পিষে মৃত দুই |
লেন ভেঙে মুখোমুখি ধাক্কা দুই ট্যাঙ্কারে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
জাতীয় সড়কে দু’টি ট্যাঙ্কারের মুখোমুখি সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে বেঘোরে প্রাণ গেল মোটরবাইকে থাকা দু’জনের। মারা গিয়েছেন একটি ট্যাঙ্কারের চালকও।
শুক্রবার দুপুরে দুর্গাপুরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে এবিএল মোড়ে কস্টিক সোডা ও ডিজেলবাহী দু’টি ট্যাঙ্কারের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। মোড়ের মাথায় একটি মোটরবাইকে ছিলেন নডিহার রঞ্জিত বিশ্বাস (৪৫) ও বিধাননগর পূর্বাঞ্চলের সোমালীনা চট্টোপাধ্যায় (২৪)। ডিজেল ট্যাঙ্কার উল্টে পড়লে তাঁরা পিষে যান। তাঁদের সঙ্গেই ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ডিজেল ট্যাঙ্কার চালক ভগবান দাসেরও (৪০)। তাঁর বাড়ি বিহারে। অপর ট্যাঙ্কারের চালক ও খালাসি গুরুতর জখম অবস্থায় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশ তাঁদের পরিচয় জানার চেষ্টা করছে। |
ঘটনাস্থলে সোমালীনার জুতো। |
রাস্তায় পড়া ডিজেলে বালি ছড়াচ্ছে পুলিশ। |
|
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল আসানসোলের দিকে যাচ্ছিল ডিজেল ট্যাঙ্কারটি। হঠাৎই উল্টো দিক থেকে আসা কস্টিক সোডার ট্যাঙ্কার লেন ভেঙে সেটির মুখোমুখি চলে আসে। ধাক্কায় ডিজেল ট্যাঙ্কার উল্টে মোটরবাইকের উপরে পড়ে। যান চলাচল থমকে যায়। উল্টে যাওয়া ট্যাঙ্কার থেকে রাস্তায় ডিজেল ছড়িয়ে পড়ায় অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্কে ভুগতে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিশ ও দমকল গিয়ে জায়গাটি ঘিরে দিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনে। তবে জাতীয় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক প্রায় তিন ঘণ্টা হতে গড়িয়ে যায়।
ঘটনাচক্রে, এ দিনই সোমালীনার বাবা স্বাধীনরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের বাৎসরিক ক্রিয়াকর্ম ছিল। তিন বছর আগে ক্যানসারে ভুগে মারা যান দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএল) জেনারেল ম্যানেজার স্বাধীনবাবু। কিছু দিন আগে ডিপিএল আবাসন ছেড়ে দুই মেয়েকে নিয়ে বিধাননগরের সমবায় আবাসনে উঠে এসেছিলেন সোমালীনার মা সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। বিধাননগরেরই একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা তিনি। দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে তাঁর ছোট মেয়ে সৌমি। কলেজ সাঙ্গ হওয়ার পরে সোমালীনা কম্পিউটার কোর্স করেছিলেন। কর্মরত অবস্থায় বাবার মৃত্যু হওয়ায় ডিপিএলে চাকরি হওয়ার কথা ছিল তাঁর। আজ, শনিবার ছিল ইন্টারভিউ। সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র আনতেই পরিবারের দীর্ঘদিনের পরিচিত রঞ্জিতবাবুর মোটরবাইকে চড়ে তিনি ডিপিএলে যাচ্ছিলেন। |
রঞ্জিতবাবুর মোটরবাইক। |
উল্টে যাওয়া ট্যাঙ্কার। |
|
বিকেলে বিধানগরের পূর্বাঞ্চল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারদিক থমথমে। দুপুরে বড় মেয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়েই ভেঙে পড়েছিলেন সুস্মিতাদেবী। ঘর থেকে আর বেরোননি। কারও সঙ্গে দেখাও করেননি। সমবায় আবাসন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন মজুমদার বলেন, “এমন মর্মান্তিক ঘটনার কথা স্বপ্নেও ভাবা যায় না। বিশ্বাসই হচ্ছে না, পাড়ার সকলের আদরের মৌমি আর নেই।” কস্টিক সোডার ট্যাঙ্কার কেন লেন ভেঙে ডান দিকে ঢুকে পড়েছিল, তা কিন্তু রাত পর্যন্ত পরিষ্কার হয়নি। দুর্ঘটনার পরে অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনা এড়াতে পুলিশ ডিজেলে ভেজা রাস্তায় প্রচুর বালি ছড়ায়। ক্রেন এনে রাস্তার পাশে সরিয়ে দেওয়া হয় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া দু’টি ইঞ্জিন ও ট্যাঙ্কার। আসানসোল-দুর্গাপুরের এসিপি (ট্রাফিক) শিবপ্রসাদ পাত্র বলেন, “ওই মোড়ে নজরদারির জন্য সিভিক পুলিশ ছিল। কিন্তু কস্টিক সোডার ট্যাঙ্কারটি হঠাৎ লেন ভেঙে দ্রুতগতিতে পাশের লেনে ঢুকে যাওয়ায় কেউ কিছু করার সময় পায়নি। ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আরও কড়া হবে।”
|
ছবি: বিশ্বনাথ মশান |
|