তান্ত্রিক সেজে রোগ সারানোর নাম করে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ১৭ মার্চ ধূপগুড়ি থানার গাদং-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুন শালবাড়ি গ্রামে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনাটি ঘটলেও দিন দুয়েক আগে ধূপগুড়ি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ওই তরুণী পরিবারের লোকেদের ঘটনাটি জানান। তরুণীর পরিবার নালিশ দায়ের করার পরে সোমবার পুলিশ ওই ব্যক্তিতে ধরে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে পাঠায়। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের নাম নিরঞ্জন দেবশর্মা। তার বাড়ি ময়নাগুড়ি এলাকায়। মাস দুয়েক আগে তিনি ওই এলাকায় এক মহিলা পার্বতী সূত্রধরের বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ঝাড়ফুঁক করে রোগ সারাতেন বলে দাবি করতেন। গ্রামের লোকেরা তাকে পাগলা বাবা বলে ডাকতেন। অনেকে তান্ত্রিকের ছবি ঘরে টাঙিয়ে ধূপধুনোও দিতেন। ধর্ষণের ঘটনাটি জানার পরে অবশ্য এখন চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। যে মহিলার বাড়িতে ওই ব্যক্তি আশ্রয় নেন তাঁকেও এখন গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। ধূপগুড়ি থানার আইসি সুভাষ প্রধান এ প্রসঙ্গে বলেন, “বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার মামলা হয়েছে। অপর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।” ধৃতকে মদত দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পার্বতী দেবী। ধৃতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। পার্বতী দেবীর দাবি, “আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। পাগলা বাবাও ধর্ষণের চেষ্টা করেননি। সব চক্রান্ত।” |
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, লোকের মদ্যপানের নেশা থেকে যে কোনও রোগ সারাতে ঝাড়ফুঁকই ছিল ওই ব্যক্তির ওষুধ। পেটের রোগের সমস্যা থেকে জন্মান্ধতা বা মদ ছাড়াতে তার জুড়ি মেলা ভার বলে গ্রামে প্রচার চালানো হয়। রোগ সারাতে বাসিন্দাদের ওই ব্যক্তিকে নগদ টাকার পাশাপাশি কাঁচা দুধ, বিলিতি মদের বোতল উপহার হিসাবে দিতে হত। এলাকার এক ফোটোগ্রাফির দোকান থেকে নিজের ছবি তুলে ভক্তদের মধ্যে বিলি করতেন তিনি। ওই কলেজ পড়ুয়া তরুণী রোগা। ঝাড়ফুঁক করে ওই ব্যক্তি তাঁকে সুস্থ করে দেবেন আশ্বাস দিয়ে পার্বতী দেবী ঘটনার দিন তরুণীকে বাড়িতে ডেকে নেন। রাতে সেখানেই থাকার ব্যবস্থা করেন। গভীর রাতে তান্ত্রিক তরুণীর ঘরে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ। ওই তরুণীর অভিযোগ, “প্রথমে পাগলা বাবার প্রসাদ হিসাবে পায়েস খাওয়ান পার্বতী দেবী। পায়েস খেয়ে আমার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। গভীর রাতে পাগলা বাবা ধর্ষণ করার চেষ্টা করলে কোনও মতে হাতে কামড়ে দিয়ে ওই বাড়ি থেকে পালাই।” বাড়ির লোকজন পাড়া প্রতিবেশীকে ঘটনাটি জানালে এলাকায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পাগলা বাবাকে আটকে চলে জেরা। সেখানেই পাগলা বাবা অপকর্ম স্বীকার করেন বলে গ্রামবাসীদের দাবি। শালবাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মানিক দেবনাথ বলেন, “তরুণী মুখ না খুললে ওই ভণ্ড আরও অনেকের সর্বনাশ করত। ভক্তরা ছবি বাঁধিয়ে পুজোআর্চা শুরু করেছিলেন। এখন সবাই ছবি খুলে ফেলে দিচ্ছে।” বাবলু বালো নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, “ছেলের পেটে ব্যথা সারাতে ওই বাবার কাছে যাই। পনেরোশো টাকা নিয়ে কাউকে না জানাবার শর্ত দেন। কাজ না হওয়ায় ফের টাকা দিই। রোগ সারেনি।” গ্রামে একটি ফোটোগ্রাফির দোকানের মালিক গোপাল দত্ত এ দিন বলেন, “ভক্তরা এলে যাতে তার ছবি বিক্রি করা যায় সে জন্য ছবি তুলিয়েছিলেন পাগলা বাবা। ভালই বিক্রি হচ্ছিল। তার ভন্ডামি ফাঁস হতেই সেই সব বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়।” |