চিঠি ফাঁসের তদন্ত দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ
সেনাধ্যক্ষের কাছে আরও তথ্য চাইবে সিবিআই
সাক্ষাৎকারের চাপানউতোর বা কানাঘুষো নয়। সেনাধ্যক্ষ বিকাশকুমার সিংহ লিখিত ভাবেই সিবিআইকে জানিয়ে দিলেন, ২০১০ সালে দায়িত্ব নেওয়ার ছ’মাসের মধ্যে তিনি ১৪ কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। শর্ত ছিল, ৬০০ টাট্রা ট্রাক কেনার বিষয়ে সায় দিতে হবে তাঁকে। এই প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল তেজিন্দর সিংহের নামও উল্লেখ করেছেন তিনি।
সিবিআই অবশ্য এটাকেই যথেষ্ট মনে করছে না। গত কাল সেনাপ্রধানের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরেই প্রাথমিক অনুসন্ধানের কাজ শুরু করে দিয়েছে তারা। এ বার সেনাপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে কিংবা লিখিত ভাবে আরও তথ্য-প্রমাণ চাইবে তারা। এবং জেনারেল সিংহ তা দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে অভিযুক্ত তেজিন্দর সিংহকেও। ঘুষ কেলেঙ্কারিতে নিজের নাম উঠে আসার পরেই প্রাক্তন এই সেনা-কর্তা মানহানির মামলা ঠুকেছেন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহের বিরুদ্ধে। তবে সিবিআই এখন সেনাপ্রধানের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধানই চালিয়ে যাবে, নাকি এ নিয়ে ‘এফআইআর’ দায়ের করে পুরো দস্তুর তদন্তে নামবে, তা এখনও স্থির হয়নি। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সিবিআই সূত্রে আজ জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীকে লেখা সেনাপ্রধানের চিঠি প্রকাশ্যে আসার পরেই বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি কাল এমনও বলেছেন যে, “এই চিঠি ফাঁস করাটা রাষ্ট্রদ্রোহের সমান।” যারা এই কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোরতম’ ব্যবস্থা নেওয়ারও শথথ নেন তিনি। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম আজ বলেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোকে দ্রুত চিঠি ফাঁসের তদন্ত সেরে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে। যদিও এ নিয়ে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।”
সরকার চাইছে, বয়স-বিতর্কের মতো এটাকেও যেন সরকার বনাম সেনাপ্রধানের দ্বন্দ্ব হিসেবে না দেখানো হয়। লোকসভার নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে কলকাতায় এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সংঘাত বা জটিলতার কিছু নেই। প্রতিরক্ষামন্ত্রী সংসদেই স্পষ্ট ভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।” বিজেপি অবশ্য এটাকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আরও একটি হাতিয়ার হিসেবেই দেখছে। তাদের মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর এ দিন কলকাতায় বলেন, “বফর্সের পরে এটাই সব চেয়ে বড় কেলেঙ্কারি। এখন দেখা যাচ্ছে আমাদের জওয়ানদের হাতে যে সব সরঞ্জাম তুলে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলি যথেষ্ট নিরাপদ নয়।”
যা নিয়ে এত বিতর্ক, সেই টাট্রা ট্রাকের মান নিয়ে আজও কিন্তু সওয়াল করেছেন প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র (ডিআরডিও)-র প্রধান ভি কে সারস্বত। তাঁর বক্তব্য, “টাট্রা ট্রাকের মান অসাধারণ। এর কোনও কিছুই নিচু মানের নয়। প্ৃথ্বী থেকে অগ্নি, সব ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রই ছোড়া যায় এর উপর থেকে। ছোটেও ভাল। সরকার বারণ করলে আলাদা কথা, নয়তো ভবিষ্যতে এই ট্রাক আমরা আরও সংগ্রহ করব।”
জেনারেল সিংহ অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন এর মান নিয়েই। তাঁর আরও দাবি, আন্তর্জাতিক স্তরে মানের তুল্যমূল্য বিচার না করেই সেনাবাহিনীর জন্য টাট্রা ট্রাক কেনা হচ্ছে। এবং তার জন্য সেনাবাহিনীকে ভুগতেও হচ্ছে। ডিআরডিও-র প্রধান জেনারেল সিংহের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করলেও, প্রাক্তন সেনা-কর্তাদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান এক্স সার্ভিসেস লিগ’ আজ সেনাপ্রধানের সমর্থনে মুখ খুলেছে। সংগঠনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার আর কে গুলিয়া আজ বলেছেন, “নিজের স্বার্থে নয়, সেনাপ্রধান যা করছেন তা বাহিনীর ভালর জন্যই।” সংগঠনটির আরও বক্তব্য, জেনারেল সিংহ আসলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘হুইস্ল ব্লোয়ার’-এর ভূমিকা নিয়েছেন। ঘটনা এখন একটু একটু করে প্রকাশ্যে আসছে। এ নিয়ে যেন অকারণ জলঘোলা না করা হয়।
জলঘোলা অবশ্য তাতে থামছে না। ‘টিম অণ্ণার’ সদস্য প্রশান্ত ভূষণ প্রশ্ন তুলেছেন সিবিআই তদন্ত নিয়ে। তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করে এই তদন্ত সংস্থা। তাদের তদন্তে ট্রাক-কেলেঙ্কারির আসল তথ্য কখনওই বেরোবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.