দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে যেখানে ব্যাটারিচালিত পরিবেশ-বান্ধব গাড়ি চালানো হয়, সেই বটানিক্যাল গার্ডেনে রাস্তা সারাতে উনুন তৈরি করে আগুন জ্বেলে ড্রামের পর ড্রাম পিচ গলানো হচ্ছে গত কয়েক দিন ধরে। কালো দুর্গন্ধযুক্ত ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে চারপাশ। পিচের আগুন লাফিয়ে উঠছে পাঁচ-ছ’ফুট পর্যন্ত। ঝলসে যাচ্ছে মূল্যবান সব গাছপালা। অভিযোগ, এই ঘটনা নিয়ে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের প্রতিবাদে কান দেননি কর্তৃপক্ষ। উপরন্তু, ওই কাজ স্বাভাবিক বলেই দাবি তাঁদের।
বটানিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে বাগানের ভিতরে ভূগর্ভস্থ কেব্ল লাইন পাল্টানোর জন্য সেখানকার কিউরেটর অফিস থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা খোঁড়েন সিইএসসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই রাস্তা না সারিয়ে ওই ভাবেই ফেলে রাখা হয়। সম্প্রতি সিইএসসি-র কাছ থেকে টাকা পেয়ে রাস্তা সারাইয়ের কাজে হাত দেয় কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর। এ জন্য কিউরেটর অফিসের সামনে মোরাম রাস্তার পাশে ড্রামে করে পিচ আনা হয়। ঘাসের উপরে ইট পেতে তৈরি হয় উনুন। তা জ্বালিয়ে পিচ গলানোর কাজ শুরু হয়। প্রাতভ্রর্মণকারীদের অভিযোগ, গত চার দিন ধরে এই কাজ চলছে। সকাল থেকেই পিচ গলানো শুরু হয়। চলে সারা দিন ধরে। দুগর্ন্ধযুক্ত কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গাছপালা, রাস্তাঘাট। প্রাতর্ভ্রমণকারীদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। |
আগুন জ্বেলে পিচ গলানো হচ্ছে বটানিক্যালের ভিতরে। শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী |
বটানিক্যাল গার্ডেনের ‘ডেলি ওয়াকার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর কার্যকরী সভাপতি সমরজিৎ মণ্ডল বলেন, “গার্ডেন কর্তৃপক্ষের এই অপরিণামদর্শী কাজ দেখে আমরা অবাক হয়ে গিয়েছি। যেখানে আগুন জ্বলছে, তার পাশেই আছে চারটি মেহগনি গাছ-সহ আরও মূল্যবান সব গাছ। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কান দেননি।” পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের মতে, যে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হওয়া উচিত পরিবেশ-বান্ধব। ওই ঐতিহাসিক উদ্যানে এ ভাবে আগুন জ্বালিয়ে পিচ গলিয়ে রাস্তা করার প্রাচীন পদ্ধতি ব্যবহার না-করে হট-মিক্সিং প্ল্যান্টের মাধ্যমে বাইরে থেকে পিচ গলিয়ে রাস্তা করাই উচিত ছিল। রাজ্য পরিবেশ দফতরেরও সেই রকম নির্দেশ রয়েছে। সুভাষবাবু বলেন, “এ ভাবে কাজ করার অনুমতি দিয়ে কর্তৃপক্ষ শুধু অবিবেচকের কাজই করেননি। এই ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, ওই উদ্যান সংরক্ষণের মানসিকতা ও যোগ্যতা কর্তৃপক্ষের নেই। আমি গোটা ঘটনাটি আদালতকে জানাব।”
প্রাতভ্রর্মণকারীরা বা সুভাষবাবু যা-ই বলুন না কেন, গার্ডেনের রাস্তা সারাতে আগুন জ্বেলে পিচ গলানোর মধ্যে অনুমতি না দেওয়ার কোনও কারণ খুঁজে পাননি বটানিক্যালের যুগ্ম-অধিকর্তা হিমাদ্রিশেখর দেবনাথ। তিনি বলেন, “রাস্তা সারাতে গেলে আগুন জ্বেলে পিচ গলাতেই হবে। এতে অনুমতি না দেওয়ার কী আছে? আমিই তো অনুমতি দিয়েছি।” |