নতুন করে বিমানের আসন-বিন্যাস শুরু করেছে কিংফিশার। এয়ারবাস-৩২০ বিমানে আগে যেখানে অন্তত ২০-২৫টি প্রথম শ্রেণির আসন থাকত, এখন সেখানে থাকবে মাত্র ৮টি। দামি আসনে পর্যাপ্ত যাত্রী না পেয়েই এই সিদ্ধান্ত। বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ) কিংফিশারের কাছে জানতে চেয়েছিল, তারা কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। উত্তরে এই কথা জানিয়েছে কিংফিশার।
সংস্থার এক কর্তার কথায়, “বড় বিমান বলতে আমরা এখন শুধু এয়ারবাস-৩২০ চালাব। সেগুলির আসন পুনর্বিন্যাস চলছে। অনেক বেশি টাকায় ভাড়া নেওয়া এই বিমানগুলির মধ্যে কয়েকটি ফেরত পাঠানোও হচ্ছে। আগে ঠিক ছিল গ্রীষ্মকালীন উড়ানসূচিতে মোট ১৭টি বিমান চলবে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরও তিনটি এয়ারবাস-সহ মোট ১২টি এয়ারবাস-৩২০ এবং ৮টি ছোট এটিআর বিমান চালানো হবে।” এই ২০টি বিমানের সাহায্যে আপাতত রোজ ১২০টি উড়ান চালাবে কিংফিশার। মঙ্গলবার প্রকাশিত কিংফিশারের নয়া গ্রীষ্মকালীন উড়ানসূচিতে কলকাতার পাশাপাশি রাঁচি, পটনা, ভুবনেশ্বর, রায়পুর, বাগডোগরা এবং আইজলের নাম নেই। সংস্থা সূত্রে খবর, হায়দরাবাদ-আমদাবাদ থেকেও উড়ান বন্ধ হচ্ছে। যে সব শহর থেকে উড়ান তুলে নেওয়া হল, সেখানকার কর্মীদের ফের উড়ান চালু না হওয়া পর্যন্ত বেতনহীন ছুটি নিতে বলা হয়েছে।
সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকাশ মীরপুরী বলেছেন, “এটা সাময়িক পরিকল্পনা। মূলধন এলেই নয়া উদ্যমে ঝাঁপানো হবে। বকেয়া বেতন মেটানো হবে।” কিন্তু আশ্বাসে চিঁড়ে ভিজছে না। ইতিমধ্যেই পাইলট, বিমানসেবিকা-সহ অনেকেই অন্যত্র চাকরির দরখাস্ত করছেন। অভিযোগ, অনেকে কম বেতনে অন্যত্র চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এক কর্মীর কথায়, “তিন মাস বেতন পাইনি। এখন বেতনহীন ছুটির কথা বলা হয়েছে। সঞ্চয় ভেঙে এখন সংসার চলছে। এর পরে কী হবে?”
মূলধনের ‘উৎস’ নিয়ে কর্মীরাও বিভ্রান্ত। কলকাতায় প্রায় ২৫০ কর্মী ছিলেন। ২৫ তারিখ থেকে উড়ান তুলে নেওয়ার পরে মাত্র ৫-৬ জন অফিসে আসছেন। যাঁরা আগে থেকে কিংফিশারের টিকিট কেটেছিলেন, তাঁদের টিকিট বাতিল করে টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। কিংফিশার কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের উড়ান বাতিল হলে যাত্রীদের অন্য বিমানে পাঠানোর ব্যাপারে কিছু বিমানসংস্থার তাঁদের চুক্তি ছিল।
কিংফিশারের দুরবস্থা শুরু হতেই সেই বিমানসংস্থাগুলি চুক্তি থেকে সরে গিয়েছে। মীরপুরী জানিয়েছেন, কিংফিশার কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে বিদেশি লগ্নি নিয়ে কেন্দ্রের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপরে। ব্যাঙ্ক থেকে প্রতি দিনের খরচ চালানোর মতো কার্যকরী মূলধন পাওয়াও জরুরি বলে তাঁরা মনে করছেন। তা ছাড়া, বেঙ্গালুরুর আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনাল-এর নির্দেশ মেনে ২৭ মার্চের মধ্যে ৪৪ কোটি টাকা কর মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও মীরপুরী এ দিন জানিয়েছেন। |