পুকুর শুকিয়ে বিক্রির চেষ্টা, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী
পুকুর শুকিয়ে জমি হিসেবে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বর্ধমানের জগৎবেড়ে এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছেন পুলিশ ও প্রশাসনের নানা দফতরে। ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের (বর্ধমান সদর) তরফে জানানো হয়, অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।
বর্ধমানের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের জগৎবেড়ে এলাকার কালাচাঁদতলায় ওই পুকুরটি কলঙ্কিনী নামে পরিচিত। আশপাশের বাসিন্দারা জানান, পুকুর শুকনো করে সেটিকে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ তাঁরা স্থানীয় বিধায়ক, জেলা পুলিশ সুপার, মহকুমাশাসক, ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর, মৎস্য দফতর, বর্ধমান থানা-সহ সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু জায়গায় জানিয়েছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পাড়ের সমস্ত গাছ কেটে ফেলে পুকুরটিকে একটি জমির চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে পুকুরটির জল শুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি পিলার গেঁথে প্লট তৈরি করে বিক্রির চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
ছবি: উদিত সিংহ।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রায় দু’শো বাসিন্দা গণস্বাক্ষর করা একটি চিঠিতে প্রশাসনকে জানিয়েছেন, এই পুকুরটি এলাকার একমাত্র জলের উৎস। পুকুরটি না থাকলে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে তেমনই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে জলের অভাব দেখা দিতে পারে। বাসিন্দাদের দাবি, পুকুরটি শুকিয়ে ফেলার সময়ে তাঁরা ভেবেছিলেন, সংস্কার করা হবে। কিন্তু পিলার তোলা শুরু হতে তাঁদের সন্দেহ হয়। এর পরেই প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান তাঁরা। কিন্তু এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।
ভূমি সংস্কার দফতরের পরচা অনুযায়ী, ওই জমি পুকুর হিসেবেই নথিভুক্ত। তার পরিমাণ সরকারি নথিতে ২ একর ২৪ শতক। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুকুরের মালিক আদিত্যজ্যোতি প্রামাণিক ১৯৯৫ সালে প্রয়াত হন। এখন এই পুকুরের মালিক তাঁর মেয়েরা। তাঁদের হয়ে সম্পত্তির দেখাশোনা করেন পরিবারের ছোট জামাই অরবিন্দ সেন। তিনি এলাকারই বাসিন্দা। তবে পুকুরটিকে প্লট করে বিক্রির চেষ্টার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, “বেশ কয়েক বছর আগে ওই কাজ করার কথা ভেবেছিলাম আমরা। বিশেষ পারিবারিক প্রয়োজনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর প্রয়োজন না হওয়ায় পুকুরটি বিক্রি করতে চাইছি না।” অরবিন্দবাবু বলেন, “প্রায় দেড় বছর আগে কয়েকটি পিলার গাঁথা হয়েছিল, সেগুলিই রয়ে গিয়েছে।”
কিন্তু যে আমিন এই পুকুরের মাপজোকের কাজ করেছিলেন সেই অমর খান বলেন, “মাসখানেক আগে আমি ওই পুকুরটি মাপি। ওরা আমার কথা মতোই গত ১৪ মার্চ বিভিন্ন প্লট পিলার দিয়ে চিহ্নিত করেন। তবে পুকুর যে এ ভাবে প্লট হিসেবে বিক্রি করা যায় না, আমি সে কথা তাঁদের জানিয়ে দিয়েছিলাম। এই বেআইনি কাজে জড়াতে চাই না বলে জমির নক্সায় সমীক্ষক হিসেবে কোনও স্বাক্ষরও করিনি আমি।”
বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই পুকুর নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তা পুলিশকে জানাতে হবে।” বর্ধমান থানার তরফে জানানো হয়, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এত দিনেও কেন তদন্ত শেষ হয়নি, তার উত্তর মেলেনি। মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) প্রশান্ত অধিকারীর কথায়, “পুকুর সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পাওয়া মাত্র আমরা তা মৎস্য দফতরে জানিয়ে দিই। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কেন এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা খতিয়ে দেখব।” জেলা মৎস্য দফতরের আধিকারিক সজল সাহা বলেন, “আমরা পুকুরটি বিক্রির অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। আইন অনুযায়ী, কেউ পুকুর ভরাট করলে বা তা জমি হিসেবে বিক্রির চেষ্টা করেছেন প্রমাণিত হলে, ছ’মাসের জেল ও পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা হবে। পুকুরও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে।” বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান আইনুল হকের আশ্বাস, “অবিলম্বে ঘটনাটি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বর্ধমানের (সদর) বিএলআরও দেবব্রত সাউ জানান, জগৎবেড় এলাকার একটি পুকুরকে প্লট হিসেবে বিক্রির অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। স্থানীয় রেভিনিউ ইনস্পেক্টরকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.