দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ নিতে হবে। সংসদের দুই কক্ষে সরকারের এখন যা সংখ্যা, তাতে একার চেষ্টায় সেই কাজ করা সম্ভব নয়। তাই সকলের ‘সহযোগিতা’ চাইলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
কিন্তু কী সেই কঠিন সিদ্ধান্ত? প্রণববাবু এ দিন আরও এক বার ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভর্তুকিতে রাশ টানতে তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়াতে চাইছেন। প্রশাসনিক সূত্রে মনে করা হচ্ছে, ৩০ মার্চ বাজেট অধিবেশনের প্রথর্মাধ শেষ হওয়ার পরেই তেলের দাম বাড়ানো হতে পারে। পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি অন্তত পাঁচ টাকা হারে বাড়ানোর দাবি তুলেছে তেল সংস্থাগুলি। এ ছাড়া, জিএসটি বা পণ্য পরিষেবা কর চালু করার পথও পরিষ্কার করতে চায় সরকার। কিন্তু এই সব কাজে শরিক তো বটেই, বিরোধীদেরও সহায়তা প্রয়োজন। এ দিন সে কথাই উল্লেখ করে প্রণববাবু নিজেদের অবস্থাটা তুলে ধরেন সংসদের সামনে। বলেন, সংসদের উভয় কক্ষে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তাই শরিকদের আপত্তি অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। না হলে প্রতি বছরই অকাল নির্বাচন ডেকে আনতে হয়।
এই আবেদনের পরেও তেলের দাম বৃদ্ধি বা জিএসটি চালু করা কতখানি সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর সে কথা মাথায় রেখেই অন্য বিষয়ে সকলের মন রাখতে চেয়েছেন প্রণব। সাংসদরা তাঁকে গয়নার উপরে উৎপাদন শুক্ল ও সোনার উপরে আমদানি শুল্ক কমাতে আর্জি করেছিলেন। সে প্রসঙ্গ তুলে প্রণববাবু জানান, এই নিয়ে প্রতিবাদে স্বর্ণশিল্পীরাও ধর্মঘট করছেন। উৎপাদন শুল্কের বিষয়টি ভেবে দেখার প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রণববাবু জানিয়ে দিয়েছেন, সোনার আমদানি কমাতেই শুল্ক বসানো হয়েছে। মূল্যবান বিদেশী মুদ্রা সোনা আমদানিতে ব্যয় করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে জিএসটি চালুর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর বাবদ ক্ষতিপূরণ নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে যে বিরোধ চলছে, তা নিয়েও আলোচনায় বসার আশ্বাস দিয়েছেন প্রণববাবু। তবে এই নিয়ে শর্ত রেখেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় বিক্রয় করের হার কমানোর ফলে রাজ্যগুলির যে রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, সেই বাবদ ক্ষতিপূরণ আর দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রক। আজ প্রণব জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে ফের রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। তবে তাঁর শর্ত, জিএসটি নিয়ে সরকারকে সংবিধান সংশোধনে সাহায্য করতে হবে। জিএসটি চালু করার লক্ষ্যেই তিনি উৎপাদন শুল্ক ও পরিষেবা করের হার বাড়িয়েছেন বলেও যুক্তি দেন প্রণব।
দেশের আর্থিক হাল সম্পর্কে সকলকে অবহিত করে প্রণববাবুর বক্তব্য, আমেরিকা-ইউরোপ-জাপানের অর্থনীতিতে যখন মন্দার ছায়া, তখন দেশীয় বাজারে চাহিদা বাড়িয়ে আর্থিক বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে। চাহিদা বাড়াতে গেলে আয়ের পথ তৈরি করতে হবে। তার জন্য কৃষি ও গ্রামীণ ক্ষেত্রে এবং পরিকাঠামোয় বিনিয়োগের দরকার। রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানতে অবিলম্বে যে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন, আজ ফের জানিয়েছেন প্রণব। তাঁর বক্তব্য, অপরিশোধিত তেলের দাম যদি ব্যারেল প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ ডলারে পৌঁছে যায়, তা হলে তা আমদানি করাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। |