বিরাট কোহলি মানে একই মানুষের মধ্যে দুই উল্টো মেরুর সহাবস্থান। ২৩ বছরের বিরাট আগ্রাসী, উদ্ধত, উজ্জ্বল। একই সঙ্গে বয়সের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত তিনি। প্রতিভার সঙ্গে প্রতিজ্ঞার অসাধারণ ভারসাম্য তাঁর মধ্যে। বিরাটের মধ্যে এখনই ভবিষ্যৎ ভারত অধিনায়ককে দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। তাঁরাই আবার দুশ্চিন্তায়, ও রকম গরম মেজাজ নিয়ে পারবে এত বড় দায়িত্ব সামলাতে? প্রচারের কড়া আলোয় রাস্তা হারিয়ে ফেলবে না তো এত প্রতিভাবান তরুণ?
বিরাট কোহলি মানে ভারতীয় যুব-ব্রিগেডের প্রতীক। জীবন উপভোগ করতে জানলেও বিরাট খুব ভাল করেই জানেন, তাঁর কাছে ক্রিকেট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আইপিএল ফাইভ শুরুর আগে টুর্নামেন্টের সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরাট কোহলি।
প্রশ্ন: আপনি এখন দুর্দান্ত ফর্মে। নিশ্চয়ই মাঠে ফেরার জন্য মুখিয়ে আছেন?
বিরাট: হ্যাঁ, বেঙ্গালুরুর হয়ে ব্যাট করার দিকে প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি। উত্তেজক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট উপভোগ করার জন্য আইপিএল খুব ভাল একটা সময়।
প্র: আরসিবি দলে প্রথম থেকে খেলছেন আপনি। আগেকার দলের তুলনায় এ বারের দলকে কী ভাবে দেখছেন?
বিরাট: সত্যি বলতে কী, আমার মনে হয় আমাদের সেরা দল ছিল ২০০৯ সালের দলটা। তখন যে সব ক্রিকেটার ছিল দলে অনিল কুম্বলে, রাহুল দ্রাবিড়, রস টেলর, জাক কালিস, কেভিন পিটারসেন, মার্ক বাউচার, ডেল স্টেইন দলটা খুব শক্তিশালী ছিল। তবে এখনও দলে এবি ডে’ভিলিয়ার্স, জাহির খান, ক্রিস গেইল আর ড্যানিয়েল ভেত্তোরির মতো বড় কিছু নাম আছে। এই দলটা আরও শক্তিশালী কারণ আমাদের সবার মধ্যে বোঝাপড়াটা খুব ভাল।
প্র: আপনাকে ভারতের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক বলা হচ্ছে। আরসিবি-তে যে সব অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলেছেন তাঁদের কাছ থেকে ক্যাপ্টেন্সির কোন দিকগুলো নিতে চাইবেন?
বিরাট: রাহুল দ্রাবিড়ের কাছ থেকে ওর ধৈর্য নিতে চাইব। খুব বড় চাপের মধ্যেও দেখেছি রাহুল সব সময় ঠান্ডা থাকে। যখন আপনার দল হারছে, তখন অধিনায়ক হিসেবে নিজের আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা খুব কঠিন। রাহুল ভাই সেটা খুব ভাল করতে পারে।
অনিল কুম্বলের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মনোভাব চাইব। আর চাইব ওর হার না মানা মানসিকতা। ও শুধু নিজের দলকেই মোটিভেট করে না, মাঠে নিজের একশো শতাংশ দিয়ে সবার জন্য একটা উদাহরণ তৈরি করে দেয়।
ভেত্তোরির ধৈর্যও অসাধারণ। কঠিন পরিস্থিতিতে ও যে ভাবে নিজের বোলারদের সমর্থন করে সেটা সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। ওর কাছ থেকে এই জিনিসটা শিখতে চাই।
প্র: গত মরসুমে কয়েকটা ম্যাচে আপনি অধিনায়ক ছিলেন। তখন কি বড় বড় আন্তর্জাতিক তারকাদের নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন?
বিরাট: প্রথম দিকে একটু নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু মাঠে নেমে এক বার অধিনায়কের মতো ভাবতে শুরু করে দেওয়ার পর থেকে আর কিছু মনে হয়নি। আমার যা যা পরিকল্পনা ছিল, সেগুলো কাজে লাগানো নিয়ে দলের সবাই সাহায্য করেছিল। যার জন্য আরও রিল্যাক্সড ছিলাম। বেশ মজাই হয়েছিল।
প্র: বিশ্বের সবচেয়ে নৃশংস ব্যাটসম্যান কে?
বিরাট: ক্রিস গেইল।
প্র: গত বছর গেইলের সঙ্গে অনেক ম্যাচে ব্যাট করেছেন। ওঁর সঙ্গে ব্যাট করার সবচেয়ে কঠিন আর সবচেয়ে সহজ ব্যাপার দুটো কী?
বিরাট: সবচেয়ে কঠিন জিনিস হল নিজেকে নিরাপদ রাখা! আসলে গেইলের মতো কারও সঙ্গে ব্যাট করাটা বেশ চাপের ব্যাপার। উল্টো দিকে ওকে ওই ভাবে ব্যাট করতে দেখে ওর স্ট্রাইক-রেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে চাপে পড়ে যেতে হয়। আবার অন্য দিকও আছে। উল্টো দিকে গেইল যে গতিতে রান তোলে, তাতে আপনার উপর রান করার চাপটা অনেকটাই কমে যায়। আপনাকে শুধু দেখতে হবে যাতে উইকেটটা না উপহার দিয়ে আসেন।
প্র: গেইলের সঙ্গে ব্যাট করলে কি সেটা আপনার ব্যাটিংয়ের উপরও প্রভাব ফেলে?
বিরাট: না। আমরা দু’জনে দু’জনের ভূমিকাটা খুব ভাল বুঝি। এক জন বড় শট খেললে অন্য জনকে অ্যাঙ্করের ভূমিকায় থাকতে হয়। আমার মনে হয় ক্রিসের মতো কারও নকল না করে নিজের শক্তি অনুযায়ী খেলা অনেক ভাল। কারণ ক্রিসকে ছোঁয়া প্রায় অসম্ভব। একমাত্র ও-ই ও ভাবে ব্যাট করতে পারে। |