আইনি বিবাদের শনি পিছু ছাড়ছে না হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের। রাজ্যের অন্যতম শো-পিস সংস্থার সাম্মানিক চেয়ারম্যান হিসেবে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নিয়োগের দিনই এসেছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন’-এর (আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত) নোটিস। বাদী চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। বিবাদী রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম, রাজ্য সরকার ও হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস। মামলার বিষয়, সংস্থার মূল মালিক কে।
মালিকানা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দু’পক্ষেরই দাবি, সংস্থার উন্নতির লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করতে কোনও অসুবিধা নেই। সেই সূত্রেই ১২৮ কোটি টাকার ঋণ শেয়ারে পরিণত করার অনুমোদন দিয়েছে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের পরিচালন পর্ষদ। ফলে সংস্থার ঋণের বোঝা কিছুটা কমল। বাড়ল নিট সম্পদের পরিমাণ। এবং সাময়িক ভাবে এড়ানো গেল বিআইএফআর-এ হিসেব পেশ করার দায়।
মালিকানা ঘিরে নানা বিবাদের কারণে গত ৭ বছর ধরে সংস্থার লাভ-ক্ষতির হিসেব পরিচালন পর্ষদের অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়নি। এ দিন সেই সব হিসেব অনুমোদন করে পরিচালন পর্ষদ।
মঙ্গলবার রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের দফতরে বেলা এগারোটা থেকে পরিচালন পর্ষদের বৈঠক হয়। বৈঠকের মাঝে এক ঘণ্টার জন্য বিধানসভায় যান শিল্পমন্ত্রী। যাওয়ার সময়ে জানিয়ে যান, “আমি সংস্থার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি।” এ দিন ভোটাভুটির মাধ্যমে পার্থবাবু স্থায়ী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এমনিতে সংস্থার ‘আর্টিক্ল অফ অ্যাসোসিয়েশন’ অনুযায়ী সংস্থার স্থায়ী চেয়ারম্যান পদের নিয়োগ সবর্সম্মতিক্রমে হতে হবে। কিন্তু সকলেই এক মত হওয়ায় পরিচালন পর্ষদ ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচনের পক্ষে রায় দেয়। পার্থবাবু জানান, তাঁর পক্ষে ন’টি ভোট পড়েছে। ৩টি বিপক্ষে। ১৫ জনের পরিচালন পর্ষদে তিন জন অনুপস্থিত ছিলেন।
|
আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত কী |
•
আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত হল প্যারিসের আন্তর্জাতিক বণিকসভার অংশ। মালিকানা নিয়ে বিরোধ মেটাতে এর দ্বারস্থ হয় বিভিন্ন সংস্থা। •
মধ্যস্থতাকারী ঠিক করার স্বাধীনতা রয়েছে দু’পক্ষেরই। তবে এ নিয়ে মতানৈক্য থাকলে, তা ঠিক করবে আদালত। •
কোথায়, কোন ভাষায় এবং কোন দেশের আইন মেনে এই মামলা হবে, তা-ও ঠিক করতে পারবে দু’পক্ষ। •
সম্পদ বিক্রির মতো বিষয়ে স্থগিতাদেশ চাওয়া যাবে। |
|
২০১১-য় ভোটের পর পরই বণিকসভা সিআইআই-এর তৎকালীন মেন্টর তরুণ দাস হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস-এর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তার পর থেকে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর প্রধান পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় পরিচালন পর্ষদের বৈঠকগুলিতে অস্থায়ী চেয়ারম্যানের ভূমিকা পালন করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, পার্থবাবুর স্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগের ফলে আশ্বস্ত হয়েছে ব্যাঙ্কগুলি ও সংস্থার কর্মীরা।
এ দিন বিকেল চারটে পর্যন্ত বৈঠক চলে। বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে একসঙ্গে ছবি তোলার জন্য দাঁড়ালেও, বৈঠক প্রসঙ্গে কোনও কথা বলেননি পূর্ণেন্দুবাবু। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই সংস্থায় সিংহভাগ মালিকানা কার, তা জানতে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। গত ২১ মার্চ ইন্টারনেটে আবেদন করার পরের দিন, ২২ মার্চ তারা কাগজপত্র জমা দিয়েছে। সংস্থার ‘আর্টিক্ল অফ অ্যাসোসিয়েশন’ অনুযায়ী মালিকানা নিয়ে বিবাদ হলে যে কোন পক্ষই এই আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারে।
এ দিনের বৈঠকে সংস্থা চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে বহু দিনের ফেলে রাখা পদক্ষেপ করেছে পরিচালন পর্ষদ। বৈঠক শেষে ম্যানেজিং ডিরেক্টর পার্থ ভট্টাচার্য জানান, ১২৮ কোটি টাকা ঋণ শেয়ারে পরিণত করার অনুমোদন দিয়েছে পর্ষদ। ২০০৪ সালে এ বাবদ একটি চুক্তি হলেও তা আইনি লড়াইয়ের কারণে কার্যকর করা যায়নি। ঋণদাতা সংস্থাগুলিকে ১২৮ কোটি টাকার শেয়ার দেওয়ার ফলে সংস্থার ঋণের বোঝা কিছুটা কমল। এই ঋণের জন্য বছরে যে প্রায় ১৪ কোটি টাকা সুদ দিতে হত, তা এ বার থেকে দিতে হবে না। একই সঙ্গে এই শেয়ার সংস্থার নিট সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে দিল। ২০০৮-এর হিসেব অনুযায়ী সংস্থার নিট সম্পদের পরিমাণ ২,৮৪৪ কোটি। এই নিট সম্পদের অঙ্ক ৫০% মুছে গেলেই বিআইএফআর-এ জানাতে হয়। ১২৮ কোটি টাকার ঋণ শেয়ারে পরিণত করায় সেই পরিস্থিতি থেকে আপাতত বাঁচল সংস্থা। শিল্পমন্ত্রী বলেন, “এখন সংস্থার আর্থিক হাল ফেরানোই সকলের মূল লক্ষ্য। ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থাগুলির কাছে আরও টাকা চেয়েছি।”
এমডি জানান, সংস্থার ব্যবসা বাড়াতে ‘বিউটিন’ উৎপাদন কারখানা হবে। ২০০ কোটির এই প্রকল্পে ‘প্রেফারেনশিয়াল ইক্যুইটি’-র মাধ্যমে বিনিয়োগ করবে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। |