আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও।
আমরি-কাণ্ডের পরে সল্টলেকের সব হাসপাতালে অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা শুরু করেছিল বিধাননগর পুরসভা। অগ্নি-নিরাপত্তার স্বার্থে জারি করেছিল নানা বিধি-নিষেধও। অথচ, পুরভবনেই এ পর্যন্ত তৈরি হয়নি উপযুক্ত অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা। এমনই অভিযোগ সেখানকার কর্মীদের। মান্ধাতার আমলে বসানো কিছু অসম্পূর্ণ যন্ত্রপাতি রাখা আছে মাত্র। যা ব্যবহারের অযোগ্য। পর্যাপ্ত অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র পর্যন্ত নেই সেখানে। ‘জতুগৃহ’ নয় ঠিকই, তবে আগুনের সঙ্গে প্রাথমিক লড়াইয়ের পরিকাঠামোও নেই পুরভবনে।
গত বুধবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে উইন্ডো এসি থেকে আগুন লাগে। বিধাননগর পুরভবনে বিভিন্ন তলায় ৫২টি উইন্ডো এসি রয়েছে। সাততলা বাড়িটিতে পাঁচতলা পর্যন্ত বিধাননগর পুরসভা-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের প্রায় ৪৪টি অফিস রয়েছে। দফতরগুলিতে প্লাইউড দিয়ে কিউবিক্ল করা। পুর-কর্তৃপক্ষের বসার ঘর-সহ বিভিন্ন আধিকারিকদের ঘরেই রয়েছে দাহ্য বস্তু। এক-দু’টি সরকারি অফিস পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ভিতরে ফল্স সিলিং দিয়ে সাজানো। কিন্তু শুধু স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের হস্টেলে কয়েকটি মাত্র অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। এ দিকে, পুরভবনের একতলায় রয়েছে ট্রান্সফর্মারের ঘর। প্লাইউড দিয়ে তৈরি দু-তিনটে ঘরও আছে। কোনওটি রিক্রিয়েশন ক্লাবের, কোনওটি গাড়িচালকদের। চলে ক্যান্টিনও। |
অগ্নি-নির্বাপক রাখা অগ্নিবিধির ন্যূনতম শর্ত। তা-ও নেই এই পুরভবনে। কিছু কর্মী জানান, ভবনটি তৈরি হওয়ার পরে কিছু অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র বসানো শুরু হয়। অসম্পূর্ণ অবস্থায় সেগুলিও পড়ে আছে জরুরি পরিস্থিতিতে নামার জন্য তৈরি সিঁড়ির উপর।
এ দিকে, সল্টলেকের বহুতল বাড়িগুলিতে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র বসাতে নির্দেশ দিয়েছে পুরসভা। সম্প্রতি সল্টলেকের বাজারগুলিতে যে সব হোটেল রয়েছে, সেগুলিতে আগুন জ্বেলে রান্নাও নিষিদ্ধ হয়েছে। পুরভবনে প্রতিদিন সহস্রাধিক মানুষ আসেন নানা কাজে। সল্টলেকের ২২ হাজার বাড়ির নকশার পাশাপাশি নানা গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রয়েছে সেখানে। তবু পুরভবনে অগ্নি-সুরক্ষা কেন আঁটোসাঁটো করা হবে না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।
উল্লেখ্য, সল্টলেকে কোনও কেন্দ্রীয় জলাধার নেই। ফলে বিভিন্ন সরকারি অফিসবাড়িতে আগুনের মতো দুর্ঘটনার সঙ্গে লড়ার জন্য কিছু না কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। বিকাশ ভবন, জলসম্পদ ভবন, ময়ূখ ভবন, সেচ ভবনের মতো সব জায়গাতেই বসানো আছে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র। যেগুলি নির্ধারিত সময় অন্তর ‘রি-ফিল’ করা হয়। ব্যতিক্রম শুধু পুরভবনই। তৈরি হওয়ার পর থেকেই বিধাননগর পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। তখনই মনোহরদাস কাটরা, নন্দরাম মার্কেট, স্টিফেন কোর্টের মতো অগ্নিকাণ্ড হয়। তা সত্ত্বেও পুরভবনকে সুরক্ষিত রাখার যথাযথ ব্যবস্থা হয়নি। সিপিএমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান পারিষদ নন্দগোপাল ভট্টাচার্যের দাবি, “আমরা পুরভবনে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র বসাই। দমকলের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছিল। ওদের কিছু নির্দেশিকা কার্যকর করা হচ্ছিল। তবে পরের দিকে ওরাও আর কিছু বলেনি। ভোট এসে যাওয়ায় আর কাজেরও সুযোগ ছিল না।”
এত দিন পরে নড়েচড়ে বসছে পুরসভা। বিধাননগরের মহকুমাশাসক তথা পুরসভার এগ্জিকিউটিভ অফিসার মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “অগ্নি-নির্বাপক বসানো হবে। এটা দমকলের পরিকল্পনা মতো বসাতে হয়। আমরা ইচ্ছেমতো লাগাতে পারি না।” বিধাননগরের পুর-চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরভবনে অগ্নি-সুরক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে। এ জন্য এক সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে।” |