাওয়ার ভ্যান। বহু লোক রাত আটটা থেকে শিয়ালদহ স্টেশনে আটকে পড়েন। রেল সূত্রের খবর, গভীর রাত পর্যন্ত মেরামতির কাজ চলেছে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, কালবৈশাখীর ফলে ঝাড়খণ্ডে উড়াল ব্যাহত হয়েছে। বিকেলের আগে প্রবল ঝড়ের ফলে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দিল্লি থেকে গিয়ে রাঁচি নামতে না পেরে মুখ ঘুরিয়ে কলকাতায় চলে আসে। বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ কলকাতায় নেমে বিমানটি ফের পৌনে পাঁচটায় রাঁচি উড়ে যায়। কিন্তু, সন্ধ্যায় জেট-এর ছোট এটিআর বিমান যাত্রী নিয়ে কলকাতা থেকে রাঁচির উদ্দেশে রওনা হওয়ার পরে ফের তা কালবৈশাখীর মুখে পড়ায় সন্ধ্যা সওয়া সাতটা নাগাদ সেটি কলকাতায় ফিরে আসে। |