দল ছাড়লেন মালদহের কালিয়াচক-৩ পঞ্চায়েত সমিতির আট কংগ্রেস সদস্য। মঙ্গলবার ওই ৮ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য দল ছাড়ার কথা লিখিত ভাবে জেলা কংগ্রেস সভাপতি, সদর মহকুমাশাসক এবং জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নোয়ন আধিকারিককে জানিয়েছেন। ৩৯ আসনের ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে কংগ্রেসের আসন ছিল ২৪। বাকি ১৫টি আসন বামেদের দখলে। ফলে ওই ৮ জন দল ছাড়ায় দলত্যাগ বিরোধী আইনের কবলে পড়বেন না। তবে এই ঘটনায় ওই পঞ্চায়েত সমিতিতে কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ড সংখ্যালঘু হয়ে পড়ল। দলত্যাগী ৮ সদস্য তৃণমূলে যোগ দিলেও জেলা প্রশাসনকে চিঠিতে তাঁরা ‘নির্দল’ হিসাবে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক বিকাশ সাহা বলেন, “কালিয়াচক-৩ পঞ্চায়েত সমিতির ৮ জন কংগ্রেস সদস্যের দলত্যাগের চিঠি পেয়েছি। এ ক্ষেত্রে আইন মেনেই পদক্ষেপ করা হবে।” কালিয়াচক-৩ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা সিপিএমের দ্বিজেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করব পরবর্তীতে কী করব।” দলের ৮ তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় চটেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরী। ওই ঘটনায় তৃণমূলকেই দায়ী করে ক্ষুব্ধ জেলা কংগ্রেস সভাপতি অভিযোগ করেন, তৃণমূল মুখে জোটের কথা বলে কংগ্রেসকে পিছন থেকে ছুরি মারছে। আমাদের নির্বাচিত সদস্যদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে কংগ্রেসকে ভাঙার চক্রান্ত চলছে। তিনি বলেন, “তৃণমূলের এই চক্রান্তের কথা হাইকমান্ডকে জানাব। পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখব তৃণমূলের কত শক্তি। কংগ্রেসকে ভাঙিয়েও তৃণমূল কিছুই করতে পারবে না।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের পাল্টা দাবি, দলত্যাগের ঘটনার পরে কংগ্রেস অহেতুক দোষারোপ করছে। আসলে কংগ্রেসই নিজেদের সদস্যদের ধরে রাখতে পারছে না। তিনি বলেন, “যারা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন তাঁরা কী শিশু! জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের উপর ভরসা নেই বলেই তাঁরা আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন।” তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক ছোটন মৌলিক দাবি করেন, কালিয়াচক-৩ পঞ্চায়েত সমিতির আরও কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য তৃণমূলে যোগ দেবেন। কালিয়াচক-৩ পঞ্চায়েত সমিতির যে ৮ জন সদস্য কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেছেন তাঁদের একজন মনোজ চৌধুরী অভিযোগ করেন, গনি খান চৌধুরী মালদহে কংগ্রেসের যে ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছিলেন তা জেলা কংগ্রেসের বর্তমান নেতৃত্ব ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “বরকতদা যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন কংগ্রেস কর্মীরা জেলায় মাথা উঁচু করে লড়াই করতেন। এখন কীভাবে টাকা উপার্জন করতে হবে সেদিকেই গনি খানের পরিবারের সদস্যরা ছুটছেন। মানসন্মান নিয়ে কংগ্রেস করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই কংগ্রেস ছেড়েছি।” ওই পঞ্চায়েত সমিতির পদত্যাগী আরেক কংগ্রেস সদস্য সুশীল সরকার অভিযোগ করেন, “এখন মালদহের কংগ্রেস প্রোমোটার ও সুযোগসন্ধানীদের দল হয়ে গিয়েছে। এ ভাবে কংগ্রেস করা যায় না।” কালিয়াচক-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ সরকার দাবি করেছেন, যে ৮ জন সদস্য আজ কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেছেন, তাদের মধ্যে দুজনকে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগে ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা কংগ্রেস সভাপতি দল থেকে বহিস্কার করেছিলেন। তিনি বলেন, “তাদের সঙ্গে বাকি ৬ জনকে তৃণমূল নানা প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের দলে টেনেছে।” জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক অবশ্য দাবি করেছেন, ওই দুই সদস্যকে বহিস্কারের ব্যাপারে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁদের কিছুই জানাননি। |