তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে নতুন বিনিয়োগ টানতে প্রায় হিমঘর থেকে ‘কেব্ল ল্যান্ডিং স্টেশন’ প্রকল্প বার করার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার।
চার বছর আগে এই প্রকল্প তৈরির জন্য সবুজ সঙ্কেত দেয় কেন্দ্র। কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্যের গড়িমসি, অর্থাভাব ও জমি সমস্যা একের পর এক জটে গোটা প্রকল্পটাই ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। নতুন সরকার আসার পরে ফের প্রকল্পটি নিয়ে দিল্লির কাছে তদ্বির করতে চলেছে রাজ্য। পাশাপাশি, এ জন্য দিঘায় যে জমি চিহ্নিত হয়েছে, তার দাম সংক্রান্ত সমস্যাও দ্রুত মেটাতে আগ্রহী রাজ্য। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই প্রকল্প হাতছাড়া করা যাবে না। বিরোধী আসনে বসেও প্রকল্পটি সমর্থন করেছিলাম আমরা।”
বিশেষ আর্থিক অঞ্চল তকমা নিয়ে জটে ইনফোসিস প্রকল্প এখনও পরিকল্পনা স্তরে। বিশ্ব বাজারের মন্দার কারণে আটকে এইচ এস বি সি, রোল্টা-সহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে বিনিয়োগের নতুন চুম্বক হতে পারে কেব্ল ল্যান্ডিং স্টেশন। বিশেষজ্ঞদের মতে, চওড়া ‘ব্যান্ডউইড্থ’-এর দৌলতে দ্রুত তথ্য পরিবহণের সুবিধার টানে আসতে পারে টেলিকম, ব্যাঙ্কিং, থ্রি-ডি ইমেজিং-সহ বিভিন্ন পরিষেবার উন্নতমানের কাজকর্ম।
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায় প্রচুর তথ্য এক সঙ্গে পাঠাতে হয়। ‘ব্যান্ডউইড্থ’ না-থাকলে তা সম্ভব হয় না। ফলে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা প্রাথমিক স্তর পেরোনোর ক্ষেত্রে এই অভাবও অন্যতম বাধা। |
২০০৪ সাল থেকে এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে। তিন বার কেন্দ্রীয় সরকার তৈরি হয়েছে। তিন জমানার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন এই প্রকল্প হবে। প্রকল্প পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। ফলে যোগাযোগের যে-পরিকাঠামো রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত, তা এখনও নাগালের বাইরেই থেকে গিয়েছে।
এই ল্যান্ডিং স্টেশনের ভূমিকা অনেকটা যান পরিবহণের ক্ষেত্রে এক্সপ্রেসওয়ের মতো। সমুদ্রের তলা দিয়ে মোটা কেবলের মাধ্যমে তথ্য পরিবহণ করা হয়ে থাকে। ল্যান্ডিং স্টেশনের কাছাকাছি থাকার অর্থ অনেক সহজে ও কম খরচে সংযোগ করা যায়। এ ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ খরচ কমে যাবে। তবে খরচের চেয়েও দ্রুত ও নিপুণ কাজের জন্যই তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কাছে এই পরিকাঠামোর কদর। এখন মুম্বই বা চেন্নাইয়ের তুলনায় সংযোগের ক্ষেত্রে কলকাতার সংস্থাগুলির খরচ প্রায় দু থেকে তিন গুণ বেশি।
২০০৮ সালের মে মাসেই রাজ্যকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্র জানিয়েছিল যে, কেব্ল ল্যান্ডিং স্টেশন এখানেই হবে। এর পরে দুই রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা এমটিএনএল এবং বি এস এন এল মিলেনিয়াম টেলিকম নামে একটি যৌথ উদ্যোগ তৈরি করে। কেব্ল স্টেশন গড়তে ১৬০০ কোটি টাকার টেন্ডার ডাকা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এই টেন্ডার নাকচ করে দ্বিতীয়বার টেন্ডারও ডাকা হয়।
২০১০ সালে রাজ্য প্রকল্পের জন্য তিন একর জমি চিহ্নিত করে। দিঘায় সেই জমি দেখে পছন্দ করে যায় কেন্দ্র ও যৌথ উদ্যোগের প্রতিনিধি। কিন্তু এর পরেই দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ জমি বাবদ যে-দাম চায়, তাতে বেঁকে বসে সংস্থা। এর পর বিধানসভা নির্বাচনে গোটা বিষয়টি হিমঘরে চলে যায়। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহলের মতে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু বা দিল্লির সঙ্গে টক্কর দিতে বাড়তি সুবিধা পাবে কলকাতা।
রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে অন্যতম প্রতিকূলতা তথ্য পরিবহণের এমন ব্যবস্থা না-থাকা, যার মাধ্যমে সরাসরি গোটা বিশ্বে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। এখনও পর্যন্ত যে-পরিকাঠামো রয়েছে, তাতে চেন্নাই ও মুম্বইয়ের কেব্ল ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে তথ্য পাঠানো হয়। রাজ্যে ল্যান্ডিং স্টেশন তৈরি হয়ে গেলে তথ্য পরিবহণের গতি এক লাফে বিশ্বমানে পৌঁছে যাবে। এবং তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে বিনিয়োগের স্রোতও নতুন গতি পাবে। একই সঙ্গে এই ল্যান্ডিং স্টেশন হওয়ার সুবিধা পাবে পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প। |