হনুর তাণ্ডবে হাতে লাঠি, হাজিরা কম স্কুলেও
নুমানের গুন্ডামিতে তটস্থ খণ্ডঘোষ।
গত পাঁচ দিনে অন্তত ১২ জন হনুমানের আক্রমণে জখম হয়েছেন। ভয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না বহু গ্রামবাসীই। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে চারটি স্কুলের পঠনপাঠন শিকেয় ওঠার জোগাড়। পুরুষেরা লাঠি নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন গ্রাম। মহিলারা কলে জল আনতে গেলেও লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে গ্রামের যুবকদের।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ইতিমধ্যেই হনুমানের হামলায় জখম অন্তত পাঁচ জনকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করাতে হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বা বনবিভাগকে জানিয়েও বিশেষ সুরাহা হয়নি। জেলার সহকারী বনাধিকারিক প্রশান্তকুমার রায় অবশ্য বলেন, “গত ১৯ মার্চ আমরা একটি হনুমানকে ধরে এনেছিলাম। পরে বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে কাঁকরডাঙা জঙ্গলে সেটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরে আর ওখানে হনুমানের আক্রমণের খবর পাইনি।”
বদমেজাজি হনুমান
শুক্রবার দুপুরেও কিন্তু গ্রামের রাস্তায় লাঠি হাতে যুবকদের ঘুরতে দেখা গিয়েছে। হনুমান দেখলেই তাঁরা তাড়া করছেন। ওই দলেরই প্রদীপ মণ্ডল ও মুজিবর রহমানের অভিযোগ, “বনকর্মীরা একটি ছোট খাঁচা নিয়ে হনুমান ধরতে এসেছিলেন। একটাকে তাঁরা ধরতে পারলেও বাকিদের ধরা যায়নি। অথচ গ্রামে হনুমানের উপদ্রব এতটুকু কমেনি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ১৮ মার্চ থেকে উৎপাত প্রবল আকার নিয়েছে। গ্রামবাসী প্রভঞ্জন সেনের কথায়, “এক দল হনুমান পাঠানপাড়া, বোসপাড়া, পালিতপাড়ার জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়েছে। পথচলতি মানুষের উপরে হামলা চালাচ্ছে। পালের গোদা তিনটি বীর হনুমান। তাদের আক্রমণে আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।” স্থানীয় বাসিন্দা অসিত পালের দাবি, “গ্রামের চারটি স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের পাঠাতে ভরসা পাচ্ছেন না অনেকে। পড়াশোনা মাথায় উঠেছে।”
অল্প পড়ুয়া নিয়েই ক্লাস চলছে
বিন্দুবাসিনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
ছাদে কাপড় মেলতে গিয়ে
কামড় খেয়েছেন পুষ্প কর্মকার।
খণ্ডঘোষ হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রিয়গোপাল সরকার বলেন, “হনুমানের অত্যাচারে স্কুলের ১৩০০ ছাত্রের মধ্যে অর্ধেকই আসছে না। এখন উপস্থিতি সামান্য বাড়লেও, আগে খুবই কম ছাত্র আসছিল।” বিন্দুবাসিনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া নাতনিকে স্কুলে পৌঁছে দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার হনুমানের খপ্পরে পড়েন গুরুপদ মজুমদার। তাঁর ডান দিকের উরুর মাংস কামড়ে তুলে নিয়েছে হনুমান। স্কুলের সামনেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন দাদু। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে তুলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। এখনও তিনি চলচ্ছক্তিহীন হয়ে বাড়িতে পড়ে রয়েছেন।
একই অভিজ্ঞতা হয়েছে ওই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রের বাবা অখিল ঘোষেরও। তাঁর কথায়, “মঙ্গলবার আমায় হঠাৎ পিছন থেকে আক্রমণ করে একটি হনুমান। প্রথমে ডান হাতে কামড় বসায়। ছেলেকে বাঁচাতে বাঁ হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলে সে হাতেও কামড়ে দেয়।” বাড়িতে থেকেও রক্ষে নেই! ছাদে কাপড় মেলতে যাওয়া প্রবীণা পুষ্প কর্মকারের বাঁ হাতে কামড়ে অনেকটা মাংস তুলে নেয় হনুমান।
ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে জখম
হয়েছেন অখিল ঘোষ
হামলার ভয়ে লাঠি
হাতেই হাঁটাচলা।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়ে হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে তিনি এখন বাড়িতে শুয়ে রয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হাতের মাংস জুড়তে গেলে ‘প্লাস্টিক সার্জারি’ করাতে হবে।
সহকারী বনাধিকারিকের বক্তব্য, “ওই গ্রামে চারটি হনুমান মানুষকে আক্রমণ করছে বলে খবর এসেছিল। সম্ভবত দলপতি নির্বাচন নিয়ে ওদের মধ্যে লড়াই হয়েছে। প্রতিটি পুরুষের মেজাজ তুঙ্গে। সেই সঙ্গে খাবারের অভাবও রয়েছে। আমরা গ্রামের লোকেদের বলেছি, ধৈর্য ধরুন। হনুমানের দলকে তাড়া করতে থাকলে কিন্তু বিপদ বাড়তে পারে।”

শুক্রবার খণ্ডঘোষে ছবিগুলি তুলেছেন উদিত সিংহ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.