জমি খুঁড়ে পুকুর, ক্ষোভ মালদহে |
জমির চরিত্র বদল না-করেই ৭০-৮০ বিঘা ফসলি জমি খুঁড়ে পুকুর তৈরির অভিযোগ উঠেছে মালদহের এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মালদহের ইংরেজবাজার থানার কৃষ্ণপুর এলাকা উত্তাল হয়ে উঠেছে। ইংরেজবাজার ব্লক ভূমি রাজস্ব দফতরের কর্মীদের একাংশের মদতে ওই পুকুর খোঁড়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে শুক্রবার এলাকার বিডিও দফতরে বিক্ষোভ দেখান কৃষকেরা। বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার পরে বিডিও গোপালচন্দ্র দাস ব্লক ভূমিরাজস্ব আধিকারিককে পুকুর কাটা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। বিডিও’র নির্দেশে ব্লক ভূমিরাজস্ব আধিকারিক ওই ব্যবসায়ীর পুকুর কাটার যন্ত্রটিও বাজেয়াপ্ত করে। ইংরেজবাজারের বিডিও বলেন, গ্রামবাসীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরই ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের কাছে কৃষ্ণপুর গ্রামের ওই জমির চরিত্র সম্পর্কে খোঁজ নিই। ব্লক ভূমিরাজস্ব আধিকারিক জানান, জমিটি ‘নামা’। |
ইংরেজবাজার থানার কৃষ্ণপুরে মনোজ মপখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি। |
কখনই সেই জমিতে পুকুর খনন করা যায় না। পুকুর খনন করতে হলে জমির চরিত্র পরিবর্তন করতে হবে। কৃষ্ণপুরের ওই জমির চরিত্র বদল করা হয়নি। এর পরেই ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিককে থানায় অভিযোগ দায়ের করে মাটি কাটার যন্ত্র বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।” ইংরেজবাজার ব্লক ভূমিরাজস্ব আধিকারিক সুদীপ্ত মন্ডল বলেন, “বেআইনিভাবে ফসলি জমি খুঁড়ে পুকুর তৈরি করা হচ্ছে। খবর পেয়েই পুকুর খোঁড়ার কাজ বন্ধ করতে দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে এলাকায় পুলিশ পাঠাই। ওই ফসলি জমিতে যিনি পুকুর খনন করছিলেন তার নাম জানার পরেই থানায় অভিযোগ জানানো হবে।”
মালদহ শহর লাগোয়া যদুপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অন্তর্গত কৃষ্ণপুর গ্রাম। ওই গ্রামের বেশির ভাগই কৃষিজীবী। মালদহ শহরের মালঞ্চপল্লির এক ব্যবসায়ী বছর দুয়েক আগে চাষাবাদের জন্য ওই গ্রামের নৃসিংহ মৌজার প্রায় ১০০ বিঘা জমি কিনেছিলেন। কেনার পরে চাষাবাদ না করে ওই ব্যবসায়ী জমি ফেলে রেখেছিলেন। পাঁচ দিন আগে ওই জমিতে পুকুর খননের কাজ শুরু হয়। ওই ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ছড়ায়। এলাকার বাসিন্দারা পুকুর খননের কাজ বন্ধ করতে জোটবদ্ধ হন। এলাকার বাসিন্দা তথা যদুপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য অলোক মন্ডল বলেন, “ওই এলাকা দিয়ে ইংরেজবাজার শহরের নিকাশি নালার জল চাতরা বিলে গিয়ে মেশে। এলাকার সমস্ত জমির জল ওই ব্যবসায়ীর জমির উপর দিয়ে যায়। পুকুর খনন হলে আশেপাশের প্রায় হাজার খানেক ফসলি জমির জমা জল বার হতে পারবে না। সমস্ত জমি নষ্ট হয়ে যাবে।”
গ্রামের বাসিন্দা সায়েদ আলি, মহম্মদ নাসিরুদ্দিন, সুনীল মন্ডলরা অভিযোগ করেন, “ভূমি রাজস্ব দফতরের একাংশকে হাত করে ফসলি জমিতে পুকুর খোঁড়ার কাজ হচ্ছে। ফের যদি পুকুর খননের কাজ হয় তবে সমস্ত শক্তি দিয়ে বাধা দেওয়া হবে।” এদিকে যাঁর বিরুদ্ধে ফসলী জমি খুঁড়ে পুকুর তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে সেই ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ওই ব্যবসায়ী হয়ে পুকুর তৈরির কাজে তদারকির দায়িত্বে থাকা বাণী শেখ বলেন, “পুকুর কাটার জন্য জমির মালিক কারও অনুমতি নিয়েছেন কি না বলতে পারব না। আমায় দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।” |