মাকড়সার জালের মতো বিদ্যুৎ ও জেনারেটরের তার। কোথাও ভরা বাজারের মধ্যে হোটেলে গ্যাস জ্বেলে চলছে রান্নাবান্না, বড় উনুনে তৈরি হচ্ছে সন্দেশ-রসগোল্লা। কোথাও আবার বাজারের পাশেই চলছে নার্সিংহোম।
কাটোয়া শহরের নানা বাজার এলাকায় ঘুরলে চোখে পড়ে এমনই সব দৃশ্য। কোনও বাজারেই মানা হয় না অগ্নি নির্বাপণ বিধি। কাটোয়ার দমকল বিভাগের ওসি দিলীপকুমার দাস জানান, শহরের বাজারগুলির জতুগৃহ হয়ে রয়েছে। কোনও বাজারেই দমকলের ন্যূনতম বিধি মানা হয় না।
কাটোয়া শহরে রয়েছে বেশ কয়েকটি বাজার। কিন্তু কোনওটিতেই নিরাপত্তার বালাই নেই। অন্তত আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনও পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেনি। শহরের নিচু বাজার এলাকা যথেষ্ট ঘিঞ্জি। রাস্তা এতটাই সংকীর্ণ যে আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি ঢোকার কোনও জায়গা নেই। অনেকটা একই পরিস্থিতি শহরের বড়বাজার, দীনবন্ধু বাজারেও। কলকাতার হাতিবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে নিজেদের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বিগ্ন শহেরর নানা প্রান্তের ব্যবসায়ীরা। |
কাটোয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে পুরবাজারের ব্যবসায়ী দীনবন্ধু দে বলেন, “এই বাজারে প্রায় দেড়শো ব্যবসায়ী রয়েছেন। আগুন লাগলে কী অবস্থা হবে জানি না।” একই কথা বলেন মাধবীতলা স্টেশম রোড সংলগ্ন একটি বাজার কমিটির সম্পাদক অপু সাহা। তাঁর কথায়, “পুরো বাজারটাই জতুগৃহ হয়ে রয়েছে। কী ভাবে পরিস্থিতি পাল্টানো যায়, আমাদের জানা নেই।” এই বাজারের অন্যতম অংশীদার দীপেন সাহা জানান, প্রায় ষাট বছরের পুরনো এই বাজারে ১০৮টি দোকান রয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের তো অগ্নি নির্বাপক বা প্রয়োজনীয় জলের ব্যবস্থা করার কথা কেউ জানায়নি।” শতবর্ষ প্রাচীন বড়বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই ব্যবসায়ীদেরই। এই বাজারের ব্যবসায়ী আলম দাস, কিশোর শেখরা বলেন, “পুরো বাজারই দাহ্যবস্তুতে ভর্তি। এক বার আগুন লাগলে পুড়ে ছাই হতে বেশিক্ষণ সময় লাগবে না।” সার্কাস ময়দানে আবার সরকারি আবাসনের পাশেই গজিয়ে উঠেছে ছোট ছোট দোকান। তার সামনে রয়েছে একটি নার্সিংহোমও।
আগুন মোকাবিলায় জলাধার তো দূর, কোনও জায়গায় অগ্নি নির্বাপকও নেই। কাটোয়ায় দমকলের অবস্থাও তথৈবচ। তাদের কাছে একটি মাত্র গাড়ি রয়েছে, যাতে মাত্র সাড়ে ন’শো গ্যালন জল ধরে। জলাধার থেকে সরাসরি জল সরবরাহের জন্য পাম্প লাগানো আর একটি ছোট গাড়ি রয়েছে। হাইড্রলিক সিঁড়ি লাগানো ইঞ্জিনও নেই দমকলের কাছে। গত দু’দশক ধরে এমন পরিস্থিতিতেই কাটোয়া শহর ও সংলগ্ন এলাকায় পরিষেবা দিয়ে আসছে দমকল। |
নিচু বাজারের সংকীর্ণ রাস্তা। |
দমকল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কাটোয়ায় তাদের অন্তত ৬৩ জন কর্মী থাকা প্রয়োজন। তার জায়গায় রয়েছেন মাত্র ৩৭ জন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, “দু’জায়গায় এক সঙ্গে আগুন লাগলে আমরা যে কোনও এক জায়গায় যেতে পারব।” তিনি জানান, কিছু দিন আগে দাঁইহাট ও কেতুগ্রামের শিলুড়িতে একই ভরা জনবসতি এলাকায় আগুন লেগেছিল। ঠিক সময়ে দাঁইহাটে যেতে পারলেও কেতুগ্রামে পৌঁছনো যায়নি। ভাতার থেকে দমকলের গাড়ি যাওয়ার আগেই শিলুড়িতে ১৫টি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
বাজারগুলিতে অগ্নি নির্বাপণ বিধি মানার ক্ষেত্রে পুরসভা কঠোর হচ্ছে না কেন? কাটোয়া পুরসভার কাউন্সিলর তথা স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরবাজারগুলিতে অগ্নিসুরক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি বাজারগুলিকেও দমকলের নিয়মনীতি মানার জন্য নোটিস দেওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, পুরনো বাজারগুলিতে মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যা থাকায় জটিলতা দেখা দিচ্ছে।
|
ছবি দু’টি তুলেছেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় |