পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে তদন্ত
সিপিএম পরিচালিত হাওড়ার আমতা ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে বেশ কিছু অনিয়মের ওঠায় তদন্তের নির্দেশ দিল জেলা প্রশাসন। কয়েকটি কাজে ঠিকাদারদের বিল নিয়ে সন্দেহ দেখা দেওয়াতেই সেই সব কাজগুলির বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
হাওড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আমতা থানা থেকে পার-বরদা পর্যন্ত পিচ ঢালা রাস্তাটি মেরামত করার জন্য ২০০৯-২০১০ আর্থিক বছরে পঞ্চায়েত সমিতি বরাদ্দ করে ৪২ লক্ষ টাকা। প্রথমে রাস্তাটি তৈরি হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে। এই রাস্তা মেরামতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারেরই টাকা বরাদ্দ করার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না-আসায় পঞ্চায়েত সমিতি নিজে থেকেই কাজটি করা উদ্যোগ নেয়। টাকাও তারা বরাদ্দ করে। কয়েক জন ঠিকাদারকে তারা কাজটি করার জন্য বরাত দেয়। কাজটি শেষ হওয়ার পরে দেখা যায়, নিয়ম মেনে মেরামতির কাজ হয়নি। কাজটির গুণগত মানও বেশ নিম্ন মানের। এই কাজটির জন্য ঠিকাদারদের ইতিমধ্যে ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে দেওয়া হলেও বাকি টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর। ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ঠিক কোন তহবিল থেকে পঞ্চায়েত সমিতি কাজটির জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছিল তার স্পষ্ট উল্লেখ নেই। কিছু ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের মৌখিক ভাবে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল।
বালিচক থেকে সাহাচক পর্যন্ত মোরাম বিছানো রাস্তাটি তৈরির বিষয়েও বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। কাজটির জন্য পঞ্চায়েত সমিতি প্রায় ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কাজটি বাস্তবে নিয়ম মেনে হয়নি। অনেক জায়গায় মোরাম ফেলাই হয়নি। এই কাজটির টাকাও আটকে দেওয়া হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর।
দুর্নীতি এবং বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ব্লক প্রশাসন কার্যালয়ের একটি গুদামঘর তৈরিকে কেন্দ্র করেও। এটিও তৈরি করেছে পঞ্চায়েত সমিতি। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই ছাদ-সংলগ্ন দেওয়ালের অনেকটা অংশ ফেটে গিয়েছে। এই কাজের বিলও আটকে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে সোমেশ্বর ইকো পার্ক-এর কাজ নিয়েও। এমন মজুরদের দিয়ে কাজ করানো হয়েছে, যাঁদের অনেকের বাস্তবে কোনও অস্তিত্বই নেই।
অনিয়মের অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মানবেন্দ্রনাথ রায়। তিনি বলেন, “সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।” তাঁর দাবি, প্রতিটি কাজ নিয়ম মেনেই হয়েছে। তিনি বলেন, “আমতা থানা থেকে পার বরদা পর্যন্ত রাস্তাটির মেরামতির টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অথচ জরুরি প্রয়োজনে রাস্তাটি মেরামতির দরকার হয়েছিল। তখন সকলের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা বিভিন্ন তহবিল থেকে টাকা জোগাড় করে রাস্তাটি মেরামত করি। রাস্তাটি মেরামত হয়েছে ২০০৯ সালে। অথচ এত দিন পরে অভিযোগ উঠছে কেন বুঝতে পারছি না। ব্লক প্রশাসন কার্যালয়ের গুদামঘর তৈরি হয়েছে ব্লকেরই বাস্তুকারদের তত্ত্বাবধানে। অথচ ছাদ ফেটে যাওয়ার জন্য পঞ্চায়েত সমিতিকে দায়ী করা হচ্ছে।”
একই সঙ্গে বিডিও-র বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মানবেন্দ্রবাবু বলেন, “বিভিন্ন কাজের বিল আটকে দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারেরা এসে দরবার করছেন। অথচ কোথায় অসুবিধা, সে বিষয়ে বিডিও সরাসরি আমাকে কিছু বলছেন না। বাস্তুকারদের কাছ থেকে সব কাগজপত্র চেয়ে পাঠাচ্ছেন। কী যে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।”
মূলত যে এলাকায় রাস্তার কাজ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ, সেই রসপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা জয়ন্ত পোল্যে বলেন, “মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরাও প্রশাসনের কাছে দুর্নীতির অভিযোগ করেছি।” বিডিও অর্ঘ্য ঘোষ বলেন, “এই সব বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। সব কিছু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” অতিরিক্ত জেলা শাসক (পঞ্চায়েত) অশোক দাস বলেন, “কয়েকটি কাজের পাওনা টাকা না-পেয়ে ঠিকাদারেরা আমাদের কাছে এসেছিলেন। কী কারণে তাঁদের পাওনা মেটানো যাচ্ছে না সেই সূত্রেই সেই সব কাজ নিয়ে তদন্ত করে দেখার জন্য বিডিও-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.