সম্পাদকীয় ২...
মুক্তির উপায়
পন সিংহ পরিচালিত ‘জতুগৃহ’ চলচ্চিত্রে (১৯৬৪) স্ত্রী ও স্বামীর মানসিকতা ভিন্ন হইবার কারণে, জীবনের প্রতি প্রত্যাশায় মিল না হইবার কারণে, তাহাদের জীবনে একত্রবাস যে অসহনীয় হইয়া উঠিতে পারে, তাহা দেখানো হইয়াছিল। সেই ছবির বয়স প্রায় অর্ধ শতক হইল। কিন্তু দেশের আইন বাস্তবজীবনের সহিত প্রায়শই সমান্তরাল ভাবে চলে না। সম্প্রতি বিবাহ বিচ্ছেদ আইন সংশোধন করিয়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ‘দাম্পত্যে চূড়ান্ত ভাঙন’কে (ইরিট্রিভেবল ব্রেকডাউন অব ম্যারেজ) বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে গ্রহণ করিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে। সেই সঙ্গে বিচ্ছেদের পর স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর অধিকার স্বীকৃত হইয়াছে, এবং পারিবারিক সম্পত্তির উপর দত্তক সন্তানদের সমান অধিকারও বৈধতা পাইয়াছে। এই পরিবর্তনগুলি বহু পূর্বেই হওয়া উচিত ছিল। দাম্পত্য যে মূলত দুই ব্যক্তির স্বেচ্ছানির্মিত সম্পর্ক, সেই সম্পর্ক যদি কার্যকর না হয়, তাহাই যে বিচ্ছেদের যথেষ্ট কারণ হইতে পারে, কোনও একটি পক্ষের নির্যাতন-উদাসীনতার প্রমাণ খুঁজিবার প্রয়োজন নাই, তাহাও অবশেষে স্বীকৃত। স্বভাবতই অনেকে উদ্বিগ্ন দাম্পত্যের গুরুত্ব কি কমিয়া যাইতেছে? দুই পক্ষের সহমতের অভাব হইলে অন্তত ছয় মাস অপেক্ষার যে বিধান ছিল, তাহা সংশোধনের পর আর আবশ্যক হইবে না, ইহাও হয়তো চিন্তার কারণ। কিন্তু বিচ্ছেদ-প্রক্রিয়াকে প্রলম্বিত করিয়া বিবাহের গুরুত্ব বাড়ানো অনুচিত। বিচ্ছেদ সময়সাধ্য ও ব্যয়বহুল বলিয়াই যদি একত্র থাকিতে হয়, সেই অসহায় সহ-বাস ‘দাম্পত্য’ নহে, দাম্পত্যের অভিনয়। সময় কমাইয়া ভুল হয় নাই।
দাম্পত্যে ভাঙনের অভিযোগ করিবে কে, সেই বিষয়ে মহিলাদের একটু বিশেষ সুবিধা দেওয়া হইয়াছে। স্বামী অভিযোগ আনিলে স্ত্রী বিরোধিতা করিতে পারেন, কিন্তু স্ত্রী ভাঙনের যুক্তিতে বিচ্ছেদের মামলা করিলে স্বামীর আপত্তির সুযোগ নাই। ইহা আপাতদৃষ্টিতে অসম ব্যবস্থা। কিন্তু সামাজিক সত্য ইহাই যে, আর্থ-সামাজিক কারণে এবং মানসিক কারণে সংসারের উপর মহিলাদের নির্ভরতা পুরুষদের তুলনায় অধিক। কর্মরত মহিলারাও সংসার এবং সন্তানদের জীবনের এবং আত্মপরিচয়ের কেন্দ্রে রাখেন। তৎসহ, গৃহও তাঁহাদের নিকট একটি বাস্তব সমস্যা বিবাহের পর শ্বশুরবাড়ি ছাড়িতে হইলে বাপের বাড়িতে সন্তান-সহ কোনও মহিলা কী করিয়া, কোন শর্তে থাকিবেন, তাহা লইয়া নানা সমস্যা দেখা দিয়া থাকে। স্বামীর সহিত সুখী ও সার্থক সম্পর্ককেই মহিলারা মুখ্য বিবেচ্য বলিয়া দেখিবেন, এমন না-ও হইতে পারে। এই পরিস্থিতিতে স্বামী দাম্পত্যে ভাঙনের অভিযোগ আনিলে স্ত্রীকে প্রতিবাদের সুযোগ দিয়া আইন মহিলাদের এই সংকটের স্বীকৃতি দিয়াছে। ইহা মহিলাদের প্রতি অতিরিক্ত সদয় হইবার নিদর্শন নহে, উভয় পক্ষের ঝুঁকিতে সাযুজ্য আনিবার প্রয়াস। মহিলাকে কেবল খোরপোশ-প্রার্থী করিয়া না রাখিয়া তাঁহাকে সম্পত্তির অধিকার দিবার কাজটিও মহিলার অধিক সংকটের স্বীকৃতি। আদর্শ সমাজে কোনও একটি পক্ষের প্রতি এই ধরনের ‘পক্ষপাত’ নিশ্চয়ই কাঙ্ক্ষিত নয়। কিন্তু নারী ও পুরুষের আপেক্ষিক অবস্থানের বিচারে ভারতীয় সমাজ, আর যাহাই হউক, আদর্শ নহে। ইহার পরেও একটি সঙ্গত প্রশ্ন উঠিতে পারে। নারীর জন্য নির্ধারিত বিশেষ সুযোগ বা রক্ষাকবচ ক্ষেত্রবিশেষে ব্যক্তি-পুরুষের প্রতি অবিচারের কারণ হইয়া দাঁড়াইবে না কি? সেই আশঙ্কা অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রশাসন এবং বিচারবিভাগ দক্ষ ও নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করিলে সেই বিপদ এড়ানো অসম্ভব নহে। সুতরাং, সংশোধিত আইন এই দুই বিভাগের উপর বাড়তি দায়িত্ব আরোপ করিল। সুশাসনের দায়িত্ব। এবং সুবিচারের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.