মূল্যবৃদ্ধির ভয়েই আপাতত পিছোল সরকার
দিনভর জল্পনা চলল। কিন্তু দিনের শেষে পেট্রোলের দাম আজ না বাড়ানোরই সিদ্ধান্ত নিল তেল সংস্থাগুলি। তবে দু’এক দিনের মধ্যে আবার এই নিয়ে পর্যালোচনা হতে পারে। শেষ পর্যন্ত যদি দাম বাড়ে, তা হলে লিটার প্রতি তা পাঁচ টাকা পর্যন্ত বাড়ার সম্ভাবনা।
আন্তর্জাতিক বাজারের কথা মাথায় রেখে আজ অবশ্য বিমানের জ্বালানির দাম আর এক দফা বাড়ানো হয়েছে। চলতি মাসে এই নিয়ে তৃতীয়বার। আজ বিমানের জ্বালানির দাম ৩% বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ১ মার্চ ও ১৬ মার্চও বিমানের জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছিল।
আজ তা হলে তেলের দাম বাড়ানো হল না কেন?
সরকারি সূত্রের খবর, বাজেটেই উৎপাদন শুল্ক ও পরিষেবা করের হার ২ শতাংশ হারে বাড়ানো হয়েছে। আজ মধ্যরাত থেকে সেই নতুন করের হার কার্যকর হতে চলেছে। কিছুটা হলেও মূল্যবৃদ্ধির উপরে যার প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রক। এর উপরে যদি এ দিনই পেট্রোল বা অন্যান্য জ্বালানির দামও বাড়ানো হত, তা হলে মূল্যবৃদ্ধির হার আরও বাড়ার আশঙ্কা ছিল। সে জন্যই শেষ পর্যন্ত এ পথে হাঁটেনি সরকার। তেল সংস্থাগুলির সূত্রে আবার বলা হচ্ছে, তেলের উপরে শুল্ক কমানো নিয়ে কেন্দ্রের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল। তার জবাব না মেলায় আপাতত পেট্রোলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হল। পেট্রোলের দাম নিয়ন্ত্রণমুক্ত হলেও এখনও রাজনৈতিক সম্মতি নিয়েই তেল সংস্থাগুলি দাম বাড়ায়-কমায়। সংস্থাগুলির দাবি ছিল, পেট্রোলের দাম বাড়ানো না হলে লিটার প্রতি ক্ষতি মিটিয়ে দিক সরকার। কারণ, শুধু পেট্রোলেই চলতি অর্থবর্ষে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর পাশাপাশি, প্রতি লিটারে ১৪ টাকা ৩৫ পয়সা হারে উৎপাদন শুল্ক কমানোরও দাবি জানানো হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ন’টাকা, সে পরিমাণ দামই তেল সংস্থাগুলি বাড়াক না কেন, আখেরে তেলের দাম কমবে। এর ফলে এক দিকে যেমন সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধিত হবে, অন্য দিকে তেমনই তেল সংস্থাগুলিও ক্ষতি কিছুটা সামলাতে পারবে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে আজ পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও জবাব মেলেনি।
প্রথামাফিক ১৫ দিন অন্তর আন্তর্জাতিক বাজারের অশোধিত তেলের দাম পর্যালোচনা করে এ দেশে তেলের দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। আন্তর্জাতিক বাজারে আকাশছোঁয়া তেলের দাম নিয়ে অনেক দিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করছে কেন্দ্র। ভর্তুকির বোঝা কমাতে মরিয়া সরকারের সামনে তেলের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায়ও ছিল না। কিন্তু এর আগে তেলের দাম বাড়াতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছিল কেন্দ্রকে। যার জেরে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের পরে ইউপিএ-সরকারের রাজনৈতিক সমীকরণ পরিবর্তন হলেই তেলের দাম বাড়ানো হবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেসের খারাপ ফল তা হতে দেয়নি। এ বার বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধ শেষের সঙ্গে সঙ্গেই তেলের দাম বাড়বে বলে জল্পনা চলছিল।
এর আগে গত ডিসেম্বরে পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ৭৮ পয়সা কমানো হয়েছিল। কিন্তু সে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে যে অশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ১০৯ ডলার, এখন সেটাই ১৩০ ডলারের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। প্রতি লিটার ডিজেলে ১৪ টাকা ৭৩ পয়সা, কেরোসিনে প্রায় ৩০ টাকা এবং রান্নার গ্যাসে সিলিন্ডার প্রতি প্রায় ৪৪০ টাকা হারে ক্ষতি হচ্ছে তেল সংস্থাগুলির। এই তিনটি পেট্রোপণ্যে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার ক্ষতির পরিমাণ ২০১১-’১২ অর্থবর্ষে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আগামী বছরের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই অর্থ মন্ত্রকের কাছে বাড়তি ৪০ হাজার কোটি টাকা নগদ ভর্তুকির দাবি জানিয়েছে। এই অর্থ শুধুমাত্র ডিজেল, রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনের জন্য। অর্থ মন্ত্রক এমনিতেই ৪৫ হাজার কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়েছিল। তারপরেও বাড়তি নগদ ভর্তুকি চাওয়া হচ্ছে। পেট্রোলের জন্য চাওয়া হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.