দীনবন্ধু কলেজে ছাত্র সংসদ গঠন নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব
কক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও কলেজের ছাত্র সংসদ গঠনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতে পারল না তৃণমূল।
গত ৫ মার্চ বনগাঁর দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ে ভোটের দিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় এসএফআই। ছাত্র পরিষদ এখানে পৃথক প্রার্থী দিলেও ফল প্রকাশের পরে দেখা যায় ছাত্র সংসদের ২৬২টি আসনের মধ্যে ২৪৮টিই পেয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। শুক্রবার ছিল ছাত্র সংসদ গঠনের দিন। সাধারণ সম্পাদক পদে তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠীর দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দীর্ঘ দিন পরে এসএফআইয়ের হাত থেকে এই কলেজে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার পরেও দলের অন্দরে গোষ্ঠীকোন্দলের এই ঘটনায় ‘অখুশি’ তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ এবং টিএমসিপি ছাত্র সংগঠনের অনেকেই।
এই কলেজের ভোট ছিল তৃণমূলের কাছে কার্যত ‘সম্মানের লড়াই।’ এর আগে বনগাঁয় পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পুরসভা, লোকসভা এমনকী বিধানসভা ভোটে নিরঙ্কুশ আধিপত্য পেয়েছে তৃণমূলের। স্কুল-কলেজের ভোটেও তাদের জয়জয়কার। ফলে গত কয়েক দশক ধরে দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের একাধিপত্য খর্ব করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ভোটের আগে এলাকা এলাকায় মাইক বেঁধে প্রচার চলে। দেওয়াল লিখন চোখে পড়ে। ভোটের দিন দলের তাবড় আঞ্চলিক নেতা ভিড় জমিয়েছিলেন কলেজের বাইরে। সব মিলিয়ে সাধারণ নির্বাচনের ‘মেজাজে’ সম্পন্ন হয় এই কলেজের ভোট।
কিন্তু রাজ্যের বহু প্রান্তের মতোই বনগাঁতেও দলের অন্দরে একাধিক ক্ষমতাশালী গোষ্ঠী ‘ভোগাচ্ছে’ তৃণমূলকে। কিছু দিন আগে অশোকনগর নেতাজি শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনেও যা প্রকাশ্যে আসে। দীনবন্ধু কলেজেও সেই আশঙ্কা ছিল। বস্তুত, ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে সেই সমস্যায় ভুগতেও হয়েছে দলকে। দুই গোষ্ঠীর দুই নেতা ওই পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। শেষমেশ অবশ্য এক জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় ‘মুখরক্ষা’ হয় দলের।
কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে ফের সেই আশঙ্কা মাথাচাড়া দেয়। যে কারণে বৃহস্পতিবারই বনগাঁয় তৃণমূলের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন একাধিক নেতা। দলের ছাত্র নেতাদের পাশাপাশি সেখানে ছিলেন বনগাঁ শহর তৃণমূল সভাপতি দিলীপ দাস, প্রাক্তন কাউন্সিলর শঙ্কর আঢ্য, বনগাঁ শহর যুব তৃণমূল সভাপতি প্রসেনজিৎ ঘোষ, কাউন্সিলর অভিজিৎ কাপুরিয়া, বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন দত্ত প্রমুখ। সেখানেই ঠিক হয়, সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো হবে সৌম্য বিশ্বাসকে।
সেই মতো এ দিন ভাইস প্রেসিডেন্ট সৌমিক বিশ্বাস সৌম্যর নাম প্রস্তাব করেন। কলেজ সূত্রের খবর, হঠাৎই বিশ্বনাথ সরকার নামে ছাত্র সংসদের এক সদস্য ওই পদে দেবতনু ঘোষের নাম প্রস্তাব করে বসেন। দু’জনেই টিএমসিপি-র হয়েই ভোটে জিতেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে সৌম্য সাধারণ সম্পাদক পদে অরূপ নাগ নামে আর এক জনের নাম প্রস্তাব করেন। ভোটাভুটি অবধারিত হয়ে পড়ে। দেখা যায়, দেবতনু পেয়েছেন ৭৪টি ভোট। ১১১টি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন অরূপ।
কিন্তু এই পরিস্থিতি যে নেহাতই অনভিপ্রেত, তা মেনে নিয়েছেন অনেকেই। শঙ্কর আঢ্য বলেন, “ছাত্রদের মধ্যে একতা নেই। কে বা কারা তাতে মদতও দিয়েছেন। এতে দলেরই ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে।” সংগঠন ‘মজবুত’ না করলে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যাবে না বলেও ‘আশঙ্কা’ প্রকাশ করেছেন তিনি। সৌমেন দত্ত বলেন, “সাধারণ সম্পাদক মনোনয়নের জন্য বৃহস্পতিবার যে বৈঠক ডাকা হয়েছিল, সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু গিয়ে শুনি, গ্রাম-এলাকা থেকে কাউকে ওই পদে বসানো হবে না। এতে আপত্তি থাকায় বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসি। কিন্তু দল যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, তা বাকিদের মেনে নেওয়া উচিত ছিল। না হলে কঠোর শাস্তি পাওয়া দরকার।” বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের কথায়, “বনগাঁ শহর নেতৃত্বকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কেন এমন ঘটল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এ দিকে, তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের জেলা নেতৃত্বের একাংশই এ দিনের ভোটাভুটি নিয়ে ‘অন্ধকারে’ ছিলেন বলে দাবি করেছেন। সংগঠনের জেলা সভাপতি সঞ্জয় রাহার কথায়, “এ বিষয়ে আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি। খোঁজ নিচ্ছি।” এই কলেজে ছাত্র সংসদ গঠনের ‘দেখভালের’ দায়িত্ব ছিল তৃণমূলের দুই নেতা চন্দন ঘোষ এবং সঞ্জিত দাসের উপরে। এ দিন তাঁদের মতামতকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে তৃণমূলের অন্দরে আকচা-আকচির ছবিটা আরও এক বার পরিষ্কার হয়ে গেল বনগাঁয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.