কৃষিঋণের টাকায় বিহারের বারোটি গ্রামে বন্দুক ক্রয়
মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত ভাবে অস্ত্র হাতে রুখে দাঁড়িয়ে বিহারে নজির গড়েছিলেন তাঁরা। এ জন্য অবশ্য চোকাতে হয়েছিল কঠিন মূল্য। প্রাণ দিতে হয় বেশ কয়েকজনকে। রোহতাস ও কৈমুর জেলার অখ্যাত ১২টি গ্রামের দরিদ্র আদিবাসীদের সেই রক্তাক্ত লড়াইয়ের কথা উঠে এসেছিল সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে। জঙ্গিদের রক্তচক্ষুকে পরোয়া না করার জন্য মিলেছিল সরকারের তরফে সাধুবাদও।
মাওবাদীদের মোকাবিলায় লড়াকু ওই গ্রামবাসীদের নিজেদের হাতে আইন তুলে নেওয়ার এই ব্যাপারটিকে বিহার প্রশাসন আসলে ‘অন্যায়’ হিসাবে দেখেনি। বরং তাঁদের পাশে দাঁড়াতে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার ঢালাও অনুমতিও দেওয়া হয়। গত বছর কেবলমাত্র রোহতাস জেলাতেই ৬১টি আগ্নেয়াস্ত্র কেনার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। প্রাপকদের মধ্যে আছেন দু’জন মহিলাও।
কিন্তু এই অস্ত্র কেনা নিয়েই এ বার নানা মহল থেকে উঠেছে প্রশ্ন। কারণ খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, রোহতাস ও কৈমুরের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ কিষান ক্রেডিট কার্ডের সাহায্যে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকায় শস্যবীজ বা সার না কিনে বন্দুক বা রাইফেল কিনছেন। বলা হচ্ছে ‘আত্মরক্ষার্থে’। প্রতিটি অস্ত্রের বাজার মূল্য ৬৫ হাজার থেকে আড়াই লক্ষ টাকা। বছরখানেক আগে রোহতাসের বান্দা গ্রামে মাওবাদীদের হাতে মারা যান তিন গ্রামবাসী। তারপর, শুধু বান্দা গ্রামেই ২১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
মূলত দু’টি প্রশ্ন ঘিরেই দেখা দিয়েছে বিতর্ক। (এক) কৃষি ঋণের টাকায় কী ভাবে বন্দুক কেনা যায়? (দুই) আদিবাসী অধ্যুষিত ওই দুই জেলার অভাবী গ্রামবাসীরা যেখানে পেটের ভাত জোটাতেই হিমসিম খান, সেখানে এত টাকা দিয়ে কী ভাবে তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র কিনছেন? সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কৃষি ঋণের টাকায় কি অস্ত্র কেনা যায়? ঋণ দেওয়ার সময় কি ভালমতো খোঁজখবর না নিয়েই কোনও বিশেষ মহলের চাপে ব্যাঙ্ক শুধুমাত্র আবেদনের ভিত্তিতে ঋণ দিয়েছে? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে ব্যাঙ্কের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “রোহতাস এবং কৈমুর এলাকার মানুষজনা কিষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু তা দিয়ে তাঁরা অস্ত্র কিনছেন কিনা তা আমাদের জানা নেই। ব্যাঙ্ক এই ব্যাপারে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে আবেদনকারীদের সর্ম্পকে।”
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ না জানলেও ঋণের টাকায় অস্ত্র কেনার বিষয়টি ওই গ্রামগুলির মানুষেরা অকপটেই স্বীকার করেছেন। পিপরাডিহি গ্রাম পঞ্চায়েতের মুখিয়া শ্যাম নন্দন ওরাং বলেন, “ব্যাঙ্ক ঋণের টাকায় এখানকার কিছু মানুষ অস্ত্র কিনছেন বলে শুনেছি। কিন্তু কেন কিনছেন জানি না।” আর গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, “আমাদের অভাব তো চিরদিনের। কিন্তু এখন সামনে যে বিপদ তাতে নিজেদের বাঁচানোই সমস্যা। অস্ত্রই এখন বেঁচে থাকার মূল ভরসা। তাই আমরা অস্ত্র কিনছি ব্যাঙ্কঋ
ণের টাকায়।” রোহতাসের নওহাট্টা থানার বান্দা গ্রামে মাওবাদীরা তিনজনকে খুন করার পরে গ্রামের মানুষরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, নিজেরাই লড়বেন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। রোহতাসের পুলিশ সুপার মনু মহারাজ তখন বলেছিলেন, “জেলা প্রশাসন থেকে অস্ত্র কেনার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আমরা দেখে নিচ্ছি আবেদনকারীর নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ আছে কিনা।”
ঘটনা হল, রোহতাস জেলার চেনারি, নওহাট্টা, রোহতাস এবং চুটিয়া থানা এলাকায় মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটিগুলিতেই সব থেকে বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। গ্রামের মানুষেরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় মাওবাদীদের হুমকি আরও বেড়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় অস্ত্র ধরাই আত্মরক্ষার শ্রেষ্ঠ উপায় বলে মনে করছেন গ্রামবাসীরা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.