নজিরবিহীন ঘটনা ঘটিয়ে বিধাননগর পুরসভায় বৃহস্পতিবার রাতভর অভিযান চালাল আয়কর দফতর। অভিযোগ, পুরকর্মী ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে আয়কর বাবদ টিডিএস কেটেও তা জমা দেননি পুর কর্তৃপক্ষ।
এই ঘটনায় বিস্মিত বিধাননগর পুরসভা ও রাজ্য পুর দফতরের কর্তারা। তাঁদের মতে, “পুরসভার মতো একটি আধা-সরকারি সংস্থায় আয়কর দফতরের তল্লাশি চালানোর কথা শোনা যায় না। সাধারণত, কোনও বকেয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকলে আয়কর বিভাগ তা চিঠি দিয়ে জানতে চায়। এ ক্ষেত্রে তা না করে ব্যতিক্রম ঘটাল আয়কর বিভাগ।”
আয়কর দফতরের অফিসারেরা কী ধরনের কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছেন, করের টাকা কবে থেকে জমা দেওয়া হচ্ছে না বা জমা না পড়া টিডিএসের পরিমাণ কত, এই নিয়ে দু’দিন পরেও স্পষ্ট করে কেউ-ই কিছু জানাতে পারেননি। বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “আয়কর দফতর থেকে অফিসারেরা এসেছিলেন জানি। তার পর কী হয়েছে তা বলতে পারব না। আমরা নীতি নির্ধারণ করি। করের বিষয়টি দেখার কথা আধিকারিকদের।” অন্য দিকে, আয়কর দফতর সূত্রে শুধু বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এই অভিযান। এর বেশি কিছু জানাতে রাজি হননি আয়কর কর্তারা।
দীর্ঘকাল বামেদের দখলে থাকলেও ২০১০ সালে বিধাননগর পুরসভায় ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। আগের আমলে কোনও দিন আয়কর হানার ঘটনা ঘটেনি। তবু করের টাকা জমা না দেওয়ার ঘটনা কবে থেকে, সেই প্রশ্ন উঠছেই। বাম আমলের শেষ চেয়ারম্যান বিশ্বজীবন মজুমদার বলেন, “আমার আমলে করের টাকা আয়কর দফতরে জমা পড়েছে বলেই মনে হয়। কারণ তা না হলে তো তখনই আয়কর হানা দিত।” তাঁর আরও দাবি, “সরকার ও বাইরের সংস্থাকে দিয়ে পুরসভার সব কিছু নিয়মিত অডিট করানো হত। কিছু হলে তো অডিটের সময়ই প্রশ্ন উঠত।” তবে একই সঙ্গে কৃষ্ণাদেবীর মতোই বিশ্বজীবনবাবুও বলেন, “কর সংক্রান্ত বিষয় দেখতেন পুরসভার ফিনান্স অফিসার। চেয়ারম্যান হিসেবে সব আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়।”
মহকারণ সূত্রের খবর, সাধারণ নিয়ম মেনে পুরকর্মী ও ঠিকাদারদের বেতন ও প্রাপ্য থেকে আয়কর (ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যাট সোর্স বা টিডিএস) কেটে থাকে বিধাননগর পুরসভা। ওই টাকা আয়কর বিভাগে দাতার নামেই জমা পড়ার কথা। নিয়ম হল, টাকা কেটে নেওয়ার পর পুরসভা একটি রসিদ দেয়, যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থা নিজস্ব আয়কর রির্টানে সেই তথ্য জানাতে পারেন।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আগাম কোনও খবর না দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে আচমকা ওই অভিযান চালায় আয়কর বিভাগ। প্রায় সারা রাত তল্লাশি চালিয়ে তাঁরা ‘বেশ কয়েক বস্তা’ নথিপত্র নিয়ে গিয়েছেন। প্রশাসন দু’দিন পরেও এই অভিযান নিয়ে যথেষ্টই ধন্দে। তাই ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন মত মিলেছে। অনেকে মনে করছেন, কর জমা না পড়ার নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগের ভিত্তিতেই এই অভিযান চালিয়েছে আয়কর বিভাগ।
আবার একটি অংশের মতে, গত বছরের তুলনায় এ বার আয়কর কম জমা পড়ায় তার কারণ জানতেই আয়কর অফিসারেরা এসেছেন এবং কিছু কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, খাতাপত্র থেকে কম্পিউটারে নথি তোলার সময় হয়তো সব কাজ ঠিকমতো হয়নি। কোনও কোনও ‘এন্ট্রি’ তোলা হয়নি। তাই অভিযোগ উঠেছে।
বিধাননগরের মহকুমাশাসক তথা বিধাননগর পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার মলয় মুখোপাধ্যায় অবশ্য এই তল্লাশিকে অভিযান বলতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “আয়কর দফতরের অফিসারেরা পুরভবনে গিয়ে টিডিএস সংক্রান্ত খোঁজখবর নিয়েছেন। শুধু ঠিকাদার নয়, পুরকর্মীদেরও যে সব টিডিএস কাটা হয়েছে, তার খোঁজও নিয়েছেন তাঁরা।” |