|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা
|
শুধুই ঝুপড়ি |
প্রদীপের নীচে |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় |
ফুটপাথ দখল হয়ে গিয়েছে। দখল হয়েছে সরকারি জায়গা। দখল হয়েছে ফাঁকা জমি। কোথাও চার দিক ঢাকা দিয়ে তৈরি হয়েছে শৌচাগার। কোথাও বা ত্রিপল খাটিয়ে বসবাসের ঘর। কোথাও আবার ঝুপড়িবাসীদের জন্য সরকারি জায়গার উপরেই তৈরি হয়েছে রিকশাস্ট্যান্ড। সামগ্রিক ভাবে বিধাননগরের অনেক জায়গাতেই এই চিত্র। ব্যবস্থা নিয়েও যার কোনও স্থায়ী সুরাহা এ পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি প্রশাসন।
কেষ্টপুর খাল কিংবা ইস্টার্ন ড্রেনেজ খাল তো বটেই, বিধাননগরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্তমানে ব্রডওয়ের আশপাশের এলাকাও ক্রমেই ভরে যাচ্ছে ঝুপড়িতে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি ছাড়াও এই সব ঝুপড়ি ঘিরে মদ-জুয়ার আসর বসার অভিযোগও তুলছেন এলাকার মানুষ।
১৬ নম্বর ট্যাঙ্কের কাছে এমনই একটি ঝুপড়ি তৈরি হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার ধারের ফুটপাথ এবং সার্ভিস রোড বরাবর ত্রিপল কিংবা দরমা দিয়ে বানানো ছোট ছোট ঘর। রাস্তার ওপরেই চারপাশ ঘিরে তৈরি করা হয়েছে শৌচাগার। অনেকে আবার রাস্তাতেই প্রাকৃতিক কাজকর্ম সারছেন।
বিধাননগরকে সাজিয়ে তুলতে বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে। রাতের বিধাননগরে কলকাতার মতোই বসানো হয়েছে ‘ত্রিশূল’ আলো। অথচ, বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিধাননগরের ভিতরের অপরিষ্কার ছবিটা বদলাতে এ পর্যন্ত তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ দেখাতে পারেনি প্রশাসন।
|
|
অতীতে বেশ কয়েক বার ঝুপড়ি উচ্ছেদ হয়েছিল। ইই ব্লকের কাছে ইস্টার্ন ড্রেনেজ খালের লাগোয়া নগরোন্নয়ন দফতরের জমিতে ঝুপড়ি উচ্ছেদ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছিল পুলিশ। সে বার ঝুপড়ি উচ্ছেদের পরে খালপাড় কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। কিন্তু তার কিছু দিনের মধ্যেই খালের ঠিক উল্টো দিকে ফের গজিয়ে উঠতে থাকে ঝুপড়ি। যা বর্তমানে আরও বড় আকার নিয়েছে। শুধু বসবাসই নয়, ঝুপড়িকে কেন্দ্র করে চা-সিগারেটের দোকানও গজিয়ে উঠেছে সেখানে।
রায়দিঘির বাসিন্দা রিকশাচালক বাবলু মাকালের কথায়: “আগে একটি বাড়িতে কাজ করতাম। সেই বাড়ির গ্যারাজে পরিবার নিয়ে থাকতাম। সে বাড়ি বিক্রি হয়ে যাওয়ার পরে এখন ঝুপড়িতেই আশ্রয় নিয়েছি। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।” বাবলুর মতো বহু ঝুপড়িবাসীই রয়েছেন, যাঁরা সল্টলেকের বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারকের কাজ করে থাকেন। ফলে, এক বার কোথাও ঝুপড়ি ভেঙে দিলে ফের অন্য কোথাও ঝুপড়ি তৈরি হয়ে যায়। কেষ্টপুর খালের ধারেই বিরাট একটি ঝুপড়ি রয়েছে, যেটি আবার একেবারে বিধাননগর (পূর্ব) থানার লাগোয়া।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঝুপড়িবাসীরা নিজেরা ঝুপড়ি তৈরি করে সেখানেই আবার থাকার জন্য নিজেদের আত্মীয়-পরিচিতদের নিয়ে আসেন। নবাগতরাও আবার পরবর্তী ক্ষেত্রে রিকশা চালানো কিংবা পরিচারকের কাজ যোগাড় করে নিয়ে ফের নিজস্ব ঝুপড়ি তৈরি করে থাকতে শুরু করেন। ফলে ঝুপড়ির সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
|
|
যদিও তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে নতুন করে কোনও ঝুপড়ি তৈরি হয়নি বলেই দাবি পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর। ফলে আপাতত ঝুপড়ি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোনও আশার কথা শোনাতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, “আমরা যেমন শহর সাজাচ্ছি, তেমনই চেষ্টা করছি সেই সৌন্দর্যায়ন বজায় রাখতে। তবে নতুন করে কোনও ঝুপড়ি তৈরি হয়নি। যেগুলি পুরনো ছিল সেগুলিই আছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।”
দিন কয়েক আগেই পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম উন্নয়ন ভবনে বলেছিলেন, পুনর্বাসন ছাড়া কোথাও কোনও উচ্ছেদ অভিযান হবে না। এমনকী, মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে রাজ্যের উদ্বাস্তু, ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরও একই কথা বলেছিলেন।
জবরদখল ভাঙার ক্ষেত্রে শক্ত হতে না পারায় এক সময় পুনর্বাসনের দাবি উঠেছিল দত্তাবাদ থেকে। ইস্টার্ন বাইপাসের উপর দত্তাবাদ তৈরি হয়েছে সরকারি জমি জবরদখল করেই। সেই সমস্যার জেরে বিধাননগরের মুখ কার্যত ঢেকে গিয়েছে। সেই পুনর্বাসন সমস্যার দাবিতেই দত্তাবাদে আটকে রয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। যেখানে সরকারি খরচে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কাজ শুরু করতে পারছে না বর্তমান সরকার।
ফলে বিধাননগরের বিভিন্ন রাস্তা বা খালপাড়গুলিতে ভবিষ্যতে আরও দত্তাবাদ তৈরি হবে কি না তা-ই নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন বাসিন্দারাই। |
|
|
|
|
|