মসজিদের ইমামদের নিয়ে সম্মেলন করছে রাজ্য সরকার। আগামী মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম এই ইমাম-সম্মেলনের আয়োজক।
বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের ২৭% সংখ্যালঘু ভোটের অধিকাংশই তৃণমূলের পক্ষে গিয়েছিল। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সেই ধারা অক্ষুন্ন রাখতে এখন থেকেই চেষ্টা শুরু করেছেন মমতা। ইমামদের সম্মেলনও সেই লক্ষ্যেই। রাজ্যের বিভিন্ন মসজিদে প্রায় ৪০ হাজার ইমাম রয়েছেন। তাঁদের একটি বড় অংশকে এই সম্মেলনে সামিল করার চেষ্টা হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে জমায়েতের পরে ইমামরা মিছিল করে যাবেন নেতাজি ইন্ডোরে।
শনিবার টিপু সুলতান মসজিদে রাজ্যের ইমামদের সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ আইমা মসজিদ বোর্ড’-এর সদস্যরা আসন্ন সম্মেলন নিয়ে আলোচনায় বসেন। ইমামদের জন্য এ ধরনের ‘সরকারি’ সমাবেশ আগে হয়নি দাবি করে টিপু সুলতান মসজিদের শাহি ইমাম মৌলানা নুরুর রহমান বরকতি বলেন, “দেশের কোনও মুখ্যমন্ত্রী এই প্রথম ইমামদের সমস্যা বুঝেছেন। উনি নিশ্চয়ই কিছু ভালো খবর জানাবেন। ইমামদের উন্নয়নের জন্য সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, আমরা শুনব। তবে আমাদের কোনও দাবি থাকবে না।”
বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনকালে ইমামদের নিয়ে কোনও সম্মেলন করার কথা সিপিএম কখনও ভাবেনি। তার প্রধান কারণ কমিউনিস্টরা ব্যক্তিগত ভাবে কোনও ধর্মে বিশ্বাসী নয়। কিন্তু ইমামদের নিয়ে সম্মেলন করে মমতা যে মুসলিমদের মন জয় করতে চাইছেন, সিপিএম নেতৃত্বের কাছে তা স্পষ্ট। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “ইমামদের সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী কী বলতে চান, সেটাই দেখার। তবে অতীতে দেখা গিয়েছে সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে উনি নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেননি। যেমন রাজ্যে ১০ হাজার মাদ্রাসা তৈরির কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি।” সিপিএম নেতৃত্বের ধারণা, মমতা ইমামদের আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করতে পারেন।
এ দিনের বৈঠকে বরকতি ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান আবু আয়েশ মণ্ডল, আইমা মসজিদ বোর্ডের আহম্মদ আলি ওয়ারসি, মুখতার আলি, আলম আনসারি, শাহনওয়াজ রাজা প্রমুখ। আইমা মসজিদ বোর্ডের সহ-সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা ইদ্রিশ আলি বলেন, “রাজ্যের প্রায় ৪০ হাজার মসজিদের ইমামরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। বিধানসভা ভোটের আগে কলকাতার হজ-হাউসে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়। তিনি আশ্বাস দেন, তৃণমূল ক্ষমতায় এলে ইমামদের উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া হবে। তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তেহারেও ইমামদের জন্য প্যাকেজের উল্লেখ ছিল। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এবার উদ্যোগী হয়েছেন।”
ইদ্রিশ জানান, মসজিদের ইমামরা মাসে সর্বোচ্চ দু-আড়াই হাজার টাকা পারিশ্রমিক পান। এলাকার বাসিন্দারাই ওই অর্থের সংস্থান করেন। ওয়াকফ বোর্ডের আওতায় থাকা মসজিদগুলিরও একই পরিস্থিতি। ফলে বহু ইমাম আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলামি আইন অনুযায়ী ইমামরা কি সরকারের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ ভাবে বেতন নিতে পারেন? জবাবে টিপু সুলতান মসজিদের শাহি ইমাম বলেন, “ইসলামি আইন অনুযায়ী সরকারের কাছ থেকে ইমামরা প্রত্যক্ষভাবে বেতন নিতে পারেন না। তবে, ‘ওজিফা’ অর্থাৎ ভাতা নিতে সমস্যা নেই। ইমামদের বাসস্থান, চিকিৎসার ব্যবস্থা অথবা পরিবারের কারও শিক্ষার জন্য বৃত্তি অথবা চাকরির ক্ষেত্রেও সরকারি সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।” |