মেদিনীপুরের বেসরকারি হাসপাতালটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘লঘু’ করে দেখাতে প্রশাসনের একাংশ ‘অতি-সক্রিয়’ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। এমনকী, আপাতত ‘সিল’ করে দেওয়া হাসপাতালটি তড়িঘড়ি ফের চালু করে দেওয়ার জন্যও বিভিন্ন মহল থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। অগ্নিকাণ্ডের পর হাসপাতালটি সম্পর্কে রাজ্য সরকারের কাছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পাঠানো রিপোর্ট নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
হাসপাতালটি বিধি মেনেই চলছিল বলে সরকারের কাছে পাঠানো রিপোর্টে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) সওয়াল করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। কারও মৃত্যু হয়নি। কেউ আহতও হননি। সমস্ত রোগীকে নিরাপদেই বাইরে বের করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও অন্য নার্সিংহোমে ভর্তি করা সম্ভব হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ফলে হাসপাতালটির ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় তা না সংস্কার করা পর্যন্ত আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে’। সিএমওএইচ কিন্তু উল্লেখ করেননি, বুধবারের ঘটনায় অন্তত চার জন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন আবার সরকারি কর্মী। এক জন দমকলের আধিকারিক দিলীপ ভৌমিক এবং অন্য জন পুলিশকর্মী দেবব্রত সরকার। ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন দিলীপবাবু। আর কাচের টুকরো মাথায় পড়ে জখম হন পুলিশকর্মী দেবব্রতবাবু। তা সত্ত্বেও কী ভাবে সিএমওএইচ রাজ্য সরকারের কাছে এই প্রসঙ্গের উল্লেখ ছাড়াই রিপোর্ট পাঠালেন, তার সদুত্তর মেলেনি। |
এর সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (এসিএমওএইচ) তারাপদ ঢলের দু’টি রিপোর্ট। যার একটি রিপোর্ট, গত বছর ১ ডিসেম্বরে এসিএমওএইচের ওই হাসপাতাল পরিদর্শন-সংক্রান্ত। যে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, বিধি মেনেই চলছে হাসপাতাল। আইসিসিইউ, এক্সরে, ইউএসজি, এমআরআই, প্যাথলজি ইউনিট--সব একটি ভবনেই রয়েছে। বেসমেন্টে রয়েছে ওষুধের দোকান। হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১২ সালের ৪ জুলাই পর্যন্ত। দ্বিতীয় রিপোর্টটি বস্তুত থানায় দায়ের করা এসিএমওএইচের অভিযোগের প্রতিলিপি। অভিযোগ করা হয়েছে, ‘২১ মার্চ সকাল ৯টা নাগাদ হাসপাতালের বেসমেন্টে আগুন লাগে। সেখানে ওষুধ রাখা ছিল। এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি ছিল কি না, তা দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক’। দমকল পর্যন্ত প্রাথমিক ভাবে বলেছিল, বেসমেন্টে অবৈধ ভাবে দাহ্যবস্তু মজুত করা ছিল। সে প্রসঙ্গও এড়িয়ে গিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর!
স্বভাবতই তাই স্বাস্থ্য দফতরের ‘ভূমিকা’ নিয়ে সংশয় জাগছে। একশো শয্যা-বিশিষ্ট হাসপাতাল, যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে বহু মানুষের জীবন-মৃত্যু, সেখানে স্বাস্থ্য দফতরের নজরদারির অভাব নিয়ে প্রশ্ন আগেই উঠেছিল। আর এখন বেসরকারি হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষের ‘দোষত্রুটি’ আড়ালের জন্য সেই স্বাস্থ্য দফতরই প্রাণপাত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালটিতে রোগীদের খাবার দেওয়া হয়। কর্মীদের জন্য ছিল ক্যান্টিন। খাবারের লাইসেন্স রয়েছে কি না, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, সুইপার, অ্যাটেনডেন্ট রয়েছে কি না, নাকি কেবল মনগড়া কিছু নাম আর কয়েক জনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভাড়া নিয়ে চালানো হচ্ছিল--সেই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা দূরের কথা, কী ভাবে হাসপাতালটি দ্রুত সংস্কার করে তা ফের চালু করা যায় তার জন্যই যেন স্বাস্থ্য দফতর উঠেপড়ে লেগেছে!
স্বাস্থ্য দফতরের এই ‘ভূমিকা’ পুলিশকেও মামলা লঘু করার সুযোগ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধৃত স্বাস্থ্যকর্তাদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। অথচ কলকাতার হাতিবাগানে বৃহস্পতিবার ভোররাতের আগুন নিয়ে কলকাতা পুলিশ জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করেছে সেখানকার বাজার-মালিকদের বিরুদ্ধে। |