|
|
|
|
সাক্ষাত্কার ... |
অন্য পক্ষ অবৈধ, আমিই শুধু বৈধ,
এই যুক্তি দিয়ে গণতন্ত্র চলতে পারে না |
কারণ, গণতন্ত্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বিশ্বাস করে না। শাসক এবং বিরোধী, দু’পক্ষের মধ্যে
একটা পারস্পরিক আস্থা দরকার। ভারতে সেই বিশ্বাসের কোনও পরিসরই তৈরি হয়নি।
সংকট সেটাই। বলছেন সমাজতাত্ত্বিক আন্দ্রে বেতেই। তাঁর সঙ্গে কথায় শোভন তরফদার |
এক দিকে সরকার, অন্য দিকে বিরোধী। রাজ্যেই বলুন, বা কেন্দ্রে। ভারতের মতো প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে এদের পারস্পরিক সম্পর্ক ঠিক কী ধরনের হওয়া উচিত? প্রশ্নটা পুরনো, কিন্তু সম্প্রতি নানা ঘটনায় এই বিষয়ে একটা আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
আমার মতটা খুব পরিষ্কার। গণতন্ত্র কোথাও সফল হবে কি না, সেই প্রশ্নটার জবাব শুধু সরকারের কাছেই দাবি করলে হবে না, বিরোধীদের কাছেও দাবি করতে হবে। অর্থাৎ, গণতন্ত্রের সাফল্যের পিছনে দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, সমপরিমাণে বিরোধীদেরও। শুধু পারস্পরিক দোষারোপে কিছু হওয়ার নয়, হয়ও না। একটা দায়িত্ব নিতে হবে। সমস্যাটা হল, সরকার ও বিরোধীদের যে সম্পর্কটা গড়ে ওঠা উচিত, যে কোনও কারণেই হোক, ভারতে এখনও তা দেখা যায়নি, ফলে গণতন্ত্রও সে ভাবে দানা বাঁধেনি এ দেশে। কোনও অপ্রীতিকর কিছু ঘটে গেলেই সরকার তৎক্ষণাৎ এক রকম ভাবে দায়িত্ব এড়াতে চায়, বিরোধীরাও ঝাঁপিয়ে পড়ে দ্রুত। খেয়াল রাখা ভাল, আমি কিন্তু বিশেষ কোনও দলীয় বা জোট সরকারের কথা বলছি না। দলমতনির্বিশেষে এটাই হল সরকার আর বিরোধী পক্ষের চরিত্র, যা স্বাধীনতার পর থেকেই এই দেশ দেখে এসেছে। সরকার আর বিরোধীদের মধ্যে বিচিত্র একটা পারস্পরিক অবিশ্বাস।
আপনি একটা দৃষ্টান্ত দিয়ে বললেন, কিছু ঘটলেই সরকার দায়িত্ব এড়াতে চায়, বিরোধীরাও ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু, সরকারকে দায়িত্ব এড়াতে দেখলে বিরোধীরা ঝাঁপিয়ে পড়বেই। সেটাই স্বাভাবিক নয় কি?
ঠিকই, স্বাভাবিক, কিন্তু ঠিক কী অর্থে ‘স্বাভাবিক’, সেটাও একটু তলিয়ে দেখা দরকার। সরকারের ত্রুটি দেখলে বিরোধী পক্ষ সমালোচনা করবেই। কিন্তু, সেই সমালোচনার চরিত্র কী হবে? আমি এই প্রসঙ্গে প্রয়াত নেতা, ভারতের একদা অর্থমন্ত্রী শ্রীমধু দন্ডবতের লেখা একটি প্রবন্ধের কথা উল্লেখ করতে চাই। প্রবন্ধটির নাম: দ্য রোল অব দ্য লিডার অব দি অপোজিশন ইন আ ডেমোক্র্যাসি। সেখানে উনি ইংল্যান্ডের তুলনা টেনেছেন। ইংল্যান্ডে বিরোধী পক্ষকে বলা হয়, হার ম্যাজেস্টিজ লয়্যাল অপোজিশন। তার মানে এই নয় যে, বিরোধী পক্ষকে সরকারের অনুগত হতে হবে। দি অপোজিশন ডাজ নট হ্যাভ টু বি লয়্যাল টু দ্য গভর্নমেন্ট, বাট টু হার ম্যাজেস্টি। বোঝা যাচ্ছে, কী বলতে চাইছি? বিরোধী পক্ষেরও একটা আনুগত্য থাক, সরকারের প্রতি নয়। টু হার ম্যাজেস্টি। মহারানির প্রতি। অর্থাৎ, দেশের প্রতি। এই জিনিসটা খুবই প্রয়োজন এবং এটা স্রেফ ছিদ্রান্বেষণ দিয়ে চলে না। এখানে সে রকম কোনও আনুগত্য নেই। আছে কী? নিতান্ত গ্রামের দলাদলি। ফ্যাকশনালিজম। গোষ্ঠীবাজি। গণতন্ত্র কিন্তু সে ভাবে চলে না।
অর্থাৎ, গণতন্ত্রে আপনি যাকে আনুগত্য বলছেন, সেখানে সরকার এবং বিরোধীদের দু’তরফের মধ্যে একটা পারস্পরিক আস্থা থাকা দরকার যে, যা করছি, তা আসলে বৃহত্তর কোনও স্বার্থে। নিছক একে অন্যের অস্বস্তি এবং বিরক্তি উৎপাদনের জন্য নয়।
যে কোনও শাসনব্যবস্থার মধ্যে বিরোধী থাকবেই। বিরোধী থাকবে না, তা হয় না। হতে পারে না। কিন্তু, এটাই গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য যে সে কোনও পক্ষকে শাসনভার দিয়ে তার বিরোধী পক্ষকেও মেনে নেয়, তার বিরোধিতা করার অধিকারকে মেনে নেয়। প্রকৃতপক্ষে বিরোধিতার পুরো স্পেসটাকেই, পরিভাষায় বললে, ‘ইনস্টিটিউশনালাইজ’ করে দেয়, তার একটা স্থান থাকে, রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক বৈধতা থাকে অন্য স্বর, অন্য যুক্তি তোলার, তাকে জনসমক্ষে পেশ করার।
বৈধতার কথা এল। সরকার এবং বিরোধীদের মধ্যে আপনি যে পারস্পরিক অবিশ্বাসের কথা তুললেন, সেখানে একটা প্রবণতা খুব স্পষ্ট। যেন, একে অন্যের প্রতিটি পদক্ষেপকে ক্রমাগত অবৈধ প্রতিপন্ন করতে চাইছে। এবং, এই ভাবে নিজের বৈধতাটুকুও প্রতিপন্ন করার চেষ্টা স্পষ্ট।
প্রশ্নটা হল, টু হুম ইজ দ্য গভর্নমেন্ট লয়াল? টু হুম ইজ দি অপোজিশন লয়াল? এ দেশে এই প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব কি আমরা জানি? একটা বিশ্বাস দরকার। পারস্পরিক বিশ্বাস। মনে রাখা ভাল, আগে কিন্তু পার্টি ছিল না। এমনকী, উনিশ শতকের আগে ইংল্যান্ডেও পার্টি ছিল না। তার পর যখন ‘হুইগস’ অ্যান্ড ‘টোরিজ’ ভাগ হয়ে তৈরি হল কনজারভেটিভ পার্টি আর লিবারাল পার্টি, তারা নিজেদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া করে নিল। সেটা এই রকম যে, এখন আমরা সরকারে আছি, তোমরা বিরোধিতা করো, কিন্তু খানিকটা শান্তিতে অন্তত সরকারটা চালাতে দাও। পাঁচ বছর পরে তোমাদের পালাও আসতে পারে। তখন তোমরা শাসন কোরো, আমরা বিরোধী আসনে বসব। এই বোঝাপড়াটাই এখানে নেই। অথচ এটা খুব জরুরি। সরকার আর বিরোধীদের মধ্যে এই বোঝাপড়াটা জরুরি যে, তোমরা তোমাদের দায়িত্ব পালন করো, কিন্তু এটা বুঝতে চেষ্টা করো যে আমরাও আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। তোমরা ঠিক ভাবে তোমাদের দায়িত্ব পালন করলে পরের বার তোমরাও এই আসনে বসতে পারবে। |
|
শাসক ও বিরোধী। রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিদায়ী
মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকে নয়া মুখ্যমন্ত্রীর অভ্যর্থনা। ২০ মে, ২০১১ |
এই পারস্পরিক আস্থাটা আসে কোথা থেকে?
আসে গণতন্ত্রের উপর একটা গভীর আস্থা থেকে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপরে একটা আস্থা থেকে। কিন্তু, এখানে কেউই কাউকে বিশ্বাস করে না। সবাই ভাবছে, যে ভাবে পারি অন্যদের সরিয়ে না দিলে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারব না। ইটস আ ল্যাক অব ট্রাস্ট ইন ডেমোক্র্যাসি ইটসেলফ। সবারই মনে রাখা দরকার যে, গণতন্ত্রে কোনও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেই। থাকা সম্ভবও নয়। যদি বিশ্বাস করি, আমরাই চিরকালের জন্য, তা হলে আমরা আর যা-ই হোক, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি না। কারণ, গণতন্ত্র জনাদেশকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। জনতাই সেখানে নিয়ন্তা। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ভাবনা, সে যে আকারেই হোক না কেন, গণতন্ত্রের সেই মৌলিক ধাঁচটারই বিরোধী। একই ভাবে, দেশের জন্যে শুধু আমরাই ভাবছি, অন্যরা কেউ কিছু করছে না, বা করে না, সেই ভাবনাটাও একই রকম গোলমেলে। দেশের হিতসাধন আমরা ছাড়া আর কারও দ্বারা সম্ভব নয়, এটা ভাবলে আসলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দিকেই ঝোঁকটা যাবে। তাতে সমস্যা শুধু অন্যের নয়, খতিয়ে দেখলে নিজেরও।
কী ভাবে?
কারণ, এই ধরনের ভাবনা আসলে আত্মঘাতী। কেন আত্মঘাতী, বলি। ইটস নট ওনলি ডিলেজিটিমাইজিং দ্য গভর্নমেন্ট, ইট’স অলসো ডিলেজিটিমাইজিং ইয়োরসেলফ। কারণ, আমরা তো একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকেই যাত্রা শুরু করেছিলাম, এবং সেই গণতান্ত্রিক আবহটাকেই রক্ষা করার কথা বলছি। ফলে, যে মুহূর্তে আমি অন্যকে অবৈধ প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালাব বিরোধীরা সরকারকে, বা সরকার পক্ষ বিরোধীকে দু’দিক থেকেই কিন্তু এই ব্যাপারটা আসলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটাকেই অবৈধ প্রতিপন্ন করতে চায়। এর ফলে কী হয়? অণ্ণা হজারেরা ঢুকে পড়ে। ভেবে দেখা দরকার গণতন্ত্রের লোকাসটা কী হবে? রামলীলা ময়দান না সংসদ? পশ্চিমবঙ্গের কথা যদি ভাবি, তা হলে সেটা ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড নাকি বিধানসভা?
অণ্ণা তো ফের আন্দোলন শুরু করেছেন। সরকারের উদ্দেশে নানা রকম হুমকি দিয়েছেন, সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন।
প্রশ্নটা হচ্ছে, অণ্ণার প্রতি লোকে কেন এত আকৃষ্ট হল? লোকজন তো সরকারকে সারাক্ষণ গালমন্দ করেন। তার মানে কি এই যে তাঁরা বিরোধী পক্ষকে বিশ্বাস করেন? মোটেই না। আমজনতা কাউকেই বিশ্বাস করে না। এদেরও না, ওদেরও না। ফলে, একটা ফাঁক তৈরি হয়। কোনও দলই মানতে প্রস্তুত নয় যে, অন্যদেরও দায়িত্ববোধ আছে। সরকার ভাবে, বিরোধীদের হাতে গেলে দেশটা গোল্লায় যাবে। বিরোধীরা ভাবে, সরকার দেশটাকে গোল্লায় দিচ্ছে। এটাই, আমার মতে, গণতন্ত্রের সংকট। এই সূত্রে একটা ঘটনার কথা বলি। সরকার এবং বিরোধীদের মধ্যে এই পারস্পরিক বিশ্বাসের সূত্রে কথাটা আসে। এই বিশ্বাসটা, আমি মনে করি, সব থেকে ভাল দেখা যায় ইংল্যান্ডে। আমার মনে আছে, ১৯৯৭-এর যে সাধারণ নির্বাচনে জন মেজরের নেতৃত্বে কনজারভেটিভ পার্টি হেরে গেল, টোনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টির কাছে, সেই সময়ে, মানে একেবারে ভোটের ফল ঘোষণার দিনেই আমি লন্ডনে পৌঁছেছিলাম। বেশ ভোরবেলাই পৌঁছলাম হিথরো, আমার এক বন্ধু সেখানে অপেক্ষা করছিলেন, তিনি আমাকে আর এক জনের বাড়িতে নামিয়ে কাজে যাবেন। আমি সেখানেই থাকব। সেই বাড়ির গৃহকর্তা এবং গৃহকর্ত্রী সারা রাত ঘুমোননি। সারা রাত ধরে ভোটের ফল ঘোষণা চলেছে, ওঁরা শুনেছেন। তখন আটটা সাড়ে আটটা মতো বাজে। ততক্ষণে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, কনজারভেটিভরা হারছে, ব্লেয়ারই জিতছেন। আমার সব থেকে অবাক লাগল দেখে যে, সকাল দশটার মধ্যে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জন মেজর সমস্ত বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট ছেড়ে চলে গেলেন। গেলেন কোথায়? না, লর্ডসে ক্রিকেট খেলা দেখতে! এই জিনিস আমাদের এখানে সম্ভব? ধরা যাক, শাসক পক্ষ এখানে ভোটে হেরে গেলেন। তাঁরা মনে করতেই পারেন যে, ঠিক আছে, আমরা হেরে গেছি, তোমরা এসেছ, কিন্তু তা বলে তোমরা আসার ফলেই দেশটার সর্বনাশ হল, এ রকম ভাবার তো কোনও অর্থ হয় না। এটা যদি কেউ ভাবেন, তা হলে বলব যে, তিনি বা তাঁরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেই বিশ্বাস করেন না। আমি আদৌ কোনও বিশেষ দলের কথা বলছি না। এটা আসলে ভারতীয় গণতন্ত্রের একটি ব্যাধি। কোনও দলই এই ব্যাধির গ্রাস থেকে মুক্ত নয়।
আপনি যে পারস্পরিক আস্থার কথা বলছেন, সেই আবহটাই কি এ দেশে তৈরি হয়েছে ঠিক মতো?
আমি তো সেটাই বলছি। তৈরি হয়নি। কেন হয়নি, সেটা বুঝতে গেলে ইতিহাসটা একটু খতিয়ে দেখা দরকার। এই যে একটা বিচিত্র বিশ্বাসের অভাব, এটা কেন হল? আমি বলব, এই সূত্রে কংগ্রেসের ভূমিকাটাও একটু খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের যাকে বলে, একটা ইউনিক ভূমিকা আছে। যে ভাবে স্বাধীনতা এল এ দেশে, তাতে দেশের সিংহভাগ নাগরিকই ভাবলেন যে, কংগ্রেসই দেশে স্বাধীনতা এনেছে। পরিস্থিতি বিচারে মনে করাই যায় যে এই ভাবনাটা যে বিরাট ভুল কিছু, তা নয়। তখন কংগ্রেসের বিরোধী বলতে ছিল মুসলিম লিগ। স্বাধীনতার ঠিক পরেই আবহটা এমন হল যেন মুসলিম লিগ বিদায় হয়েছে, ভাল হয়েছে। আমি আমজনতার দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলছি। অনেকেই বিশ্বাস করতেন না যে, মুসলিম লিগ কোনও ভাল কাজ করতে পারে। কারা থাকল? হিন্দু মহাসভা। তাদেরও বিশ্বাসযোগ্যতা ততটা এল না, কারণ তাদের পরিচয়টা ছিল কার্যত মুসলিম লিগের এক ধরনের উল্টো পিঠ। কাউন্টারপার্ট। আর থাকলেন বামপন্থীরা। জাতীয়তাবাদীরা কমিউনিস্টদেরও বিশ্বাস করলেন না। ভাবলেন, এই বামপন্থীরা দেশের প্রকৃতিটা আদৌ ভাল ভাবে জানেন না, এঁরা আসলে রাশিয়ার, বা চিনের অঙ্গুলিহেলনে চলেন। আমি কিন্তু এ সবের ঠিক-ভুল বিচার করছি না, আমি একটা বিশেষ দৃষ্টিকোণের কথা বলছি। কিন্তু, এই জাতীয় নানা ধারণার ফলে সংকট হল এই যে, দেশে বিরোধিতার পরিসরটা প্রায় থাকল না বললেই চলে।
অর্থাৎ, গঠনমূলক বিরোধিতার পরিসরটা স্বাধীন ভারতের জন্ম থেকেই সঙ্কুচিত?
এটা সম্পূর্ণ ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত থেকে বলছি। স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের ভূমিকাটা খেয়াল করা উচিত। কংগ্রেস খুবই প্রাচীন দল। লেবার পার্টির থেকেও পুরনো। ফলে, এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের অবদানও বিপুল। সুতরাং তাদের একটা আত্মবিশ্বাস আছে যে, দেশটা গড়েছি আমরা। বিলেতে কনজারভেটিভ পার্টি কিন্তু এটা বিশ্বাস করে না। তাদের এ ধরনের বিশ্বাস গড়ে ওঠার কোনও প্রেক্ষিতও নেই। ফলে, আমাদের হাত থেকে বেরিয়ে গেলে দেশটা আর চলবে না, এমন কোনও ধারণাও গড়ে উঠতে পারেনি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ডেমোক্রাসি হ্যাজ কাম টু স্টে ইন ইন্ডিয়া। ইন্দিরা গাঁধী এটা জরুরি অবস্থার কয়েক মাসের মধ্যেই বুঝে গিয়েছিলেন। রামচন্দ্র গুহ লিখেছিলেন, ভারতে ষাট শতাংশ গণতন্ত্র আছে। এ রকম ভাবে মাপা যায় কি না, জানি না। আমি ওঁকে বলেছিলাম, হিসেবটা একটু বদলে নাও, ভারত আসলে পঁয়তাল্লিশ শতাংশ গণতন্ত্র। আমি শঙ্কিত হব, যদি এটা চল্লিশের নীচে নেমে আসে। |
|
|
|
|
|