|
|
|
|
নয়াগ্রামে তৃণমূলের দ্বন্দ্বে ব্যাহত জলপ্রকল্পের কাজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
প্রস্তাবিত জল-প্রকল্পের জন্য জায়গা আগেই চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর সেই জায়গা নিয়েই বিতর্ক দেখা দেয়। সামনে আসে বর্তমান শাসক তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। শাসকদলের এক গোষ্ঠী চাইছে, প্রকল্পটি অন্য জায়গায় হোক। অন্য গোষ্ঠী চাইছে, আগের নির্দিষ্ট করা জায়গাতেই প্রকল্প হোক। এর ফলে, ব্যাহত হচ্ছে জল-প্রকল্পের কাজ। অন্তত, স্থানীয় মানুষের অভিযোগ তেমনই। এই অভিযোগ অস্বীকার করছে না জেলা প্রশাসনও। ‘অচলাবস্থা’ কাটাতে জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত-র নির্দেশে মঙ্গলবার প্রস্তাবিত জল-প্রকল্পের এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন মেদিনীপুরের (সদর) বিডিও অয়ন নাথ। জেলা প্রশাসন আশা করছে, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করা যাবে।
মেদিনীপুর সদর ব্লকের মণিদহ গ্রাম-পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে নয়াগ্রাম। গ্রামের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রামসড়ক যোজনার রাস্তা। আশপাশে গড়ে উঠেছে বসতি। এই নয়াগ্রামেই আগের বাম-আমলে একটি জল-প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য একটি জায়গাও চূড়ান্ত হয়। পরে সবদিক খতিয়ে দেখে প্রকল্পটি মঞ্জুর করে রাজ্য সরকার। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহের কথা। প্রকল্পটি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর তৈরি করলেও পরে স্থানীয় গ্রাম-পঞ্চায়েতের হাতেই সেটি তুলে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট গ্রাম-পঞ্চায়েতই দেখভাল করবে। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
প্রায় বছরখানেক আগে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। পুরো প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। কয়েকটি ধাপে ধাপে এ কাজ হওয়ার কথা। স্থানীয় সূত্রে খবর, রাজ্যে পালাবদলের পরেই এই প্রকল্প ঘিরে তৃণমূলের লোকজনের মধ্যে বচসা বাধে। এক পক্ষ দাবি করে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য যে জায়গা চূড়ান্ত করা হয়েছে, তার অদূরে খাসজমি রয়েছে। সেখানেই প্রকল্প করতে হবে। অন্য পক্ষ জানায়, এ ক্ষেত্রে নতুন করে আর পরিকল্পনা তৈরির প্রয়োজন নেই। আগে যে জায়গা চূড়ান্ত করা হয়েছে, সেখানেই জল-প্রকল্প হোক। দলীয় সূত্রে খবর, যে পক্ষ নতুন করে পরিকল্পনা তৈরির দাবি জানিয়েছে তাদের বক্তব্য, আগের জায়গায় যাতায়াত সহজ নয়। পাশে যে খাসজমি রয়েছে, সেখানে প্রকল্প হলে সহজেই যাতায়াত করা যাবে। কিন্তু, প্রকল্প এলাকায় সাধারণ মানুষের যাতায়াতের কি প্রয়োজন (যেখানে বাড়ি-বাড়ি জল সরবরাহেরই পরিকল্পনা রয়েছে), সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, কিছু দিন আগে নয়াগ্রাম এলাকারই একাংশ বাসিন্দা প্রকল্পের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে লিখিত অভিযোগ জানান। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও বিষয়টি জেলা নেতৃত্বকে জানান। কেন জল-প্রকল্পের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে? মেদিনীপুরের (সদর) তৃণমূল সভাপতি দিলীপ দে বলেন, “বাধা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।” তাঁর কথায়, “স্থানীয় মানুষ চাইছেন, প্রকল্পটি পাশের অন্য একটি জায়গায় হোক। তবে যাঁরা গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের সঙ্গে আমাদের দলেরও দু’-একজন যুক্ত রয়েছেন।” ব্লক সভাপতির বক্তব্য, “বিষয়টি আমি জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।” এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের বক্তব্য, “জল-প্রকল্প হলে এলাকার সকলেই উপকৃত হবেন। এ কাজে বাধা বরদাস্ত করা হবে না।” পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, “স্থানীয় মানুষের মতামত নিয়েই এগোনো উচিত।” প্রকল্পটি হলে মাউরা, বেনাশুলি, মুচিবেরা প্রভৃতি এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলাশাসকের নির্দেশে মঙ্গলবার নয়াগ্রামে গিয়ে জল-প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখেন মেদিনীপুরের বিডিও। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন তিনি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বক্তব্য, প্রকল্পের কাজ দ্রুত হলে স্থানীয় মানুষই উপকৃত হবেন। বিষয়টি এলাকার সকলকে বুঝতে হবে। দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র মহসিন আলি খান বলেন, “সবদিক খতিয়ে দেখেই প্রকল্পের জন্য জায়গা চূড়ান্ত করা হয়েছিল।” তাঁর দাবি, কিছু সমস্যা সত্ত্বেও কাজ এগোচ্ছে। |
|
|
|
|
|