প্রায় দেড় কোটি টাকা আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারের নামে পুলিশ চার্জশিট দাখিল করায় তাঁকে সাসপেন্ড করল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি। শুক্রবার কলকাতায় কর্মসমিতির জরুরি বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, আর্থিক নয়ছয়, ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতি দমন আইনে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হলে তাঁকে সাসপেন্ড করার নিয়ম রয়েছে। সেই মতো দিলীপবাবুকে সাসপেন্ড করার বিষয়টি বৈঠকে পেশ হয়। বিষয়টি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে উপাচার্য অরুণাভ বসুমজুমদার বলেছেন, “কোনও বিষয় নিয়ে আলাদা করে কিছু বলা সম্ভব নয়। এ-টুকু বলতে পারি, সর্বসম্মতিক্রমে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
যাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই দিলীপবাবু বিচারাধীন বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার-কর্মীদের একাংশ জানান, ইতিমধ্যেই পদমর্যাদার সুযোগ নিয়ে তাঁর উপরে অত্যাচার ও সম্মানহানি করার অভিযোগ এনে উপাচার্যের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন দিলীপবাবু। পাশাপাশি, পূর্ণাঙ্গ কর্মসমিতি গঠনের আগে বৈঠক ডেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া বেআইনি বলেও অভিযোগ তুলেছে দিলীপবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল। অবশ্য রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মার্জিত ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, মোট সদস্যের এক-তৃতীয়াংশ উপস্থিত থাকলেই কর্মসমিতির বৈঠক বৈধ। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সুগতবাবু বলেছেন, “পূর্ণাঙ্গ কর্মসমিতি গঠনের আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনে উপাচার্য বৈঠক ডাকতে পারেন। এটা বেআইনি নয়।”
যে মামলায় দিলীপবাবু, প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষকান্তি সাহা-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ তা ২০১০ সালের মার্চ মাসে রুজু হয়। উপাচার্য অরুণাভবাবু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অভিমত নিয়ে শিলিগুড়ির মাটিগাড়া থানায় দিলীপবাবু ও অন্যদের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সময়ে দিলীপবাবুকে সাসপেন্ড করেন উপাচার্য। তবে কর্মসমিতির অনুমোদন ছাড়া তাঁকে সাসপেন্ড করে উপাচার্য অবৈধ কাজ করেছেন বলে মামলা করেন দিলীপবাবু। সাসপেনশনের নির্দেশে উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ দেয়। তার পরে ২০১১ সালের জুন মাসে প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ামক তথা রেজিস্ট্রার, প্রাক্তন উপাচার্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি চায় পুলিশ।
ওই অনুমতি দেওয়া নিয়ে টালবাহানা চলতে থাকার অভিযোগ পৌঁছয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। ফেব্রুয়ারিতে শিলিগুড়িতে এসে মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। তার পরেই ১২ মার্চ পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়। ইতিমধ্যে নতুন কর্মসমিতির বৈঠকে দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়। দিলীপবাবু ও প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষবাবু, দু’জনেই আগাম জামিন পেয়েছেন। |