বেহাল জাতীয় সড়ক সংস্কারের দাবিতে মহকুমা জুড়ে লোকাল বাস ধমর্ঘটে নাকাল হলেন যাত্রীরা। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি মহকুমা জুড়ে ওই বাস ধমর্ঘটের ডাক দেয় শিলিগুড়ি মিনিবাস সিন্ডিকেট। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এনবিএসটিসি) কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত বাস চালালেও দিনভর মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছাতে ব্যবসায়ী, বাসিন্দারা নাকাল হতে হয়। সিটি অটো চলাচল করলেও সংখ্যায় কম হওয়ায় পিকআপ ভ্যান, ছোট ভাড়ার গাড়িতেও যাত্রীরা চলাচল করেন। বাস মালিকেরা এই ধমর্ঘট ডাকলেও এ দিন চটহাট, বাগডোগরা, খড়িবাড়ি রুটের অটো চালকের ধর্মঘটে অংশ নেন। বাস মালিকদের সংগঠনটির সম্পাদক মৃণালকান্তি সরকারের অভিযোগ, “বাগডোগরার বিহাড় মোড় থেকে গলগলিয়া অবধি ৩১-সি জাতীয় সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে পুরোপুরি বেহাল হয়ে পড়েছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তাটিতে রোজ ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি দুঘর্টনায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসন থেকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কোনও লাভ হচ্ছে। বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নামতে হয়েছে।” প্রয়োজনে এপ্রিল মাসে দুই দিনের ধমর্ঘট হবে বলে মৃণালবাবু জানিয়েছেন। বিহারমোড় থেকে গলগলিয়া অবধি প্রায় ৩৩ কিলোমিটার জাতীয় সড়কটি কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের অধীনে রয়েছে। কিন্তু রাজ্যের পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক বিভাগ সড়কটির দেখভাল করে। এরজন্য সমস্ত ধরণের আর্থিক সাহায্য কেন্দ্রীয় সরকার করে থাকে। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে বরাদ্দ চেয়ে বারবার আবেদন করলেও কোনও টাকা অনুমোদন করা হয়নি বলে অভিযোগ। পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক বিভাগের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নির্মল মণ্ডল বলেন, “রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ। দুই বার প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু টাকা দেওয়া হয়নি। উল্টে, সংস্কারের কিছু টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে। টাকা না পেলে আমাদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়।” |
শিলিগুড়ি মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন ২০০ উপরে লোকাল বাস যাতায়াত করে। সিটি অটো মহকুমা জুড়ে চলাচল করলেও বহু প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছানোর জন্য লোকাল বাস ছাড়া বাসিন্দাদের কোনও উপায় নেই। তার উপরে এদিন মাটিগাড়া হাট থাকায় ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে স্কুল, সরকারি অফিসে পৌঁছাতেই নিত্যযাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। বাসিন্দারা জানান, ওই রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নেপালের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ এই রাস্তা মাধ্যমেই হয়ে থাকে। তার পরেই রাস্তাটি কেন সংস্কার করা হচ্ছে না বোঝা যাচ্ছে না। বাসিন্দাদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে এনবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ এ দিন মহকুমা বিভিন্ন রুটে ৯টি অতিরিক্ত বাস চালায়। দেবীগঞ্জ, পানিট্যাঙ্কি, খড়িবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, চটহাট রুটে বাসগুলি চলে। তাও প্রয়োজনের তুলনায় তা কম ছিল বলেই যাত্রীদের অভিযোগ। এনবিএসটিসি-র শিলিগুড়ির ডিভিশনাল ম্যানেজার উত্তম গণ বলেন, “যাত্রীদের সুবিধার জন্য মহকুমা জুড়ে অতিরিক্ত ৯টি বাস নিয়ে মোট ১৫টি বাস চালানো হয়েছে। রাস্তা খারাপ অবস্থা কথা আমরাও জানি।” পূর্ত দফতরের অফিসারেরা জানিয়েছেন, গত বছর ৭ মিটারের রাস্তাটি ১০ মিটার চওড়া এবং সংস্কারের জন্য প্রায় ৪২ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়। কোনও অজানা কারণে তা অনুমোদন হয়নি। এর পরে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের পরামর্শে ৭ মিটার রাস্তাকেই পুরোপুরি সংস্কারের জন্য দুটি ভাগে প্রকল্প তৈরি করা হয়। এরজন্য গলগলিয়া থেকে পানিট্যাঙ্কি অবধি রাস্তার জন্য ১৯ কোটি এবং পানিট্যাঙ্কি থেকে বিহারমোড় অবধি ২০ কোটির প্রকল্প তৈরি করা হয়। সাত মাস আগে পাঠানো এই প্রস্তাব এখনও অনুমোদন হয়নি। |