সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক পদ থেকে সরলেন মানিক সান্যাল। নতুন জেলা সম্পাদক হলেন আলিপুরদুয়ারের চা-বলয়ের নেতা কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার জলপাইগুড়িতে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন ও রাজ্য নেতা মৃদুল দে-র উপস্থিতিতে জেলা কমিটির বৈঠকের পরে মানিকবাবু নিজেই সাংবাদিক বৈঠক করে ওই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। সিপিএম সূত্রের খবর, শারীরিক অসুস্থতার কারণে কিছু দিন আগে মানিকবাবু পদ থেকে সরতে চেয়ে রাজ্য কমিটির কাছে
চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
মানিকবাবু বলেন, “জেলা সম্মেলনেও সরতে চেয়েছিলাম। সতীর্থেরা শোনেননি। কিন্তু এ বার দায়িত্ব নেওয়ার পরে শরীর সায় দিচ্ছিল না। ৭৯ বছর বয়স। শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। তাই আমি নিরুপমবাবুদের জলপাইগুড়িতে আসার অনুরোধ করি। ওঁদের উপস্থিতিতে বৈঠকে আমি জেলার সংগঠনের দায়িত্ব অন্য কাউকে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। সকলে মেনে নেওয়ায় আমি স্বস্তি পেয়েছি।” মানিকবাবুর পাশেই ছিলেন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক কৃষ্ণবাবু। তিনি বলেন, “এখন আমাদের পার্টির কঠিন পরিস্থিতি। তবে দলের সকলেই পাশে রয়েছেন। দায়িত্ব পালনে কোনও সমস্যা হবে না।”
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৯ সাল থেকে টানা জেলা সম্পাদক পদে থাকা মানিকবাবুকে নিয়ে দলের একাংশের ক্ষোভ ২০১০ সালে প্রকাশ্যে আসে। ওই বছর জলপাইগুড়ি জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্যানেলে মানিকবাবুর পূত্রবধূ-সহ কিছু সিপিএম নেতার আত্মীয়দের নাম থাকায় দলের একাংশে ক্ষোভ বাড়ে। সম্পাদক পদ থেকে মানিকবাবুর অপসারণ চেয়ে জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষুব্ধ কর্মীরা পোস্টারও দিয়েছিলেন। সেই সময়ে রাজ্য কমিটির বৈঠকে ডেকে পাঠানো হয় মানিকবাবুকে। নিয়োগ নিয়ে সমালোচনার জবাবে মানিকবাবু নিজেই রাজ্য কমিটির কাছে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন বলে দল সূত্রের খবর।
সিপিএমের অন্দরের খবর, গত বিধানসভায় জেলায় দলের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে প্রাথমিক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টিকে চিহ্নিত করেন দলের অনেকেই। এর পরে বীরপাড়ায় দলের জেলা সম্মেলনে একই ধরনের সমালোচনা হয়। কিন্তু চা-বলয়ে সংগঠনের বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রবীণ নেতা মানিকবাবুকে ফের জেলা সম্পাদক পদে রেখে দেওয়া হয়। তবে অসুস্থতার কারণে মানিকবাবু ঠিক মতো কাজ করতে পারছিলেন না। তিনি বিষয়টি রাজ্য নেতাদের জানিয়ে দেন। তার পরে রাজ্য কমিটি থেকে মানিকবাবুকে বাদ দেওয়া হয়।
তখন থেকেই নতুন জেলা সম্পাদক খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু করে দল। একাধিক নাম আলোচিত হলেও শেষ পর্যন্ত ৬৫ বছর বয়সী চা-শ্রমিক নেতা কৃষ্ণবাবুর নামটি সর্বসম্মত ভাবে মনোনীত হয়। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে অসমে জন্ম কৃষ্ণবাবুর। ছোটবেলা কেটেছে আলিপুরদুয়ারে। কলেজে পড়ার সময় থেকেই তিনি বামপন্থী সংগঠনে যুক্ত। ১৯৭৪ সাল থেকে পার্টি সদস্য কৃষ্ণবাবু দলের যুব সংগঠনের জেলা সহ-সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮০ সালে আলিপুরদুয়ারের লোকাল কমিটির সম্পাদক হন তিনি। চার বছর পরে দলের জেলা কমিটিতে মনোনীত হন। ১৯৯৮ সাল থেকে রয়েছেন দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে। চা-শ্রমিক সংগঠন করার সুবাদে তিনি সিটুরও জেলা স্তরের নেতা। |