সকলের কাছে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা এখনও রাজ্যের ধরাছোঁয়ার বাইরে। দেশে গড়ে যত পরিবার ব্যাঙ্কের পরিষেবা পাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গ তার থেকে অনেকটা নীচে। এ রাজ্যে বসবাসকারী মোট পরিবারের অর্ধেকের কাছেও পৌঁছয়নি এই পরিষেবা। ২০১১ সালের জনগণনার সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে সরকার চাল কিনে চাষিদের দাম মেটানোর ক্ষেত্রে নগদের বদলে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা মেটাতে শুরু করেছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না-থাকায় বহু চাষি এ নিয়ে সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ। সরকারের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, স্বচ্ছতা আনার চেষ্টায় যথেষ্ট সময় হাতে দিয়ে আগাম ঘোষণা করে চালু হয়েছে এই পদ্ধতি। অর্থ
দফতরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও গত ৮ ডিসেম্বর মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে আলোচনা করেন, তাতে রাজ্যের আরও বেশি মানুষকে ব্যাঙ্কের পরিষেবার আওতায় আনার কথাও গুরুত্ব পেয়েছে।” ২০০১ সালের জনগণনা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল এ রাজ্যের শহুরে ও গ্রামীণ পরিবারের যথাক্রমে ৫৯.৪% ও ২৭.৬% ব্যাঙ্কের পরিষেবা পাচ্ছে। এক দশক বাদে এই দুই হিসাব দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৬৮.২% ও ৩৯.৮%। এই এক দশকে শহর-গ্রামের গড় ৩৬.৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৮.৮। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, এ রাজ্যের গ্রামে ব্যাঙ্কের পরিষেবা ছড়িয়ে দিতে তিনটি আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ঢেলে সাজার কথা হয় মহাকরণের বৈঠকে। এর পর সুব্বারাও জানান, রাজ্যের তিন ব্যাঙ্ক ঢেলে সাজতে ৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এই খাতে বরাদ্দ করবে ২৩৫ কোটি টাকা।
যে সময়ের তথ্য জনগণনা দফতর পেশ করেছে, তখন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ছিলেন অসীম দাশগুপ্ত। তিনি স্বীকার করেছেন, ব্যাঙ্কের সংখ্যা এবং ঋণ উভয় দিক থেকেই পশ্চিমবঙ্গ দেশের অধিকাংশ রাজ্যের চেয়ে পিছিয়ে। তাঁর অভিযোগ, এর জন্য দায়ী ‘মূলত কেন্দ্রীয় অবহেলা’। অসীমবাবু বলেন, “বছর দুই আগেও এ রাজ্যের ৩৩০৪ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯০০টি-তে একটিও ব্যাঙ্কের শাখা ছিল না। সে সময়ে রাজ্যের মানুষের ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ কোটি টাকা। তবে এর চেয়ে কম টাকা রাখা সত্ত্বেও কিছু রাজ্য বেশি ঋণ পেয়েছে। বিষয়গুলো বিভিন্ন বৈঠকে আলোচিতও হয়েছে। বার বার কেন্দ্রকে জানানো হলেও লাভ হয়নি।” তবে এই অভিযোগ সত্ত্বেও অসীমবাবু বলেন, “পূর্বসূরিদের চেয়ে এ ব্যাপারে বেশি ইতিবাচক ব্যবস্থা নিচ্ছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।”
অবশ্য আরবিআই গভর্নর সম্প্রতি জানিয়েছেন, “এ রাজ্যে মোট ৭৫০০ গ্রামের প্রায় ৪ হাজারটিতে ব্যাঙ্কের পরিষেবা পৌঁছনো গিয়েছে। বাকি গ্রামগুলোতেও শীঘ্রই তা পৌঁছনোর চেষ্টা হচ্ছে।” তবে আরবিআই-এর তথ্যে দেখা যাচ্ছে ২০০৮ পর্যন্ত দেড় দশকে এ রাজ্যে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ৪৭৫০ গ্রামীণ শাখা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই সময়ে দ্বিগুণ হয়েছে এ সব ব্যাঙ্কের শহুরে শাখার সংখ্যা।
|