|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি ২... |
|
গানের জন্য জাতীয় পুরস্কার... লজ্জা করছে |
জাতীয় পুরস্কার এল। বহু অপেক্ষার পর। অভিনয়ের জন্য নয়। গানের জন্য।
রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। খুশি? মুখোমুখি দেবশ্রুতি রায়চৌধুরী |
|
পত্রিকা: হপ্তা তিনেক হয়ে গেল জাতীয় পুরস্কার ঘোষণার। পুরস্কারটা পেয়েছেন সেই অনুভূতিটা আত্মস্থ হল?
রূপা: (জিভ বের করে হেসে ফেলে) এটা কেন জিজ্ঞেস করছেন জানি...
পত্রিকা: হ্যাঁ কেননা পুরস্কার ঘোষণার দিন দুপুরে আপনাকে যখন ফোন করলাম শুভেচ্ছা জানানোর জন্য, আপনি এমন একটা গলায় ফোনটা তুলেছিলেন যে কেউ শুনলে ভাববে আপনার জীবনে কোনও একটা বিপর্যয় ঘটে গেছে।
রূপা: কী জ্বালা! খুব উচ্ছ্বাস দেখানোর কথা ছিল কি?
পত্রিকা: সেরা গায়িকার জাতীয় পুরস্কার। উচ্ছ্বাসহীন থাকবেন?
রূপা: আপনি হয়েছেন কি না জানি না। আমি হয়েছি। হতবাক...
পত্রিকা: মানে লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, শ্রেয়া ঘোষালদের সঙ্গে এক আসনে আপনিএটা মানতে পারেননি বলছেন?
রূপা: এ বার আমার সত্যি খুব লজ্জা করছে! ওই সব নাম করে ব্যাপারটা বিলো দ্য বেল্ট হয়ে যাচ্ছে না? গানটা তো আমি কোনও দিনও নিয়ম করে চর্চা করিনি। মনের আনন্দে গেয়েছি। গত ১০ বছর টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে সেটাও করতে পেরেছি এমন না। সেখানে এত বড় সম্মান!
পত্রিকা: লবি করেছেন পুরস্কারটার জন্য, বলেনি কেউ?
বিদ্যা: হা হা হা। না না আমি বালন হয়েই ভাল আছি। ‘বি’ ইজ অ্যা গ্রেট অ্যালফাবেট। ‘বি’ একটা দুর্দাম্ত অক্ষর।
পত্রিকা: আমি যদি বলি ‘বি’ নিপাত যাক। ‘কে’ আসুক।
রূপা: (হো হো করে হেসে ফেলে) নাহ্। প্রোফেশনাল জীবনে একটাই অপযশ আমার— যে সামান্যতম পিআর করে না, চ্যানেলগুলো বাইট চাইলে পালিয়ে বেড়ায়, ফোন ধরে না, এসএমএস-এর রিপ্লাই করে ১০ দিন পর, কাজের কথা ছাড়া একটা ফোনও করে না, ২০টা ইনভিটিশন পেলে মেরেকেটে একটায় যায়— সে মানুষ পুরস্কারের জন্য করবে লবি?
পত্রিকা: তা হলে কেন পেলেন পুরস্কারটা? এমন করছেন মনে হচ্ছে এটা আপনাকে দেওয়াটা একেবারেই অনুচিত হয়েছে...
রূপা: না না। এমন কথা বলে আমি জুরিদের মতামতকে অসম্মান করতে চাই না। হয়তো তাঁদের কোথাও মনে হয়েছে আহা রে! এত দিন ধরে মোটামুটি ভাল অভিনয় করছে মেয়েটা... |
|
‘অবশেষে’ ছবিতে ‘দূরে কোথাও’ গানের দৃশ্যে |
পত্রিকা: তার মানে সান্ত্বনা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বলতে চান? কিন্তু অভিনয়টা ভাল করলেন তো কী! পেলেন তো গানের জন্য পুরস্কার...
রূপা: (থেমে) কী জানি? হয়তো সান্ত্বনা। তবে যদি একটু পজিটিভলি ভাবি তা হলে মনে হচ্ছে অ্যাওয়ার্ডটা পুরোটা আমার না। ‘অবশেষে’ ছবিতে ওই সিকোয়েন্সটা যে ভাবে এসেছে তার শট টেকিং, এডিটিং, সিনেমাটোগ্রফি— আর খালি গলায় ‘দূরে কোথাও দূরে দূরে...’ গানটা পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে যে ভাবে ফুটিয়ে তুলছে আমার চরিত্রটার লড়াইয়ের যন্ত্রণা— সব মিলিয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। তাই হয়তো...
পত্রিকা: তার মানে পুরস্কারটা একেবারে ভুল দেওয়া হয়নি...
রূপা: (খুব হেসে) গানটা যে সময় গেয়েছিলাম সেই সময় বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলাম জীবন থেকে। ব্যক্তিগতভাবে বিপর্যস্ত। প্রোফেশনালি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। কলকাতায় ফিরতে চাইলে মনে হচ্ছিল কলকাতা-টালিগঞ্জ হয়তো আমায় চায় না। তখন অদিতি (রায়, ‘অবশেষে’র পরিচালক) আর নীল (মিত্র, ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার) দিনের পর দিন আমার পাশে দাঁড়িয়ে সাহস জুগিয়েছে। ঝগড়া করে, জোর করে গান করিয়েছে আমায় দিয়ে। আর করিয়েছেন আমার গানের দিদি কবিতাদি (বন্দ্যোপাধ্যায়)।
পত্রিকা: তখন তো একটা হিন্দি মেগা সিরিয়ালের শু্যট করছেন পাগলের মতো। রেওয়াজের সময় বের করতেন কী করে?
রূপা: রেওয়াজ? একটা একটা করে লাইন আমাকে দিয়ে অভ্যাস করাতেন কবিতাদি। একটার বেশি শব্দ গাইতে পারতাম না। কেঁদে ফেলতাম। অপমানে। হতাশায়। কবিতাদির ধৈর্য, পরিশ্রম, ভালবাসা, স্নেহের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। ছবির সঙ্গীত পরিচালক প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়ও খুব যত্ন করে গানটা গাইয়েছেন আমায় দিয়ে।
নীল-অদিতি শুধু বলত, তুমি না বললেও আমরা জানি এটা তোমার জীবনের গল্প। এই চরিত্রে তুমি ভাঙাচোরা গলায় গাইলেও চলবে। আমরা কোনও প্লে-ব্যাক সিংগারের রোল দিইনি তোমায়। যে তোমার সেই গলা থাকতে হবে।
পত্রিকা: অভিনয়টাও তো চুটিয়ে করেছেন ‘অবশেষে’তে। গানের সঙ্গে যদি অভিনয়ের পুরস্কারটাও আসত...মনে হয়নি একবারও?
রূপা: এ সব আর মনেই হয় না আমার। আর এ বছর বিদ্যা (বালন) ছাড়া অন্য কোনও নারী চরিত্রের অভিনেতার সেরা হওয়ার প্রশ্নই ছিল না। তবে খুব আশা করেছিলাম যে বুম্বা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) ‘২২শে শ্রাবণ’-এর জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কারটা পাবে।
পত্রিকা: আপনার কথা বলুন। এত ছবি করছেন....জাতীয় পুরস্কারের আশা করেন না?
রূপা: মনে মনে কখনও আশা করিনি তা নয়। তবে সে সব দিবাস্বপ্নের পাট চুকিয়ে দিয়েছি।
পত্রিকা: কবে থেকে?
রূপা: ‘অন্তরমহল’-এ যখন কোনও পুরস্কার আসেনি তখন বুঝলাম অভিনয়টা শিখতে এখনও বাকি আছে নিশ্চয়ই। ঋতুপর্ণ (ঘোষ) খুব খেটেছিল চরিত্রটা নিয়ে। তবে (হাসতে হাসতে) টিটোদা (দীপঙ্কর দে) আমার কেরিয়ারের প্রায় গোড়ার দিকে হাত দেখে বলেছিলেন তোমার কপালে জাতীয় পুরস্কার আছে। সেটা যে গান গেয়ে পাব ভাবতে পারিনি। কপালের জোর? কী বলেন?
|
‘অবশেষে’ ছবিতে ওই
গানের অন্য দৃশ্যে |
পত্রিকা: শুভেচ্ছা পেলেন অনেক নিশ্চয়ই? রূপা: প্রথম কয়েক দিন ফোন হ্যাং করে করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল মেসেজ আর কলের চাপে। অনেকের ফোনই ধরতে পারিনি। অনেক মেসেজের উত্তর দেওয়া হয়নি। সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানানোর ছিল। হয়নি।
পত্রিকা: আশা করেননি এমন কারও কাছ থেকে শুভেচ্ছা এল? রূপা: আশা তো কারও কাছ থেকে কিছু করি না আর। যে ফোন করল না সে আমায় মনে মনে শুভেচ্ছা জানায়নি, আর যে ফোন করল সে-ই খুব ভালবেসে মন থেকে বলল এমন ভেবে নেওয়ার মানে আছে কোনও? কী জ্বালা! উফ্!
পত্রিকা: শেষ প্রশ্ন। গানটা এ বার সিরিয়াসলি গাইবেন তো? প্লে-ব্যাক ইত্যাদি?
রূপা: ধুৎ! প্লে-ব্যাক কি ছেলেখেলা না কি? প্রাইমারিলি আমি একজন অভিনেত্রী! আর যে ধরনের জীবন আমাদের তাতে না আছে নিয়ম, না আছে সময়...এই তো রিঙ্গোর ছবির শুটিংয়ে আট-ন’ ডিগ্রি ঠান্ডায় সকাল থেকে রাত অবধি কাদা জলে শু্যট করেছি। এত ঠান্ডা যে শরীর অবশ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। প্রত্যেকটা শটের পরে এক ঢোঁক করে ব্র্যান্ডি খাচ্ছি আর শট দিচ্ছি। রাতে বাড়ি ফিরে গরম জলের ট্যাপটা খুলে তার তলায় বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মাথার তালুতে ছ্যাঁকা খেয়ে সম্বিৎ ফেরে... এই তো হচ্ছে আমাদের জীবন। তার পর দিনে ৫০টা ফোন। এর পরেও গান গাওয়ার গলা থাকে?
পত্রিকা: কিন্তু মন চাইলে? রূপা: মনটাই তো আমার সম্বল...
রূপা: শেষে আমি একটা প্রশ্ন করি আপনাকে? প্লিজ... পত্রিকা: করুন।
রূপা: আপনি তো আমার গানটা শুনেছেন। কী মনে হয়েছে, আমি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য? পত্রিকা: আমি তো জাতীয় পুরস্কারের জুরি নই...
রূপা: হুম। তাহলে দর্শক-শ্রোতাই বিচারটা করুন... |
|
|
|
|
|