গরমের তেজ তেমন না-বাড়লেও রায়গঞ্জ ব্লকের বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলকষ্ট শুরু হয়েছে। জলস্তর নেমে যাওয়ায় বিকল হয়েছে বেশিরভাগ সরকারি নলকূপ। যে কয়েকটি ব্যক্তিগত নলকূপ থেকে জল মিলছে সেটাও দুর্গন্ধযুক্ত। নিরুপায় হয়ে ওই জল ব্যবহারের ফলে এলাকায় ছড়াচ্ছে পেটের রোগ। দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রামের বাসিন্দারা পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়েছেন। কংগ্রেস পরিচালিত বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষি ও প্রাণীসম্পদ কর্মাধ্যক্ষ দুর্গেশ ঘোষ বলেন, “এলাকা জুড়ে পানীয় জলের সমস্যা বেড়েছে। বেশিরভাগ সরকারি নলকূপ বিকল। পেটের রোগ বাড়ছে। প্রতিদিন স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর ভিড় বাড়ছে। সমস্যার কথা জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোক্তার আলি সর্দার বলেন, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পানীয় জলের সংকট বেড়েছে। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ এলাকায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবারাহের একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। বিষয়টি আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় মোট ১৩টি সংসদ রয়েছে। পরিবারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার। জনসংখ্যা ৩৫ হাজার। এলাকায় প্রায় ৩ হাজার পরিবারের ব্যক্তিগত নলকূপ রয়েছে। পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েক বছরে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ওই পঞ্চায়েতের বিভিন্ন সংসদ এলাকায় পর্যায়ক্রমে অন্তত ২৫টি গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করে। কিন্তু নলকূপগুলি বিকল হয়ে পড়ায় এলাকার বাসিন্দারা বিপাকে পড়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়। সম্প্রতি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ সমীক্ষায় জেনেছে, এলাকার কুমারজোল, শঙ্করপুর, সোহারই, নারায়ণ পুর, ঝিটকিয়া, কুমরোল ও বালিরপর সংসদে পানীয় জলের সমস্যা বেশি। জলস্তর নেমে যাওয়ায় ও প্রযুক্তিগত ক্রুটির কারণে ২৫টি গভীর নলকূপের মধ্যে ২০টি বিকল। বাকি ৫টি নলকূপ থেকে দুর্গন্ধযুক্ত জল বার হচ্ছে। শুধু তাই নয়। ৩ হাজার পরিবারের ব্যক্তিগত নলকূপের মধ্যে ৮০ শতাংশের জল ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত। বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে ওই জল ব্যবহার করায় পেটের রোগ বাড়ছে। গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তারা জানান, ওই সমস্যা সমাধানের জন্য পাইপ লাইনে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা জরুরি। ওই কাজ পঞ্চায়েতের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তাঁরা জেলা পরিষদের দ্বারস্থ হয়েছেন। পঞ্চায়েত কর্তাদের আশঙ্কা, জেলা পরিষদ দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী না হলে বাসিন্দারা নোংরা জল ব্যবহারের ফলে চর্মরোগে আক্রান্ত হবে। সোহারই এলাকার বাসিন্দা নীলু বর্মন, ঝিটকিয়া সংসদের বাসিন্দা শম্ভু দাস বলেন, “গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দা গরিব। চাষের কাজ ও দিনমজুরি করে সংসার চলে। বাজার থেকে ফিল্টার কিনে জল শোধন করে ব্যবহার করা তাঁদের কাছে কষ্টকল্পনা। তাই পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের দাবি জানানো হয়েছে। ওঁরা বলেছেন জেলা পরিষদ ওই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী না-হলে একা তাঁদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।” পঞ্চায়েত এলাকায় বিশুদ্ধ জল সরবরাহ না হলে বাসিন্দারা নোংরা জল পান করে মারা যেতে পারেন বলে সন্দেহ করছি! তখন প্রশাসনের টনক নড়বে!” |