ওরা কেউ ঘটনাচক্রে অপরাধের ঘটনায় জড়িয়ে গিয়ে হোমে। কেউ আবার বাড়ির কর্তার মারধরের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে গিয়ে ধরা পড়ে হোমে আশ্রয় পেয়েছে। কেউ আবার ছোট্টবেলায় শহরের কোথাও হারিয়ে নানা হোম ঘুরে এখানে এসেছে। এমনই নানা কারণে একই ছাদের নিচে থাকা ২৩ জন নাবালিকার মুখে হাসি ফুটল। সৌজন্যে- কোচবিহার জেলা প্রশাসন ও সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্প দফতর। মঙ্গলবার কোচবিহারের শহিদ বন্দনা স্মৃতি মহিলা হোমের আবাসিকদের হাতে খাতা, কলম, ব্যাগ, স্কেচপেন, প্লাস্টিক অ্যালফাবেট তুলে দিলেন প্রশাসন ও সর্বশিক্ষা মিশনের কর্তারা। ইতিমধ্যে আবাসিকদের লেখাপড়া করতে না পারার আক্ষেপ ঘোচাতে দুই জন শিক্ষিকাকে ছয়মাসের চুক্তিতে নিয়োগ করেছেন সর্বশিক্ষা মিশন কর্তৃপক্ষ। দেওয়া হয়েছে ভলিবল, ফুটবল, লাফদড়ির মত হরেক খেলনা জিনিসপত্রও। এছাড়াও আবাসিকরা পেল আয়না, চিরুণি, চপ্পল, টুথব্রাশ, পেষ্ট, তোয়ালে থেকে পুতুলের মত আরও কিছু জিনিসপত্র। প্রায় এক বছর থেকে নূন্যতম এক মাস সময় ধরে ওই আবাসিকরা এই হোমে আছে। নানা অভিযোগে জড়িয়ে আর দশটা সাধারণ সমবয়সীর তুলনায় তাদের রুটিম একটু ‘অন্যরকম’। সম্প্রতি হোমে পরিদর্শনে যান কোচবিহারের জেলাশাসক। |
জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “কিছুদিন আগে হোমটিতে গিয়েছিলাম। আবাসিকরা পড়াশোনার ইচ্ছের কথা জানায়। এর পরেই সর্বশিক্ষা মিশনের মাধ্যমে শিক্ষিকা নিয়োগ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা আধিকারিক আমিনুল আহসান বলেন, “শিক্ষিকা নিয়োগ ছাড়াও আবাসিকদের প্রয়োজনীয় আরও কিছু সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। ছোটছোট ওই মেয়েদের মুখে হাসি দেখে খুব ভাল লেগেছে। আগামীদিনেও এভাবে আমরা ওদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।” এতে আশার আলো দেখছে ওই নাবালিকারাও। স্কুল ব্যাগ নেড়েচেড়ে দেখার ফাঁকে এক বাংলাদেশী কিশোরী বলে, “মায়ের সঙ্গে সীমান্ত পার হতে ধরা পড়ি। মা জেলে আছে। একসময় আমিও স্কুলে যেতাম। প্রতিদিন স্কুলব্যাগ গুছিয়ে রাখতাম। এক বছর ধরে এখানে আছি। স্কুলে যেতে পারব না ঠিকই কিন্তু পড়তে তো পারব।” আবাসিকদের অনেকেই খাতা, স্কেচপেন পেয়েই আঁকতে বসে যায়। এক আবাসিক কিশোরীর কথায়, “বাড়ি আর আমাদের গ্রামের ছবি আঁকব। বাড়ি ছবি দেখে সময় কেটে যাবে। কবে যে বাড়ি যাব!” জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্য পর্ণশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরাও চাই আবাসিকেরা সকলেই প্রাণবন্ত হয়ে থাকুক। ওই ২৩ জনকে এমন চাঙা দেখে খুব ভাল লেগেছে।” |