ডাক বিভাগের গাফিলতিতে এক বেকার যুবক ইন্টারভিউ দিতে না পারায় মালদহের প্রধান ডাকঘরের সুপারিনটেনডেন্ট , রতুয়া ও কামালপুরের পোস্টমাস্টারকে দোষী সাব্যস্ত করে ৮৩ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মালদহ ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। একমাসের মধ্যে অভিযুক্তদের ক্ষতিপূরণের টাকা ওই বেকার যুবককে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক অর্জুন প্রসাদ গুপ্তা ও কৃষ্ণ প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ওই রায় শোনার পরই জেলা ডাকঘরের আধিকারিকেরা নড়েচড়ে বসেছেন। মালদহ প্রধান ডাকঘরের সুপারিনটেনডেন্ট অমিত লাহিড়ি বলেন, “এখনও ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ের কপি পাইনি। পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, রতুয়া থানা এলাকার কামালপুর গ্রামের শক্তি প্রামাণিক ২০১০ সালে ৮ জানুয়ারি “মাল্টি টাস্কিং স্টাফ” পদে কলকাতায় মুখ্য অ্যাকাউটেন্ট জেনারেলের কাছে আবেদন করেছিলেন। সংশ্লিস্ট দফতর ২০১১ সালে ৩১ মার্চ কলকাতায় ইন্টারভিউতে হাজির হওয়ার জন্য শক্তিবাবুর নামে স্পিড পোস্টে চিঠি পাঠান। সেই চিঠি কলকাতা থেকে ২৮ মার্চ রতুয়ার কামালপুর পোস্ট অফিসে পৌঁছে যায়। অভিযোগ, ‘ইন্টারভিউ লেটার’ পৌঁছনোর পরেও কামালপুর ডাকঘরের পোস্টমাস্টার তা বিলি না করে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন। একাধিকবার ডাকঘরে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার পরেও পোস্টমাস্টার যুধিষ্ঠির কমর্কার ইন্টারভিউ লেটারটি শক্তি প্রামানিককে দেননি। ইন্টারভিউর তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার পর ১২ এপ্রিল কামালপুর পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার শক্তিবাবুকে ইন্টারভিউ লেটারটি দেন। শক্তিবাবু বলেন, “সময়মতো ইন্টারভিউ লেটারটি পেলে আমার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। অথচ কামালপুরের পোস্টমাস্টার ইন্টারভিউ লেটারটি লুকিয়ে রাখায় ইন্টারভিভতে যেতেই পারলাম না।” তার পরে ২০১১ সালের ২৯ এপ্রিল জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ওই কামালপুর পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার, রতুয়া পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার ও মালদহ প্রধান ডাকঘরের সুপারিনটেনডেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেন শক্তিবাবু। প্রায় ১১ মাস মামলা চলার পরে সোমবার জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ওই রায় দেয়। এই ব্যাপারে কামালপুরের পোস্টমাস্টার যুধিষ্ঠির কমর্কার বলেন, “চিঠিটি আসার আগে শক্তি প্রামাণিক আমার কাছে এসে বলেছিল, আমার একটা চিঠি আসবে। ওই চিঠি আমাকে ছাড়া কাউকে দেবেন না। তাই চিঠিটি আসার পরে পোস্ট অফিসে রেখে দিয়েছিলাম। ১২ মার্চ শক্তি প্রামাণিক আমার কাছে পৌঁছলে তখন তাঁকে ওই চিঠিটি দিই। জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক অর্জুন প্রসাদ গুপ্তা বলেন, “মালদহ প্রধান ডাকঘর থেকে ২০১১ সালের ২৮ মার্চ শক্তি প্রামাণিকের ইন্টারভিউ লেটারটি রতুয়া পোস্ট অফিসে পাঠায়। সেদিনই রতুয়া থেকে কামালপুর পোস্ট অফিসে পৌঁছে যায়। ওই দিন অথবা পরের দিন যদি ওই ইন্টারভিউ লেটার পোস্ট অফিস থেকে পৌঁছনো হত বেকার যুবকটি ইন্টারভিউতে হাজির হতে পারত। সেই তথ্য প্রমাণ হাতে আসার পরই বুঝতে পারি ডাকঘরের গাফিলতিতেই এক বেকার যুবক চাকরি ইন্টারভিউ দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত । এর পরেই অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে ৮৩ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |