|
|
|
|
লেভির ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
রাজ্য সরকারের তরফে সরাসরি যে লেভি সংগ্রহের কথা ছিল, তা প্রায় লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও পশ্চিম মেদিনীপুরে অন্যান্য সংস্থাগুলি এখনও লেভি-সংগ্রহে সেই পিছিয়েই। ফলে, খোলাবাজারে এখনও কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম থেকে গিয়েছে ৯০০ টাকার কাছাকাছি। যেখানে সরকার নির্ধারিত সহায়কমূল্য কুইন্টাল প্রতি ১ হাজার ৮০ টাকা। কেন এখনও চাষিরা সরকারি সহায়কমূল্য পাচ্ছেন না, কেনই বা সহায়কমূল্যে ধান কেনায় এত গড়িমসি? এ-সব প্রশ্নের অবশ্য সদুত্তর মেলেনি। খাদ্য দফতরের ব্যাখ্যা, সরকারি সময়সীমা অনুযায়ী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লেভি-সংগ্রহ করা যাবে। তার মধ্যে ধান কিনলেই হল!
চাষিদের অভিযোগ, সহায়কমূল্যে ধান কেনার কাজে যত বিলম্ব হবে ততই কম দামে ফোড়েদের কাছে ধান বেচে দিতে বাধ্য হবেন তাঁরা। কেননা তাঁদেরও নগদ টাকা প্রয়োজন। তারই সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। প্রশাসনও সক্রিয় ভূমিকা পালন না করায় প্রতি বছরই সুযোগটা পেয়ে যাচ্ছে ফোড়েরা।
যদিও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জেলা খাদ্য নিয়ামক পার্থপ্রতিম রায়ের আশ্বাস, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি সংস্থাকেই চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। যাতে এর ব্যতিক্রম না হয়, সে জন্য যে-সব সংস্থা ধান কিনছে, সেই সব সংস্থার মাস্টাররোল এবং ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট দেখা হবে। দু’টি নথি দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, চাষির কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে কি না। এটাই কঠোর ভাবে মানা হচ্ছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১ লক্ষ ৮১ হাজার মেট্রিক টন লেভি-সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে সরকার। অর্থাৎ এই পরিমাণ চাল সরকার কিনবে। স্বাভাবিক ভাবেই এর থেকে অনেক বেশি ধান কিনতে হবে। কারণ, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১ কুইন্টাল ধান থেকে ৬৬ কেজি চাল পাওয়া যায়। মোট লেভির মধ্যে ৮৫ হাজার মেট্রিক টন চাল সরাসরি সংগ্রহ করবে রাজ্য সরকার। মার্চ মাস শেষ হতে চলল, এখনও সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। এখনও পর্যন্ত ৭৬ হাজার মেট্রিক টন লেভি সংগ্রহ করা গিয়েছে। অন্য সংস্থাগুলি আরও পিছিয়ে। যেমন ইসিএসসি (অত্যাবশ্যকীয় পণ্য-সরবরাহ নিগম)। তাদের লেভি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হাজার মেট্রিক টন। এখনও পর্যন্ত মাত্র ২৬ হাজার মেট্রিক টন লেভি-সংগ্রহ করতে পেরেছে ওই সংস্থা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তেমন শিবিরও করতে পারেনি ওই সংস্থা। রাজ্য সরকারের চাপে ফেব্রুয়ারি মাসে কয়েকটি শিবির করায় যতটুকু যা কাজ হয়েছে। বেনফেডের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার মেট্রিক টন। এখনও পর্যন্ত তারা লেভি-সংগ্রহ করেছে মাত্র ৩ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন। এনসিসিএফও ৭ হাজার টনের লক্ষ্যমাত্রার জায়গায় মাত্র ১ হাজার ৬৮২ টন লেভি-সংগ্রহ করতে পেরেছে। আর কনফেড ৪ হাজার মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার জায়গায় সংগ্রহ করেছে মাত্র ৮৬৪ মেট্রিক টন!
এ ভাবেই ধীর গতিতে এগোচ্ছে লেভি-সংগ্রহের কাজ। স্বাভাবিক কারণেই খোলাবাজারে এখনও ধানের দাম হাজার ছুঁতে পারেনি। অনেক জায়গায় এমনকী ৮৭৫ টাকা কুইন্টাল দরেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। পরিবহণ খরচ করে চালকলে ধান পৌঁছে দিলে কুইন্টাল প্রতি দাম পাওয়া যাচ্ছে বড়জোর ৯০০ থেকে ৯১৫ টাকা! অথচ কুইন্টাল প্রতি সরকারি সহায়কমূল্য ১ হাজার ৮০ টাকা। কেন কুইন্টাল প্রতি প্রায় ১৮০ টাকা ক্ষতি স্বীকার করতে হবে চাষিদের? বনপুরার চাষি গোলাম মল্লিক বলেন, “দাম কমের কারণে বাড়িতেই ধান ফেলে রেখেছি। এ ভাবে আর কতদিন চলবে?” শালবনির কৃষক হরিহর পালের কথায়, “শুরুতে প্রতি বছর হইচই হয়। গুটিকয় চাষি সহায়কমূল্যে ধান বেচার সুযোগ পান। তার পর আর কেউ খোঁজ রাখেন না। এখনও চাষির ঘরে ধান পড়ে রয়েছে। বাধ্য হয়ে বহু চাষিকে সাড়ে ৮০০, ৯০০ টাকায় ধান বেচতে হচ্ছে। যে গরিব চাষি ১০ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারে, তাঁরও প্রায় ২ হাজার টাকা ক্ষতি! কারও নজর নেই।” খাদ্য দফতর আর প্রশাসন শুধু পুরনো আশ্বাসই শুনিয়ে চলেছে! |
|
|
|
|
|