মমতার দাবি মানার ইঙ্গিত
এনসিটিসি নিয়ে হতে পারে আলাদা বৈঠক
মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাপের কাছে ফের নতিস্বীকার করল কেন্দ্রীয় সরকার। এ বার জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এসসিটিসি) নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য আলোচনার প্রশ্নে।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে ১৬ এপ্রিলের মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে আর পাঁচটা বিষয়ের সঙ্গে এসসিটিসি-কে জুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু মমতার দাবি ছিল, এনসিটিসি গঠনের মাধ্যমে রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলাদা করে আলোচনায় বসুক কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে এ নিয়ে চিঠিও লেখেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম ইঙ্গিত দিয়েছেন, মমতার দাবি অনুযায়ী এনসিটিসি নিয়ে আলাদা ভাবে আলোচনা করতে মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনের সময়সীমা এক দিন বাড়ানো হতে পারে। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীদের অনুরোধ মেনে এনসিটিসি-র বিষয়টি যথেষ্ট সময় দিয়ে কী ভাবে আলোচনা করা যায়, তা দেখা হচ্ছে। আমার মনে হয়, আগামী দু’দিনের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
রাজ্য পুলিশকে এড়িয়ে এনসিটিসিকে গ্রেফতার ও তল্লাশি চালানোর ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবীন পট্টনায়ক, নীতীশ কুমার, নরেন্দ্র মোদী, মানিক সরকার-সহ প্রায় এক ডজন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মিলিত আপত্তিতে ১ মার্চ থেকে এনসিটিসি চালু করা যায়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানান মমতা। এর মধ্যেই ১৬ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনের দিন ঠিক হয়। সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পাশাপাশি ঠাঁই পায় এনসিটিসি-ও। কিন্তু তার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হন মমতা, নরেন্দ্র মোদী-সহ অনেক মুখ্যমন্ত্রীই। এর পরেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিতে মমতা লেখেন, “এনসিটিসি খুবই স্পর্শকাতর ইস্যু। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে এটাই একমাত্র আলোচ্য বিষয় হওয়া উচিত, যাতে সমস্ত রাজ্য নিজের মত জানাতে পারে এবং বিতর্ক হতে পারে। অন্যান্য বিষয়ে পরেও আলোচনা সম্ভব।” শনিবার মুখ্যমন্ত্রী নিজেও প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়া ভাল নয়।” এনসিটিসি প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন নরেন্দ্র মোদীও।
এর পরেই আজ চিদম্বরম বুঝিয়ে দেন, এনসিটিসি নিয়ে মমতা-সহ মুখ্যমন্ত্রীদের বক্তব্যকে কেন্দ্র কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কি সম্মেলনের সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাব, “সেই সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীদের সুবিধা-অসুবিধার উপর তা নির্ভর করছে।”
শুধু এনসিটিসি নয়, বিএসএফকে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার পাশাপাশি গোটা রাজ্যে অভিযান চালানোর ক্ষমতা দেওয়ার বিরুদ্ধেও সম্প্রতি সংসদে আপত্তি জানিয়েছে বিজেপি, বাম, তৃণমূল-সহ বিভিন্ন দল। যার ফলে বিএসএফ (সংশোধনী) বিল পিছিয়ে দিতে হয়েছে। দলগুলির বক্তব্য হল, বিএসএফকে ওই ক্ষমতা দেওয়া হলে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হবে। কারণ আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রশ্ন তুলে অ-কংগ্রেসি দলগুলি দাবি জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে বিএসএফ (সংশোধনী) বিল নিয়েও আলোচনা হোক। এনসিটিসি ও বিএসএফ (সংশোধনী) বিল, দু’টি বিষয়েই রাজ্যের আশঙ্কা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি ছিল, সন্ত্রাসবাদী হামলার মতো জরুরি পরিস্থিতিতে সব সময়, সব ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশ কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে থাকে না। কিন্তু সাধারণ ভাবে যে কোনও অভিযানেই রাজ্য পুলিশকে আগাম জানানো হয়। চিদম্বরমও জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারের দাবি মেনেই কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে নিয়োগ করা হয়। সেটাই প্রথা। আজও চিদম্বরম একই যুক্তি দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “সংবিধান, দেশের আইনকানুন এবং গত ৬৫ বছর ধরে যে স্বাস্থ্যকর প্রথা তৈরি হয়েছে, সে গুলি সব মেনেই বিতর্ক হবে বলে আমার আশা।”
মুখ্যমন্ত্রীদের আপত্তিতে এনসিটিসি আটকে গেলেও ১ মার্চ থেকে এটি চালু হবে বলে যে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল, তা এখনও প্রত্যাহার হয়নি। এ ব্যাপারে চিদম্বরমের ব্যাখ্যা, “ওতে বলা হয়েছিল, প্রথমে এক জন ডিরেক্টর নিয়োগ করা হবে। তার পরে তিন জন জয়েন্ট-ডিরেক্টর নিয়োগ করা হবে এবং স্থায়ী পরিষদ গঠন হবে। এ সব হলেই এনসিটিসি হত। এখন তাই এনসিটিসি শুধুই একটা ভাবনা, যা বাস্তবায়িত করতে হবে।” মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনেও এই ভাবনা ও বাস্তবের ফারাক মেটানো যাবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা এখনও সন্দিহান। তাঁদের মতে, রাজ্যের দাবি মানতে গেলে এনসিটিসি-র ক্ষমতা খর্ব করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তার কার্যকারিতা নিয়েই সংশয় থেকে যাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.