রাতের কলকাতায় ট্যাক্সিতে চড়তে গেলে এ বার থেকে দিতে হতে পারে অতিরিক্ত টাকা। ঠিক যেমন দিল্লি-মুম্বই, এমনকী বিদেশেরও বহু শহরে হয়ে থাকে। ঠিক ক’টার পরে কত টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে, তা নিয়ে বৈঠক চলছে মহাকরণে। মহাকরণ সূত্রে খবর, ১ এপ্রিল থেকে নতুন এই ব্যবস্থা চালু হতে পারে। আশা করা হচ্ছে, এই ব্যবস্থা চালু হলে রাতে ট্যাক্সি-প্রত্যাখ্যানের সংখ্যাও কমবে। রাজ্যের পরিবহণ সচিব বি পি গোপালিকা বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।”
১ এপ্রিল থেকেই কলকাতা বিমানবন্দর, হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনের প্রি-পেড ট্যাক্সি কাউন্টার সামলাবে রাজ্য পুলিশ। বিমানবন্দরে এত দিন বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন ওই কাউন্টার থেকে যাত্রীদের ট্যাক্সির স্লিপ কেটে দিত। হাওড়া ও শিয়ালদহে কাউন্টার সামলাত সিটু-সমর্থিত ট্যাক্সি ইউনিয়ন। প্রি-পেড থেকে রাতে ট্যাক্সি পাওয়া নিয়ে বিস্তর সমস্যায় পড়তে হয় যাত্রীদের। নতুন ব্যবস্থায় রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে এই তিন জায়গা থেকে ট্যাক্সি নিতে গেলে ‘নাইট-অ্যালাওয়েন্স’ বা অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে। সরকারি কর্তাদের কথায়, “বিমানবন্দর বা দুই স্টেশন থেকে রাতের ট্যাক্সির জন্য অতিরিক্ত টাকা চালু করলে শহরের অন্যত্র কেন করা হবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তাই একসঙ্গে সর্বত্র এই ব্যবস্থা চালুর কথা ভাবা হচ্ছে।” যদিও এখন শহরের রাস্তায় সন্ধ্যার পরেই হামেশাই ট্যাক্সিচালকেরা অতিরিক্ত টাকা চান বলে অভিযোগ। ট্যাক্সি নিয়ে বিমানযাত্রীদের বিস্তর অভিযোগ। বিমানবন্দরের ভিতরে স্লিপ কেটে দিলেও পছন্দ মতো গন্তব্য ছাড়া চালক যেতে চান না। ফলে, লটবহর নিয়ে বাইরে এসে আবার নতুন করে স্লিপ কাটার জন্য বিমানবন্দরের বিল্ডিং-এ ছুটতে হয় যাত্রীদের। অনেক সময়ে স্লিপে যে ট্যাক্সির নম্বর লিখে দেওয়া হয়, বাইরে এসে দেখা যায় সেই ট্যাক্সিই নেই। অনেক সময়েই সন্ধ্যার পরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিল্ডিং-এর সামনে থেকে কার্যত উধাও হয়ে যায় ট্যাক্সি। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের দাবি, সম্প্রতি সেই সমস্যা অনেকটাই কমেছে।
এই সমস্যা মেটাতেই এপ্রিল থেকে পুলিশের হাতে বিমানবন্দরের ট্যাক্সি-ব্যবস্থা দেওয়া হবে। ট্যাক্সিচালকদের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, রাতে দূরে গিয়ে যাত্রীরা ট্যাক্সি ছাড়লে সেখানে যাত্রী মেলে না। বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিমল গুহ বলেন, “আমরা দীর্ঘ দিন ধরে রাতে অতিরিক্ত ভাড়ার দাবি জানিয়েছি। ফেব্রুয়ারিতে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র জানান, তাঁরা এ নিয়ে ভাবছেন।” বিমানবন্দর থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত বাস যাতায়াত করে। তবে, তা শুধু নির্দিষ্ট রুটেই। ফলে, রাতের দিকে ট্যাক্সির চাহিদা এতটুকু কমেনি। বিমানবন্দর এলাকা এখন বিধাননগর কমিশনারেটের আওতাধীন। কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, “আলোচনা হয়েছে। কিন্তু, এখনও সরকারি নির্দেশ আসেনি। তবে, মার্চের শেষে ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের চুক্তি শেষ হচ্ছে।” প্রাথমিক আলোচনায় ঠিক হয়েছে, বাইরে থেকে লোক নিয়োগ করে পুলিশ বিমানবন্দরের ভিতরে প্রি-পেড ট্যাক্সি কাউন্টার সামলাবে। কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মার কথায়, “কয়েক মাসের মধ্যে বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল বিল্ডিং চালু হয়ে যাবে। ফলে, এখন থেকেই ট্যাক্সি নিয়ে সুষ্ঠু একটি ব্যবস্থা চালু করার দরকার ছিল। ঠিক হয়েছে, প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ আরও কিছু টাকা দেবে। ক্রেডিট কার্ড মেশিনের মতো প্রয়োজনে ‘পোর্টেবল’ ট্যাক্সি-স্লিপ মেশিন কেনার কথাও ভাবা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে যাত্রীদের বেশিক্ষণ লাইনে দাঁড়াতেও হবে না। |