যখন তখন মাথার উপরে চাঙড় খসে পড়তে পারে। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে পারে বিম। যে কোনও মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে এ ভাবেই চলছে মন্তেশ্বরের রায়গ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলের দুর্দশার ছবি-সহ একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়ে শুক্রবার বিকেলেই স্কুল সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচির আশ্বাস, সংস্কার নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। বিষয়টি সর্বশিক্ষা মিশনে জানানো হচ্ছে।
১৯৬৯ সালে এই স্কুলটি তৈরি হয়। রায়গ্রাম ছাড়াও বরুণা, কুরুনিয়া, তৈয়বপুর, মিরগাহাটের মতো বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামের পড়ুয়াদের ভরসা এই স্কুল। বর্তমানে পঠন-পাঠন চলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ১৬৪৮। এর মধ্যে ১৬৮ জন এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। |
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, তৈরির পর থেকে ধাপে ধাপে নতুন শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য টাকা পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সে ভাবে পুরনো ভবনের রক্ষণাবেক্ষণে অর্থ মেলেনি। বছর পাঁচেক আগে এক বার ৪০ হাজার টাকা পাওয়া গেলেও দু’টি ঘরের ছাদ মেরামত করতেই সে টাকা শেষ। এই অবস্থায় স্কুলের বারান্দা ও সাতটি ঘরের দুর্দশা চরমে উঠেছে। যখন তখন মাথার উপরে খসে পড়ছে সিমেন্টের চাঁই। বিশেষ করে নবম ও দশম শ্রেণির কক্ষগুলি যে বিমের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে গুলি জরাজীর্ণ। ফলে ক্লাসরুম সংলগ্ন বারান্দাটিও ভেঙে পড়তে পারে। সংস্কারের অভাবে গোটা স্কুল ভবন এখন এক দিকে হেলে পড়েছে।
এই দশায় আতঙ্কিত ছাত্রছাত্রীরা। নবনীতা চন্দ্র, সাজিনা খাতুন, আলমগীর মল্লিক প্রত্যেকেরই এক কথা, “স্কুলে ঢুকতেই বুক দুরদুর শুরু হয়ে যায়। ক্লাস চলাকালীন শুধু মনে হয়, এই বুঝি চাঁই খসে পড়ল।” স্কুলের এই দুর্দশায় চিন্তিত অভিভাবকেরাও। তাঁদেরই এক জন বাবর আলি শেখ বলেন, “স্কুলে একটা সুস্থ পরিকাঠামো নেই! এমন স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে কি নিশ্চিন্ত থাকা যায়?”
স্কুল কমিটির দাবি, সংস্কারের জন্য অন্তত দশ লক্ষ টাকা দরকার। বছর দু’য়েক ধরে এর জন্য বিভিন্ন সরকারি দফতরে ঘুরেও কোনও লাভ হয়নি। এমনকী লাভ হয়নি সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরে যোগাযোগ করেও। কারণ, স্কুলটি মাদ্রাসা স্কুল বোর্ডের অনুমোদিত নয়। এই অবস্থায় চিন্তিত প্রধান শিক্ষক বর্ষণ রায় বলেন, “সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি, এই বুঝি একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। স্কুলের অন্য শিক্ষকেরাও বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত।” |