একেই সীমিত পরিকাঠামো। তার উপর সরকারি স্বাস্থ্য-পরিষেবার উপর ‘আস্থা’ হারিয়েছেন একাংশ মানুষ। তার ফলেই বেসরকারি স্বাস্থ্য ‘ব্যবসা’র রমরমা বাড়ছে বলে মনে করেন অনেকে। বেশি টাকা খরচ হলেও ‘একটু ভাল’ পরিষেবা পাওয়ার আশায় রোগীকে বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন। চিকিৎসা করানোর জন্য অনেকে আবার ভিন্ রাজ্য--ভেলোর, কটকেও যাচ্ছেন। সেখানকার চিকিৎসা-পরিষেবায় রোগীরা সন্তুষ্ট। তাঁদের বক্তব্য, ওখানকার বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমও মুনাফা করে। তবে, রোগীর স্বাচ্ছন্দ্যের দিকেও নজর দেয়। চিকিৎসকেরাও সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করেন। রোগীদের সঙ্গে ‘বন্ধুর’ মতো মেশেন।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সব রকম পরিষেবাই ২৪ ঘণ্টা পাওয়ার কথা। খাতায়-কলমে তা চালুও রয়েছে। কিন্তু, এখানে সব সময়ে সব পরিষেবা পাওয়া যায় না বলেই অভিযোগ। তার ফলে সমস্যায় পড়েন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। মেডিক্যালে রাতেও ইউএসজি, ইসিজি, স্ক্যান হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় না বলেই অভিযোগ। কিছু ক্ষেত্রে সময় মতো এক্স-রেও হয় না। আর সেই সুযোগেই শহর ও শহরতলির প্যাথলজি সেন্টারগুলি রমরমিয়ে চলছে। খড়্গপুরের বিদ্যাসাগরপুরের বাসিন্দা মৌসুমী ত্রিপাঠি বলেন, “পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে সকলেই চান, তাঁর যেন ভাল চিকিৎসা হয়। এ ক্ষেত্রে বেশি খরচ করতেও অনেকে রাজি থাকেন। কিন্তু সরকারি হাসপাতাল থেকে সে ভাবে পরিষেবা মেলে না। রোগীদের উপরে সব সময় নজর রাখাও হয় না। বাধ্য হয়েই পরিবারের লোকজন অসুস্থ নিকটাত্মীয়কে বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি করেন। এখানে অন্তত রোগীদের উপর সব সময় নজর থাকে।”
চিকিৎসার জন্য ১৪ বার ভেলোর গিয়েছেন মেদিনীপুরের দীপক বসু। তাঁর কথায়, “ওখানকার ব্যবস্থাটাই অন্য রকম। চিকিৎসকদের মানসিকতাতেও ফারাক রয়েছে। অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে, এখানকার অধিকাংশ চিকিৎসকের মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাসটা নেই।” এখানকার সরকারি হাসতাপাতালে রোগীর ‘চাপ’ থাকে বলে যে কথা বলা হয়, সেই প্রসঙ্গে ‘মেদিনীপুর ক্যানসার কেয়ার’ সংস্থার সম্পাদক দীপকবাবু বলেন, “ভেলোরেও কিন্তু হাসপাতালে এক দিনে ৪ হাজার রোগী বহির্বিভাগে আসেন।” একই অভিজ্ঞতা শহরের প্রমিত গঙ্গোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, “অন্য রাজ্যে টাকা খরচ করলে পরিষেবাটাও ভাল মেলে। রোগী ও তাঁর পরিজনেদের সমস্যায় পড়তে হয় না।” মাঝেমধ্যেই রোগী নিয়ে ভেলোর, কটকে গিয়েছেন জয়দীপ নন্দী। তাঁর বক্তব্য, “ওখানকার চিকিৎসকেরা রোগীর সঙ্গে বন্ধুর মতো মেশেন। সেবার মনোভাবটাই বেশি প্রকাশ পায়।” রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা রুগ্ণ হয়ে পড়ার সুযোগেই মুনাফার কারবারিদের বাড়বাড়ন্ত বলে মনে করেছেন অনেকেই। সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার হাল ফিরলে ফের মানুষ সেখানেই যাবেন বলেও জানাচ্ছেন জয়দীপবাবুরা। |