|
|
|
|
মত সূর্যকান্তের |
রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় গ্রেফতার লক্ষ্মণ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিতেই প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ-সহ সিপিএম নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। সেইসঙ্গে জানিয়ে দিলেন, লক্ষ্মণবাবু, অমিয় সাহু এবং অশোক গুড়িয়াকে সব রকম আইনি সাহায্য দেওয়া হবে।
দলে লক্ষ্মণবাবুর সঙ্গে সূযর্বাবুর ‘সম্পর্ক’ যাই হোক, রাজনৈতিক বাধ্যবাধতার কারণে ঠিক যে ভাবে কঙ্কাল-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষের পাশে তাঁকে দাঁড়াতে হয়েছিল, সে ভাবেই লক্ষ্মণবাবুর পাশেও দাঁড়াতে হল। মঙ্গলবার বিধানসভার মিডিয়া-সেন্টারে সূর্যকান্তবাবু বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। তদন্তের প্রেক্ষিতে বিচার যা হওয়ার হবে। সকলকে তা মেনেও নিতে হবে। কিন্তু ১০ মাস ধরে সরকার বাম নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।” সূর্যবাবুর অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, দলতন্ত্র নয়। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু সর্বস্তরে দলতন্ত্রই প্রতিষ্ঠা হচ্ছে।” |
|
লক্ষ্মণ শেঠের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভে মহিলারা।
মঙ্গলবার হলদিয়া আদালত চত্বরের বাইরে আরিফ ইকবাল খানের তোলা ছবি। |
তাঁর ‘ভাবমূর্তি’র কারণেই লক্ষ্মণবাবুকে সম্প্রতি রাজ্য কমিটি থেকে বাদ দিয়েছে সিপিএম। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলকে ধরে রাখতে সেই লক্ষ্মণবাবুকেই সব রকম আইনি সাহায্য দেওয়ার কথা বলতে হচ্ছে। নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে সম্প্রতি যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটিতে তাঁরাই এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেই কারণেই আলিমুদ্দিনকে লক্ষ্মণবাবুর পাশে দাঁড়াতে হচ্ছে বলে দলের একাংশ মনে করে। আলিমুদ্দিনের নির্দেশেই এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করেন সূর্যবাবু। সিপিএমের একাংশের মতে অবশ্য এই প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার একটি ‘রাজনৈতিক’ ঘটনায় তাদের কোনও বড় মাপের নেতাকে গ্রেফতার করল। দলের এই অংশ সুশান্তবাবুর সঙ্গে লক্ষ্মণবাবুর ঘটনা এক করে দেখতে রাজি নন। এই অংশের মতে, নন্দীগ্রামে ‘অপারেশন সূর্যোদয়ে’ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ আলিমুদ্দিনের সায় ছিল। কারণ, তা ছিল ‘রাজনৈতিক’ কর্মসূচি। দলের ঘরছাড়া সমর্থকদের ঘরে ফেরানোর জন্য। লক্ষ্মণবাবু মূলত সেই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ায় বুদ্ধবাবু-সূর্যবাবুদের তাঁকে দলের অন্দরেও ‘সমর্থন’ই করতে হবে। এই অংশের আরও বক্তব্য, বুদ্ধবাবু বা সূর্যবাবু লক্ষ্মণবাবুর দলকে ‘ব্যবহার’ করে এলাকায় সাম্রাজ্য বিস্তারের বিরোধী। কিন্তু সেটা কোনও ‘রাজনৈতিক’ কারণ নয়। তাই প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেও এই বিষয়ে লক্ষ্মণবাবুর পাশেই থাকবে দল। তবে দলেরই একাংশের মতে আবার, ‘সূর্যোদয়ে’র বিষয়ে দলের অনুমোদন থাকলেও তা নিয়ে বাড়াবাড়ি (লক্ষ্মণবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ: ওই ঘটনার সময় নিখোঁজ সাত তৃণমূল সমর্থককে খুন এবং অন্যান্য ষড়যন্ত্রের) করার ব্যাপারে কোনও ‘দলীয় অনুমোদন’ ছিল না।
ঘটনাচক্রে, রাজ্য কমিটির সদস্য তথা দলের বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই লক্ষ্মণ-প্রসঙ্গে কিছুটা ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন। প্রথম থেকেই রেজ্জাক নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে দলের ভূমিকার সমালোচক। এ দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেজ্জাক বলেন, “বামফ্রন্টের আমলে লক্ষ্মণ শেঠ গ্রেফতার হত না। বামফ্রন্ট নেই। তাই লক্ষ্মণ শেঠকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” যে ভাবে লক্ষ্মণবাবুর মতো ‘দাপুটে’ নেতা গত তিন মাস ধরে আত্মগোপন করেছিলেন, তা নিয়েও কটাক্ষ করে রেজ্জাক বলেন, “বিপ্লবের কারণে কোনও কমিউনিস্ট আত্মগোপন করতেই পারেন। কিন্তু ও তো বিপ্লবের কারণে আত্মগোপন করেনি। সারা বছর তুমি মুখ দেখালে। আর শেষে আত্মগোপন করলে। তা হলে ধরা তো পড়তেই হবে!” এ ভাবে একের পর এক সিপিএম নেতার গ্রেফতারিতে দলের ভাবমূর্তির কি ক্ষতি হচ্ছে না? রেজ্জাক বলেন, “দলের তো বারোটা বেজে গিয়েছে। এখন পুরুজ্জীবন হয় কিনা দেখার।” প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রামে জমি অধিগ্রহণ করে রসায়নিক শিল্পগুচ্ছ গড়ে তোলার বরাবরই বিরোধী ছিলেন রেজ্জাক। আর লক্ষ্মণ তাতে ‘অগ্রণী’ ভূমিকা নিয়েছিলেন। |
|
বাড়তি পুলিশও হিমসিম খেল বিক্ষোভ সামলাতে।
মঙ্গলবার হলদিয়া মহকুমা আদালতে আরিফ ইকবাল খানের তোলা ছবি। |
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সূর্যবাবুর আরও অভিযোগ, নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে লক্ষ্মণবাবু-সহ সিপিএম নেতাদের গ্রেফতার করা হলেও ২০০৭ সাল থেকে সিপিএম কর্মীদের খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সে ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি জানান, নন্দীগ্রাম-খেজুরিতে চার বছরে ৫৮ জন সিপিএম কর্মী খুন হয়েছেন। পাঁচজন নিখোঁজ। বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এক জন অভিযুক্ত সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেনি। খুনের মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূলের লোকদের পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না। অথচ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিতে লক্ষ্মণবাবুদের গ্রেফতার করা হয়েছে।”
বস্তুত, বিরোধী দলনেতার দাবি, বামফ্রন্টের আমলে ‘রাজনৈতিক কারণে’ কোনও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়নি। তাঁর কথায়, “বিধানসভায় ভাঙচুর বা বারাসতের একটি মামলায় বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে বাম আমলে গ্রেফতার করাই যেত। কিন্তু তা করা হয়নি। অথচ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এখন একের পর এক সিপিএম নেতাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে!” |
|
|
|
|
|