নির্বাচন কমিশন ঝাড়খণ্ডে ভোট বাতিল করায় রাজ্যসভায় সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়ার উত্তরসূরি বাছাইয়ের কাজটা আরও শক্ত হয়ে গেল বিজেপির পক্ষে।
গত কালই সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত হয়েছে। রাজ্যসভার বিদায়ী সাংসদদের মেয়াদ ফুরোচ্ছে আর দু’দিন পরেই। ফলে ২৪ এপ্রিল থেকে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় ধাপে অহলুওয়ালিয়ার জায়গায় রাজ্যসভায় নতুন উপনেতা ঠিক করতে হবে বিজেপিকে। প্রাথমিক ভাবে নাজমা হেপতুল্লা, প্রকাশ জাভড়েকর ও রবিশঙ্কর প্রসাদের মধ্য থেকে কাউকে ওই পদের জন্য বেছে নেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু ঝাড়খণ্ডে রাজ্যসভার ভোট বাতিলের পরে যশবন্ত সিন্হার মতো নেতারা এখন ফের অহলুওয়ালিয়া বা বিজেপির অন্য কোনও প্রার্থীকে জেতানোর প্রস্তাব দিতে শুরু করেছেন।
সুষমা স্বরাজের মতো নেত্রী আগে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিলেও তাঁর আপত্তি উপেক্ষা করেই নিতিন গডকড়ীরা ঝাড়খণ্ডের ভোটে বিরত না থাকার সিদ্ধান্ত নেন। সেই ভোট বাতিল হওয়ার পরে সুষমারা এখন অহলুওয়ালিয়াকে নিয়ে আসার জন্য আবার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ ঝাড়খণ্ডের নতুন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আর কোনও বদল চাইছেন না। তাঁদের যুক্তি, জোট শরিক জেএমএম-এর রাজনৈতিক প্রার্থীকে জেতাতেই ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন করে নির্বাচন হলেও সেই পদ্ধতি অবলম্বন করাই বাঞ্ছনীয়।
কিন্তু রাজ্যসভায় বিরোধী দলের উপনেতা কে হবেন, তা নিয়ে এখনও জলঘোলা রয়েছে। রবিশঙ্কর প্রসাদ এখন রাজ্যসভার সাংসদ ছাড়াও দলের সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান মুখপাত্র। তা ছাড়া তাঁকে আইনজীবী হিসাবেও ব্যস্ত থাকতে হয়। দলের নানান আইনি জটিলতাও তাঁকে সামলাতে হয়। দলের নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যসভায় তাঁকে উপনেতা করা হলে বাকি পদগুলি ছাড়তে হবে। ছাড়তে হবে আইনি পেশাও। প্রকাশ জাভড়েকর উপনেতার দৌড়ে নিজেকে এগিয়ে রাখতে সক্রিয় হয়েছেন। অহলুওয়ালিয়ার জিতে আসার সম্ভাবনা খারিজ হওয়ার পর থেকে তিনি রাজ্যসভায় বিভিন্ন বিষয়ে সরব হচ্ছেন। সেনাবাহিনীতে দুর্নীতির অভিযোগে গোটা দল যখন ‘সংযত’ ভূমিকা পালন করছে, সেই সময় আগ বাড়িয়ে প্রকাশ জাভড়েকর এ কে অ্যান্টনির ইস্তফা চেয়ে বসেছেন। জাভড়েকরের এই অতি-সক্রিয়তা দলের অনেকেই পছন্দ করছেন না। এই পরিস্থিতিতে নাজমা হেপতুল্লার নাম দৌড়ে এগিয়ে আসছে। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি কংগ্রেসে থাকার সময়েই দু’দফায় রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদ সামলিয়েছেন। সংসদের খুঁটিনাটি বিষয়েও তাঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা আজ জানান, “নাজমাকে ফের রাজ্যসভায় জেতানোর পিছনে নিশ্চয়ই কোনও কৌশল রয়েছে। তাঁকে দিয়ে আর যাই হোক ভোট টানার কাজটি হবে না। এই অবস্থায় দলে সর্বসম্মতি হলে তাঁকে উপনেতা করা হতে পারে।” বিজেপি সূত্রের মতে, সংসদীয় ব্যাপারে লালকৃষ্ণ আডবাণী যেহেতু শীর্ষে রয়েছেন, তাই নিতিন গডকড়ী খুব বেশি এই বিষয়ে নাক গলাবেন না। তা ছাড়া সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের পরাজয় ও অংশুমান মিশ্রকে নিয়ে বিতর্কে তাঁর কর্তৃত্ব খাটো হয়েছে। গডকড়ীর সহযোগী বিনয় সহস্রবুদ্ধে, শ্যাম জাজু, দলের মুখপাত্র নির্মলা সীতারামণের মতো নেতারা এ বারে রাজ্যসভার প্রার্থী হওয়ার আশায় ছিলেন। কিন্তু তাঁদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। সঙ্ঘের কাছে গডকড়ীর বিরুদ্ধে সেই অসন্তোষও তাঁরা জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ডের নতুন নির্বাচন প্রক্রিয়ার ছবি স্পষ্ট হলেই বিজেপি নেতৃত্ব উপনেতার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চান। |