ট্রফির এত কাছে এসেও কত দূরে থেকে গেল বাংলাদেশ! মাত্র দু’রানে এশিয়া কাপ ফাইনাল হারার দুঃখটা নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের তাড়া করবে। জেতার এত কাছে এসে হারাটা যে ওরা মেনে নিতে পারেনি সেটা বেশির ভাগ ক্রিকেটারের কান্না দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। আগের ম্যাচগুলোয় ভারত আর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বড় রান তাড়া করে জেতার পর এই হারটা মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন। তবে ওরা অসাধারণ লড়েছে। ফাইনালে ওদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ, এ রকম বড় ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা ওদের নেই। ঘরের মাঠে দর্শকদের প্রত্যাশার প্রচণ্ড চাপ নিয়ে খেলতেও অভ্যস্ত নয় সাকিবরা।
এশিয়ার বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যে ভাবে লড়েছে, সেটা ভবিষ্যতে ওদের সাহায্য করবে। এই টুর্নামেন্ট থেকে অনেক ইতিবাচক জিনিস পেল বাংলাদেশ। গোটা টুর্নামেন্টেই দুর্দান্ত খেলেছে ওরা। ভারত আর শ্রীলঙ্কাকে হারানো তো আছেই, পাকিস্তানকেও প্রায় হারিয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশ। মীরপুরের উইকেটে মিসবাদের ২৩৬ রানে আটকে রেখে সেই লক্ষ্য তাড়া করা খুব কঠিন হত না। কিন্তু অন্য ম্যাচগুলোর তুলনায় ফাইনালে অত তাড়াতাড়ি রান উঠছিল না। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও এক-এক সময় এত সতর্ক হয়ে যাচ্ছিল যে রান তোলার গতি খুব কমে গিয়েছিল। ফাইনালই হোক বা লিগ ম্যাচ, স্বাভাবিক ভাবে খেলা খুব দরকার। অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়া বা বেশি সতর্ক হয়ে খেলা, দুটোর কোনওটারই দরকার নেই। এটা করতে পারলে চাপ তৈরি হবে না। |
ফাইনালে বাংলাদেশের নায়ক অবশ্যই সাকিব। দুর্দান্ত বল তো করলই, যতক্ষণ সাকিব ক্রিজে ছিল ততক্ষণ মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের জেতার ভাল সুযোগ আছে। ওর উইকেটটাই ম্যাচে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিল। সাকিব আর কিছুক্ষণ ক্রিজে থাকলে রানের গতি আটকে যেত না। তরুণ নাসিমকেও ও পরামর্শ দিতে পারত। আমি মনেপ্রাণে আশা করব, এই টুর্নামেন্ট থেকে ইতিবাচক দিকগুলো নিতে পারবে বাংলাদেশ। আশা করব এই টুর্নামেন্টটাই ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশের আরও এগিয়ে যাওয়ার ভিত গড়ে দেবে।
পাকিস্তান ট্রফি জেতায় ভারত নিশ্চয়ই খুব একটা খুশি হয়নি। কারণ গ্রুপ ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩৩০ তাড়া করেও খুব ভাল জয় পেয়েছিল ধোনিরা। এই নিয়ে দু’বার এ রকম হল। অস্ট্রেলিয়াতেও মরণবাঁচন পরিস্থিতিতে ৪০ ওভারের মধ্যে ৩২০ রান তাড়া করে জিতেছিল ভারত। দুটো ম্যাচেরই তরুণ নায়ক বিরাট কোহলি। যে ক্রিকেটবিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। সবার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, ওকে শান্তিতে খেলতে দিন। দেশের জন্য খেলা এমনিতেই খুব বড় একটা চাপ। তার উপর সিনিয়রদের সঙ্গে তুলনা করে কোহলিকে আরও চাপে ফেলবেন না প্লিজ। আগামী বছরে ওকে নিজের মতো পরিণত হতে দিন, যাতে বহু দিন ভারতীয় ক্রিকেটের সেবা করে যেতে পারে কোহলি। ‘গ্রেট’ সচিন তেন্ডুলকর আবার এমন একটা রেকর্ড গড়ল যেটা ভাঙা প্রায় অসম্ভব। আমি চাইবও না কেউ ওর রেকর্ডটা ভাঙুক। এই বয়সেও খেলার প্রতি সচিনের খিদেটা অসাধারণ। লোকজনকে বুঝতে হবে, কবে অবসর নেবে সেই সিদ্ধান্তটা সচিনের উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত। টুর্নামেন্টে ভারতের বোলিং নিয়ে নিশ্চয়ই চিন্তাভাবনা করছে ধোনি। এই টুর্নামেন্টে ভারতীয় বোলারদের নখ-দাঁতহীন দেখিয়েছে।
এশিয়া কাপ শ্রীলঙ্কার জন্য খুবই খারাপ গেল। এই টুর্নামেন্টে ওরা এ বার একটাও ম্যাচ জিততে পারেনি। ট্রফি জেতার জন্য পাকিস্তানকে অভিবাদন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজটা ওদের জন্য একেবারেই ভাল যায়নি। তারপর এশিয়া কাপের গ্রুপ ম্যাচে ভারতের কাছে হেরেছিল আফ্রিদিরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওরাই জিতল। পাকিস্তান দলে কয়েক জন উঠতি তরুণ ক্রিকেটার রয়েছে। আমার বিশ্বাস, এশিয়া কাপের সাফল্য ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। এই ক্রিকেটারদের মধ্য থেকেই ভবিষ্যতে লড়াকু একটা দল গড়ে তুলবে পাকিস্তান। |