নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আনা মামলা তুলে নিল ডানলপ।
রাজ্য সরকার ডানলপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারে এমন আশঙ্কা করেছিলেন ডানলপ কর্তৃপক্ষ। তা ঠেকাতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও করেন তাঁরা। সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট ডানলপে লিকুইডেটর নিয়োগ করায় এবং রায়ে অত্যন্ত কড়া ভাষায় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করায় মঙ্গলবার ডানলপ রাজ্য সরকার সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করে আনা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। এ দিন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগামী মঙ্গলবার থেকে ডানলপের কাছে যে ১২টি সংস্থা কয়েক কোটি টাকা পায়, তাদের দায়ের করা মামলার শুনানি শুরু হবে। লিকুইডেটর নিয়োগ করার বিরুদ্ধে ডানলপের আনা স্থগিতাদেশও খারিজ করেছে হাইকোর্ট।
সোমবারের রায়ে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, হাইকোর্ট শ্রমিকদের বঞ্চিত করা কিছুতেই মেনে নেবে না। দীর্ঘদিন ডানলপ কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের প্রাপ্য এবং বিভিন্ন সংস্থার বকেয়া মেটাননি। ডানলপের অন্যতম আইনজীবী অতনু রায়চৌধুরী বলেন কোম্পানি হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানিয়েছে, বর্তমানে সাহাগঞ্জে ৮৫০ ও অম্বাত্তুরে ৫৫০ জন কর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছেন, ১০০ জন ম্যানেজারিয়াল ও প্রশাসনিক কর্মী। ২০১১ সালের পর থেকে তাঁরা বেতন পাননি। রাজ্য সরকার জানিয়েছে ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ওই কর্মীদের মাসে ১৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। সরকার আদালতকে জানিয়েছে ৩৪১ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী কোনও বকেয়াই পাননি। ২৮৭ জন প্রাক্তন কর্মী, যাঁদের অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছিল তাঁদেরও একই অবস্থা।
অন্য দিকে, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ডানলপের কাছে প্রাপ্য ১১.২০ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমের প্রাপ্য ১৪ কোটি। ভুমি সংস্কার দফতর পায় ৭.৯৫ কোটি টাকা। বিক্রয় কর হিসাবে রাজ্যের পাওনা ৪০ কোটি টাকা। বিচারপতি রাজ্য সরকারের জানানো এই সব তথ্য উল্লেখ করে তাঁর রায়ে বলেছেন, “এক সময় ডানলপ ছিল এই রাজ্যের একটি গর্ব করার মতো প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখন সেই প্রতিষ্ঠান কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর হাতে। যাদের একমাত্র মানসিকতা ঋণদাতা ও শ্রমিকদের বঞ্চিত করে ডানলপের সম্পদ হস্তগত করা। আদালত এ ক্ষেত্রে নীরব থাকতে পারে না। তাই লিকুইডেটর নিয়োগ করা হল। যে লিকুইডেটর পূর্ণ কতৃত্ব নিয়ে কাজ করবে। এর পরে যেন কোনও ভাবেই ডানলপ কর্তৃপক্ষ কোনও স্থাবর সম্পত্তি যাতে হস্তগত করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে লিকুইডেটরকে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের, ঋণদাতাদের এবং জনস্বার্থ রক্ষা করতে হবে। বিক্রি হয়ে যাওয়া সম্পদ উদ্ধারের কাজও করতে হবে।”
ডানলপ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের এই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশের আবেদন করেছিলেন। বিচারপতি সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেছেন, ডানলপ কর্তৃপক্ষের মানসিকতার প্রমাণ আদালত দেখেছে। তার পরে এই ২০০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি আর তাদের এক্তিয়ারে রাখা যায় না। রুইয়া গোষ্ঠী অবশ্য জানিয়েছেন, রায় ভাল ভাবে খতিয়ে দেখার পর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন, কী ভাবে আপিল করা হবে। |